নিরাপত্তার ঝুঁকিতে খুলনাঞ্চলের বন্ধ থাকা ৯ পাটকল

বাংলাদেশ

খুলনা প্রতিনিধি
21 September, 2020, 01:20 pm
Last modified: 21 September, 2020, 01:24 pm
ক্রিসেন্ট ও জেজেআই জুট মিলের দুই লাখ ৭২ হাজার টাকার মালামাল চুরি

খুলনা অঞ্চলের বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিল ও জেজেআই জুট মিলের দুই লাখ ৭২ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়ে গেছে।

ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের নয়টিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২ জুলাই পাটকল বন্ধসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় শ্রমিকদের অবসায়নের প্রজ্ঞাপন প্রতিটি মিলের নোটিস বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়। খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হওয়া নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে পাঁচ হাজার ৮৩টি তাঁত রয়েছে। তাঁতগুলো প্রতিটিই ব্যবহার উপযোগী।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণার পর খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিলগুলোর নদী তীরবর্তী এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। মিলগুলোর নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক জায়গার কাটা তারের বেড়া উধাও হয়ে গেছে। এ সব জাগয়া দিয়ে অপরাধীরা সহজেই প্রবেশ করতে পারে।

এ ছাড়া মিলগুলো শ্রমিক শূন্য হয়ে পড়ায় নজরদারিও অনেকটা কমে গেছে। ফলে মিলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ২৩ আগস্ট ক্রিসেন্ট জুট মিলের এক লাখ ৭৯ হাজার টাকার মালামাল ও ৯ সেপ্টেম্বর যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রির (জেজেআই) ৯৩ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়। 

সূত্রমতে, খুলনাঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের মধ্যে আলিম জুট মিলে ২৫০টি, কার্পেটিং জুট মিলে ৮৬টি, ইস্টার্ন জুট মিলে ২৭৫টি, জেজেআই জুট মিলে ৪৬৬টি, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে ৯৫৭টি, স্টার জুট মিলে ৭৭০টি, খালিশপুর জুট মিলে ৯১টি, দৌলতপুর জুট মিলে ২৫০টি ও ক্রিসেন্ট জুট মিলে সর্বাধিক এক হাজার ১৩৮টি তাঁত রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।

এ ছাড়াও মিলগুলোতে শত শত কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রয়েছে। তবে, বন্ধের পর পাটকল এলাকার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা এবং পাটকলগুলোর নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ আনসার নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কার্পেটিং, জেজেআই, খালিশপুর, ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম ও স্টার জুট মিলে আনসাররা দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। 

বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনার নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বর্তমানে এক হাজার চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এরমধ্যে ৩৬৪জন কর্মকর্তা ও ৬৪০জন কর্মচারী। এ ছাড়া বন্ধঘোষিত পাটকলের নিরাপত্তার দায়িত্বে ৯৮জন আনসারসহ ৩৫১জন নিরাপত্তা রক্ষী রয়েছে।

পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, বন্ধ ঘোষণার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে জেজেআই জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের কয়েক লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এই সব চুরির সঙ্গে পেশাদার চোর ও মিলগুলোর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার যদি এখনই সতর্ক না হয় তাহলে অরক্ষিত পাটকলগুলোর বাকি মালামালও চুরি হয়ে যাবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক শ্রমিক মুরাদ হোসেন বলেন, ক্রিসেন্ট জুট মিলের নদী তীরবর্তী এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। অনেক জায়গার কাটা তারও চুরি হয়ে গেছে। মিলটির নিরাপত্তার জন্য ১২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী লাগে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন। যা দিয়ে কোনোভাবেই মিলটির নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না।

খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, পাটকলগুলোর শ্রমিকরা শুধু উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ছিল। মিলগুলো সচল থাকার সময়ও যেমন মিলের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের মূল দায়িত্ব ছিল কর্মকর্তাদের। এই বন্ধকালীন সময়েও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্ব অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, অতি দ্রুত খুলনাসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চালু হবে। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাটকলগুলোর রক্ষাবেক্ষণ ও তদারকি করা মিলগুলোর প্রকল্প প্রধান এবং মিলে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের রাষ্ট্রীয় এবং নৈতিক দায়িত্ব।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের  (কেএমপি) কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, মিলগুলোর নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে পাশে রয়েছে।

বিজেএমসির ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) গোলাম রব্বানী বলেন, বন্ধের পর পাটকলগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য ৯৮জন আনসার সদস্য ও বিজেএমসির ২৫৩ জনসহ ৩৯১জন নিরাপত্তারক্ষী পাটকলের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়াও পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাতে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছে।

তিনি জেজেআই ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের চুরির কথা স্বীকার বলে বলেন, দুটি জুট মিলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলের চোর ধরা পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.