পায়ে হেঁটে গ্রাম অভিমুখে ছুটছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা

বাংলাদেশ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি 
26 June, 2021, 02:10 pm
Last modified: 26 June, 2021, 02:19 pm

কঠোর লকডাউনের খবরে গ্রামমুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এলাকায়। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় বাড়ছে যাত্রীদের চাপ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং পাঁয়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছে যাত্রীরা। মহাসড়ক এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের একাধিক নিরাপত্তা চৌকি রয়েছে।

ঘাটমুখী যানবাহন ও যাত্রীদেরকে আগত পথেই ফেরত পাঠাচ্ছে পুলিশ। তবে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের নজর ফাঁকি দিয়ে পাঁয়ে হেঁটে এবং বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে কিছু যাত্রী।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং পাটুরিয়া-আরিচা নৌরুট হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের যাতায়াত। কঠোর লকডাউনের খবরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসব জেলার মানুষের পদচারণা বাড়ছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাট এলাকায়।

রাজধানী ছাড়াও গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ এলাকার কর্মমুখী মানুষের ভিড় রয়েছে মহাসড়ক ও ঘাট এলাকায়। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে এসব যাত্রী।  

শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বারবারিয়া, গোলড়া, জাগীর ব্রিজ এবং মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের চেকপোস্ট দেখা যায় সরেজমিনে। এছাড়াও পুরো মহাসড়ক এলাকা জুড়ে রয়েছে গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং বরংগাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের টহল কার্যক্রম।

জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বারবারিয়া এলাকায় আলাপ হলে মাগুরামুখী যাত্রী মফিজুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় একটি চায়ের দোকান করেন তিনি। স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মা মিলে মোট সাত সদস্য নিয়ে থাকতেন একটি ভাড়া বাড়িতে। এখন কঠোর লকডাউনের খবর পেয়ে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন তিনি। 

ফিরোজ মিয়া নামের এক হোটেল শ্রমিক বলেন, গাজীপুর কোনাবাড়ি এলাকার একটি হোটেলে খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন তিনি। লকডাউনের খবরে হোটেলের সকল শ্রমিককে বাড়ি যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বেতন পরিশোধ করেছেন হোটেল মালিক। সেজন্য গ্রামের বাড়ি যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই বলে মন্তব্য করেন ফিরোজ মিয়া। 

ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার দশম শ্রেণীর স্কুল শিক্ষার্থী স্বর্ণা বলেন, দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ। পরিবারে রয়েছে অভাব অনটন। পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ করে গার্মেন্টসে চাকুরীর জন্য সাভারে গিয়েছিলেন তিনি। গেল ১৫ দিন চেষ্টা করেও কোন পোশাক কারখানায় কাজ পাননি। 

এদিকে আবার কঠোর লকডাউন আসছে। পোশাক কারখানায় কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। লকডাউন কতদিন থাকবে তারও কোন খবর নেই। তাই বাধ্য হয়েই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেন স্বর্ণা।

মোখলেছুর রহমান নামে পাবনামুখী এক যুবক বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কঠোর লকডাউনের খবরে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা। তবে পথে পথে সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, পুলিশি নজর ফাঁকি দিয়ে মহাসড়ক এলাকায় যাত্রী বহন করছেন তিনি। নির্ধারিত কোন ভাড়াও নেই। পারিবারিক অভাবের কারণে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় রয়েছেন বলে তার মন্তব্য। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে। তারপরও নানা অজুহাতে পাঁয়ে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছেন অনেকেই।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পাটুরিয়া এবং আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রী পারাপার পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে গ্রামমুখী মানুষের চাপ কমবে। তাছাড়া গ্রামমুখী যাত্রীদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। 

গ্রামমুখী যাত্রীরা এখন যেমন করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে তেমনিভাবে মহাসড়ক ও বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ফেরিতে করে যাত্রী পারাপার বন্ধ করে দিলে এমন ভোগান্তির কোন সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তারা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান বলেন, জরুরী সেবা অব্যাহত রাখতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১২টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে তিনটি ফেরি চলাচল করছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী ঘরমুখো কিছু কিছু মানুষ এসব ফেরিতে করে নৌরুট পারাপার হচ্ছে বলে জানান তিনি।    
  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.