নেত্রকোনায় ৭ দিনেও মিলছে না করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট

বাংলাদেশ

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা
30 April, 2020, 01:45 pm
Last modified: 30 April, 2020, 04:13 pm
ল্যাবের পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন দুইবারে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনার পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু পাঁচ জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হয় এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ কারণে ল্যাবটিতে নমুনার জট সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৩ এপ্রিল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রামে গাজীপুর ফেরত এক নারীর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু সাতদিনেও তার পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট না আসায় দরিদ্র পরিবারটি কোয়ারেন্টিনে থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

শুধু ওই নারীই নন, নেত্রকোনার ১০ উপজেলা থেকে সংগৃহীত শত শত নমুনা পড়ে আছে ল্যাবে। কিন্তু পরীক্ষার অভাবে সাতদিনেও রিপোর্ট মিলছে না। এ অবস্থায় নেত্রকোনার করোনা রোগী শনাক্তকরণ ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা যেমন ব্যহত হচ্ছে তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আইসোলেশন প্রক্রিয়াও। সব মিলিয়ে বিরাজ করছে হ য ব র ল অবস্থা। 

জানা গেছে, নেত্রকোনার ১০ উপজেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অণুজীববিদ্যা বিভাগের ল্যাবে। নেত্রকোনা ছাড়াও সেখানে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এবং সুনামগঞ্জের আংশিক এলাকার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। 

ওই ল্যাবের পিসিআর মেশিনে প্রতিদিন দুইবারে সর্বোচ্চ ১৮৮টি নমুনার পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু পাঁচ জেলা থেকে প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা হয় এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ কারণে ল্যাবটিতে নমুনার জট সৃষ্টি হয়েছে।

নেত্রকোনার সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ উপজেলা থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ১৪৪ জন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার রাত পর্যন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে মাত্র ৪৯১টির। বাকি ৬৫৩টি নমুনা এখনও ল্যাবে জমা রয়েছে। 

অন্য জেলা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নেত্রকোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও ময়মনসিংহের ল্যাব কর্তৃপক্ষের অন্তত চারদিন সময় লাগবে। 

সূত্র জানায়, গত ২২ এপ্রিল থেকে নেত্রকোনার নমুনা পরীক্ষা প্রায় বন্ধ। এর পরবর্তী সাতদিনে জেলার একশটি নমুনার পরীক্ষাও করা হয়নি। অথচ প্রতিদিন জেলা থেকে শত শত নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে। 

সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম খান জেলার করোনা পরীক্ষা নিয়ে এমন অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেছেন, 'আমরা প্রতিদিনই সম্ভাব্য রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহের ল্যাবে পাঠাচ্ছি। কিন্তু ক্যাপাসিটির (সক্ষমতা) অভাবে ল্যাব কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নমুনা পরীক্ষা করতে পারছে না। এ কারণে রোগী সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যহত হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আহসানুল কবীর রিয়াদ বলেন, 'বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জেলায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।'

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত একজন চিকিৎসক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, 'আমাদের উচিত রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করা। কিন্তু নিয়মিত নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এতে চিকিৎসা যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি আইসোলেশনও ব্যাহত হচ্ছে। এটি একটি ভয়াবহ ব্যাপার।' 

জানা গেছে, নেত্রকোনায় এ পর্যন্ত ৩৫ জন রোগীর করোনা সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে।

 

  

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.