পাঁচ মেরিন একাডেমির শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছে একটিতে

বাংলাদেশ

সিফায়াত উল্লাহ, চট্টগ্রাম
18 March, 2020, 05:40 pm
Last modified: 18 March, 2020, 06:16 pm
১৮০ শিক্ষার্থীর স্থানে এখন ৩৮০ জনের পাঠদান চলছে। যাবতীয় প্রস্তুতি না নিয়েই চলতি শিক্ষাবর্ষে রংপুর, বরিশাল, সিলেট এবং পাবনা মেরিন একাডেমিতে ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। 

অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগসহ যাবতীয় প্রস্তুতি না নিয়েই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রংপুর, বরিশাল, সিলেট এবং পাবনা মেরিন একাডেমিতে ২০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এ সব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে সাময়িক উত্তোরণে চলতি মাসে পাঠদানের জন্য প্রত্যেক একাডেমি থেকে ৫০ জন করে ২০০ শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে আনা হয়েছে।

গত ১১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের ১৮০ জনসহ ৩৮০ শিক্ষার্থীর ক্লাস সেখানে শুরু হয়। ইতোমধ্যে অবকাঠামো ও জনবলের সক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুন বেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সীমিত সুবিধায় এত বিপুল শিক্ষার্থীকে পাঠদানের কারণে পড়াশোনার মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের কমান্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সাজিদ হোসেন বলেন, চার একাডেমির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনবল নিয়োগের কাজ শেষ না হওয়ায় তারা এখানে আছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আমাকে জানিয়েছে, তারা এক সেমিস্টার এখানে পড়বে; সেপ্টেম্বরে চলে যাবে।

চট্টগ্রামে মেরিন একাডেমিতে চার একাডেমির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পাঠদানের সক্ষমতা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক ছাড়া চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে কীভাবে পাঠদান করা হচ্ছে জানতে চাইলে মেরিন একাডেমি বরিশালের কমান্ডেন্ট (ভারপ্রাপ্ত) ক্যাপ্টেন এবিএম শামীম বলেন, শুধুমাত্র আমাদের একাডেমির শিক্ষার্থীদের জন্য ওখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম একাডেমির শিক্ষকরাও ক্লাস নিচ্ছেন। অন্য একাডেমির ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বরিশাল মেরিন একাডেমির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। অন্যান্য একাডেমির কাজও প্রায় শেষের পথে। জনবল নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শিগগিরই নিজেদের একাডেমিতে ফিরে যাবো আমরা।

বরিশাল মেরিন একাডেমির নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ভর্তি হয়েছি বরিশালে। পড়াশোনার কথা ছিলো এখানেই। হঠাৎ চট্টগ্রামে আসতে হয়েছে। এখানে অনেক গাদাগাাদি করে থাকতে হচ্ছে।

বরিশাল মেরিন একাডেমির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে আমাদের শিফট করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রশিক্ষণ উপকরণের অভাবে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি চট্টগ্রামের কমান্ড্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সাজিদ হোসেন কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজী হননি।

২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় নতুন এই চারটি মেরিন একাডেমি স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এরপর শুরু হয় অবকাঠামো তৈরির কাজ। যা এখনও শেষ হয়নি। হয়নি জনবল নিয়োগও। কিন্তু এর আগেই এসব একাডেমিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ সব একাডেমিতে দু'টি বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি কোর্স চালু হয়েছে।

এই সুযোগে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির চারজন সিনিয়র ইন্সট্রাক্টরকে ডেপুটি কমানডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সীমিত লোকবল দিয়ে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে শিক্ষার মাণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) মাণ অনুযায়ী প্রশিক্ষণ না হলে বাংলাদেশের নাবিক সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা ছড়াবে। ধস নামবে এই সেক্টরে। কমবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশি প্রায় ১০ হাজার নাবিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় হাজার বাংলাদেশি নাবিক দেশি-বিদেশি জাহাজে সবসময় কর্মরত থাকেন। প্রতিবছর এসব নাবিক প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। মাদকমুক্ত হওয়ায় বিশে^ বাংলাদেশি নাবিকদের চাহিদা বাড়ছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, চারটি মেরিন একামেডির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তারমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো ঠিক হয়নি। ভর্তি করিয়ে আবার চট্টগ্রামের একটি মেরিন একাডেমিতে এনে গাদাগাদি করে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা আইওএম স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার আগে অবকাঠামো তৈরি করা উচিত ছিল। তড়িঘড়ি করে এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াটা এই সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের মানুষ মেরিন সেক্টরে ঝুঁকেছেন, কারণ সেখানে আয় বেশি। কিন্তু এখানে আন্তর্জাতিক মাণ অনুযায়ী পাঠদানের নিয়ম রয়েছে।
চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় নারী ক্যাডেটরা

চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন মেরিন একাডেমি থেকে বের হওয়া নারী ক্যাডেটরা। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজে মাত্র ১৯ জন নারী ক্যাডেটের কাজের সুযোগ পেয়েছেন। ৪৮ তম ব্যাচ থেকে নারী ক্যাডেট ভর্তি শুরু হলেও ৫৫ তম ব্যাচ শেষে এ পর্যন্ত ৭৪ জন নারী ক্যাডেট বের হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে বিএসসি ছাড়া নারীদের কেউ চাকরি দেয় না। ফলে নতুন করে আবার প্রতি ব্যাচে নারী ক্যাডেট ভর্তি করানো হলেও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেখা দেবে অনিশ্চিয়তা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ক্যাডেট বলেন, বেসরকারি জাহাজ মালিকরা নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে আমাদের সুযোগ দেয় না। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগের বিষয়টি ভেবে নারী ক্যাডেট ভর্তি করানো উচিত।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, মেরিন সেক্টরে নারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত গড়ে উঠেনি। অনেক পাস করে চাকরি পাচ্ছেন না। এরপরেও নতুনভাবে ভর্তি করানো বাস্তবসম্মত নয়।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.