নাঈমের বিচারক হওয়ার স্বপ্নের সমাধি হলো লক্ষ্মীপুরে

বাংলাদেশ

26 November, 2021, 02:45 pm
Last modified: 26 November, 2021, 02:49 pm
ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে জেএসসি এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে নাঈম উত্তীর্ণ হয়। এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়লেও আইন নিয়ে প্রবল আগ্রহের কারণে পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও নটরডেম কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয় নাঈম।

ঢাকার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত নটরডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানকে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে জেলার রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল এলাকায় জানাজা ও দাফন কাজে এলাকার হাজার মানুষ অংশ নেয়। 

বুধবার সিটি করপোরেশনের গাড়িচাপায় তার মৃত্যু হয়। নাঈমের পরিবার জানায়, তার মৃত্যুতে বিচারক হতে চাওয়া একজন স্বপ্নবাজের কবর রচিত হলো।

রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ শাহ আলম দেওয়ানের দুই ছেলের মধ্যে নাঈম হাসান ছিল ছোট। তার বড় ভাই মুনতাসির মামুন বাংলাদেশ ইউনিভার্সসিটি অব প্রফেশনালে অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে স্নাতক সম্মানে পড়ছেন।

পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জন্মের পর নানার বাড়ি ভাদুর ইউনিয়নের সমরেশপুর গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে নাঈম। পূর্ব কাজীরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং পরে ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে জেএসসি এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়।

শুক্রবার সকালে নাঈমের বড় মামা ও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারুক আহমেদ জানান, "আমাদের ইচ্ছা ছিল সে ভবিষ্যতে চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হবে। সেজন্য এসএসসিতে তাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্ত তার প্রবল ইচ্ছা ছিল সে ভবিষ্যতে একজন বিচারক কিংবা আইন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হবে। সে কারণে তার স্বপ্নকে প্রধান্য দিয়ে এসএসসি পাশের পর নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগে ভর্তি করা হয়।"

তিনি আরো জানান, "আইন নিয়ে নাঈমের আগ্রহ ছিল প্রচুর। কিন্তু একজন অদক্ষ চালকের গাড়িচাপায় বিচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া এক স্বপ্নবাজ তরুণের করুণ সমাপ্তি দেখল দেশবাসী।"

ছোট মামা রামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক ফয়েজ আহমেদ জানায়, তার দুলাভাই শাহ আলম দেওয়ান সেনাবাহিনী থেকে ২০০০ সালের দিকে অবসর নেওয়ার পরপরই ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় বই ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা ও দুই ছেলের পড়ালেখার জন্য তিনি কামরাঙ্গীরচরের জাওলাহাটি এলাকায় বসবাস করছেন। প্রতিদিন বাসায় থেকেই কলেজে আসাযাওয়া করত নাঈম। ঘটনার দিন সে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল।

নাঈমের বড় মামা প্রতিবেদককে বলেন, "অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন একজন গাড়ি চালক কীভাবে সিটি করপোরেশনে চাকরি করে?" এটাকে দুর্ঘটনা না বলে স্পষ্ট হত্যাকাণ্ড বলেও দাবি করেন তিনি। এ হত্যার জন্য চালকের শাস্তি দাবির পাশপাশি অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন লোককে সিটি করপোরেশনে চাকরি দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চান তারা। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে।

অন্যদিকে নাঈমের বাবা ছেলের স্মৃতি রক্ষার্থে ও নিরাপদ সড়কের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে নাঈম হাসানের নামে গুলিস্তানের ওই সড়কটির নামকরণ চান।

উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তান মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.