ফরিদপুরে থানা ও উপজেলা অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিহত ১  

বাংলাদেশ

ফরিদপর প্রতিনিধি
06 April, 2021, 11:05 am
Last modified: 06 April, 2021, 01:10 pm
হামলাকারীরা থানা ও উপজেলা পরিষদ ভবনে তাণ্ডব চালায়। এ সময় হামলাকারীরা উপজেলা পরিষদের ভেতর থেকে বস্তায় করে বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফরিদপুরের সালথায় লকডাউন চলাকালে ফুকরা বাজারে এসিল্যান্ডের এক সহকারীর লাঠিপেটা করাকে কেন্দ্র করে সালথা থানা ও উপজেলা পরিষদের সরকারী প্রায় সব অফিস ও বাসায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। হামলাকারীরা ইউএনও ও এসিল্যান্ডের গাড়ীসহ কয়েকটি মটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়। একই সাথে হামলাকারীরা উপজেলার ভিতর থেকে বস্তায় বস্তায় করে বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালালে রামকান্তপুর এলাকার জুবায়ের হোসেন (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হয় আরো তিন থেকে চারজন। তাদেরকে ঢাকা ও ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন আমির, মিরান ও মামুন। তবে ঠিক কতজন আহত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।   

এদিকে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাসিব সরকার গুজব রটিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী এই হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন। 

জানা যায়, সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ফুকরা বাজারে চা খেয়ে ওই ইউনিয়নের নটাখোলা গ্রামের মৃত মোসলেম মোল্যার ছেলে মো. জাকির হোসেন মোল্যা বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় সেখানে লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনে আসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামনি উপস্থিত হন। কথা না শোনায় তার সাথে থাকা এসিল্যান্ডের এক সহকারী লাঠিপেটা করে তাকে। জাকির হোসেনকে আহত করার খবরে সেখানে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আরও গ্রামবাসী জড়ো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেখানে সালথা থানার এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপস্থিত হয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপরেও হামলা চালায়। এতে এসআই মিজানুর রহমানের মাথা ফেটে যায়। পরে সেখান থেকে তারা চলে গেলে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ লোকজন গুজব রটিয়ে থানা ও উপজেলায় হামলা করে। হামলায় ইউএনও এর বাসভবন, হলরুমসহ থানায় হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ইউএনও এর দুটি গাড়ী ও বেশকটি মটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয় এসময়। 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে সরকারি নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে জনতার সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়। তর্কে-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয়রা। একপর্যায়ে গুজব রটিয়ে উপজেলা পরিষদ, থানা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনসহ বিভিন্ন অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় পুলিশ পর্যাপ্ত ফাকাঁ গুলি. কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ঘটনা নিয়ন্ত্রনে পাশের থানা ও জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।    

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হাসিব সরকার বলেন, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে সন্ধ্যা ৬টার পরে কোন দোকান পাট খোলা থাকবে না। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাজার তদারকিতে ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামনি। ফুকরা বাজারে গেলে সেখানে উত্তেজিত জনতা লকডাউন মানবে না বলে জানালে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে আসেন। পরে অফিসে ফিরে পুলিশকে জানালে পুলিশ গিয়ে তাদের নিবারনের চেষ্টা চালায়। তারা পুলিশের উপরও হামলা করে।

পরবর্তীতে বাজারে একটি গুজব ছড়ায় পুলিশ ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়া একজন হুজুরকে ধরে নিয়ে গেছে এবং তাকে মেরে ফেলেছে। এই গুজব ছড়িয়ে একটি ধমার্ন্ধ গোষ্ঠী সংঘবদ্ধ হয়ে এসে হামলা করে।  

তিনি বলেন, আমাদের উপজেলার প্রতিটি অফিসে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ম্যুরাল ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হামলা করে তারা। আমরা মনে করি স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠী এই হামলা করেছে গুজব রটিয়ে। আমরা চাই একটি সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.