পিকে হালদার ও তার ৩৭ সহযোগীর বিরুদ্ধে আরও ১০ মামলা, ৪৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
10 March, 2021, 10:00 am
Last modified: 10 March, 2021, 10:08 am
অনুমোদন করা প্রতিটি মামলাতে পি কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।

কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পলাতক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মামলা অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন হাওলাদার জানিয়েছেন, শিগগিরই এসব মামলা হবে।

পিকে হালদারের জালিয়াতির ঘটনাটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি দল।

দুদক সচিব জানান, হালদারের ৩৭ সহযোগীকে এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে। পিকে হালদার আসামি হচ্ছেন সব মামলায়। এসব মামলায় আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

দুদক সচিব জানান, পিকে হালদারের ৩৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে শিগগিরই সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করা হবে। এ ছাড়াও ৪৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।

যে দশটি মামলা হচ্ছে সে বিষয় সম্পর্কে দুদক সচিব বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই না করে ও কোনো মর্টগেজ ছাড়া ১০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ঋণের নামে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। পরে এসব অর্থ বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি এবং ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তর করা হয়। 

কোলাসিন লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের নামে ১৭৪ কোটি, উইনটেলের নামে ৬৮.৫০ কোটি , ওকায়ামা লিমিটেডের নামে ৮৭.৬০ কোটি, আর্থস্কোপ লিমিটেডের নামে ৯৮.৯১ কোটি, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের নামে ৬০ কোটি, আরবি এন্টারপ্রাইজের নামে ৫৫ কোটি, ইমেক্সোর নামে ৫৮ কোটি, দ্রিনান এ্যাপারলেসের নামে ৬০ কোটি টাকা এবং কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ৬০ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের অভিযোগে এসব মামলা হচ্ছে। 

অনুমোদন করা প্রতিটি মামলাতে পি কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি আবেদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যসহ পি কে হালদারের অন্যান্য সহযোগীকে আসামি করা হচ্ছে।

আরও যাদের আসামি করা হচ্ছে তারা হলেন- দৃনান অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর মালিক ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের এমডি উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনারের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেড চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জি ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জি, রিচালক এম নূরুল আলম, পরিচালক নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, নুরুজ্জামান, মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও জহিরুল আলমসহ মোট ৩৭ জন।

এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ৫ প্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিনশ কোটি টাকা জালিয়াতি করে আত্মসাতের ঘটনায় পিকে হালদার ও তার ৩১ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
ওইসব মামলায় পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও আইএলএফএসএল এর সাবেক এমডি রাশেদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুদক আরেকটি মামলা করে। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পিকে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারি, ঘনিষ্ট সহযোগী অনিন্দিতা বড়াল, কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেপ্তার করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।

দুদকের এই দলটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হালদারের একটি গোপন গুদাম থেকে প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ির কয়েকশ দলিল উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে যেসব সম্পদ শনাক্ত হয়েছে তাতে জমির পরিমাণ ৭০৮০ শতাংশ এবং বাজারমূল্য অন্তত এক হাজার কোটি টাকা। আদালতের মাধ্যমে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।

বিদেশে থাকা পিকে হালদার গত বছরের ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তার দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।

আদালত তাতে অনুমতি দিলেও পিকে হালদার না ফেরায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত আগেই পি কে হালদারের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও আদেশ দিয়েছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.