পুরোপুরি চালু হলো রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বন্দর

বাংলাদেশ

পাবনা প্রতিনিধি
29 August, 2020, 04:20 pm
Last modified: 29 August, 2020, 04:24 pm
পরমাণু কেন্দ্রটি নির্মাণ ও এটি চালু করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং জ্বালানি তেল এই বন্দর দিয়ে নির্মাণ স্থানে পৌঁছাবে।

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নেওয়ার জন্য নিকটবর্তী পদ্মা নদীতে তৈরি করা বন্দর পুরোপুরি চালু হয়েছে।

পরমাণু কেন্দ্রটি নির্মাণ ও এটি চালু করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এবং জ্বালানি তেল এই বন্দর দিয়ে নির্মাণ স্থানে পৌঁছাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোসাটম।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের সহ-সভাপতি ও পরিচালক এস জি লাসতোচকিন জানিয়েছেন, চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে এই বন্দর দিয়েই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অংশ যেমন, ভিভিইআর-১২০০ (VVER-1200) চুল্লিপাত্র, চারটি স্টিম জেনারেটর ও বিভিন্ন ভারি যন্ত্রপাতি ওঠানো-নামানোর জন্য পোলার ক্রেন সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যন্ত্র-সরঞ্জামবাহী কার্গো সমুদ্রপথে সেন্ট পিটার্সবার্গ ও নভোরোসিয়েস্ক থেকে বাংলাদেশের মংলা বন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে জাহাজে করে নদী পথে পদ্মার ওই নৌবন্দরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে নেওয়া হবে পরমাণু কেন্দ্র র্নিমাণস্থলে।

রোসাটম জানিয়েছে, পদ্মা নদীর এ বন্দর তৈরিতে সময় লেগেছে দেড় বছর। এর আয়তন ১৫০ বাই ৩৫০ মিটার। বছরের বিভিন্ন মৌসুমে নদীতে পানির গভীরতায় ১০ মিটারের পার্থক্য ধরে বন্দরটি তৈরি করা হয়েছে।

এমনকি শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীতে সর্বোচ্চ পরিমাণে পানি নিচে নেমে গেলেও বন্দরঘাটে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন মিটার পানির গভীরতা থাকবে। এই গভীরতায় বছরের সব সময় সেখানে কাজ চলবে। বর্ষা মৌসুমে বন্দরে বড় আকারের জাহাজও ভেড়ানো যাবে।

বর্তমানে বন্দরটিতে দুটি ক্রেন রয়েছে, যেগুলো ৬৩ টন ধারণ ক্ষমতার। ৩০৮ টন ধারণ ক্ষমতার আরও দুটি ভারি ক্রেন এখানে যুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রাশিয়ার সহায়তায়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।

পারমাণবিক কেন্দ্রের নকশা, পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং পরিচালনা থেকে শুরু করে ইউরেনিয়াম মাইনিং, তারপর সেটাকে রূপান্তরিত করে আরও উন্নত করা, পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করা, ব্যবহৃত জ্বালানি রাখা ও পরিবহন করা, এবং সর্বোপরি নিরাপদ উপায়ে পারমাণবিক বর্জ্যের নিষ্পত্তির মতো কাজগুলো করছে রোসাটম।

দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।

১৯৬১ সালে পদ্মা নদীর তীরে, রূপপুরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা প্রকল্পের চেহারা নিতে অর্ধশতক পার হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ প্রকল্পে গতি আসে, চুক্তি হয় রাশিয়ার সঙ্গে।

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য দেশটির কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার একটি চুক্তি হয়। ওই বছরই অক্টোবরে রূপপুরে হয় ভিত্তিস্থাপন।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বেশ কয়েকটি 'মেগা প্রকল্পের' অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলেও রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ৩০ শতাংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

এ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে বিদেশি জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক মো. শৌকত আকবর জানিয়েছেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.