দেশে বাড়ছে বিদেশি ফলের উৎপাদন

বাংলাদেশ

02 January, 2021, 05:10 pm
Last modified: 02 January, 2021, 05:12 pm
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কমলার উৎপাদন হয়েছে ৪০৩১৭ টন। আর আমদানি হয়েছিল ২ লাখ টনের মতো। চলতি অর্থবছরে দেশি কমলার উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়বে বলে ডিএই জানিয়েছে।

রামপুরায় ভ্যানগাড়িতে কমলা ও মাল্টা বিক্রি করছিলেন আব্দুস সাত্তার। এক ক্রেতা কমলার দাম জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, দেশিটার দাম কেজিতে একশ টাকা। আমদানি করাটা নিলে একশ দশ। 

দেশি কমলা দেখিয়ে আব্দুস সাত্তার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানালেন, কমলা দেশি না বিদেশি, এই প্রশ্ন তাকে সারাদিনই শুনতে হচ্ছে।

অথচ দেড় দশক আগে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। তখন কমলা দেশি, কি বিদেশি এই প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। কারণ দেশের বাজারের প্রায় পুরোটাই ছিল আমদানি করা কমলার দখলে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কমলার উৎপাদন হয়েছে ৪০৩১৭ টন। আর আমদানি হয়েছিল ২ লাখ টনের মতো। চলতি অর্থবছরে দেশি কমলার উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়বে বলে ডিএই জানিয়েছে।

দেশে কমলার উৎপাদন আমদানির পাঁচ ভাগের এক ভাগ হলেও ভোক্তারা কমলাকে এখন অনেকটা দেশি ফল হিসেবেই বিবেচনা করতে শুরু করেছেন।

কমলার চেয়ে দেশে আরো দ্রুত ঘটছে মাল্টার প্রসার। মোট উৎপাদনে এখনো কমলার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও চাষ বৃদ্ধির হারে মাল্টা এগিয়ে। ক্রেতারা বাজারে গিয়ে এখন কমলার মতোই দেশি মাল্টার খোঁজ করেন।

ডিএই-এর হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক মো. কবির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সারাদেশেই এখন কমলার উৎপাদন হচ্ছে। বাড়ছে মাল্টার বাগানও।

২০১৯-২০ অর্থবছরে মাল্টা আমদানি হয়েছে ৪৮ টন। আর দেশে উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ৪১ টন। চলতি অর্থবছর মাল্টার উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী ডিইএ। কমলার চেয়ে মাল্টার চাষ তুলনামূলকভাবে সহজ। কমলার মতো মাল্টার জাতও আনা হয়েছিল চীন থেকে।  

জনপ্রিয় হচ্ছে মেক্সিকো, মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফল ড্রাগন ফলের চাষও। ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের চাষও। আস্তে আস্তে ড্রাগনের গায়েও দেশি ফলের লেবেল লাগতে শুরু হয়েছে।

গত অর্থবছরে দেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদন ছিল ৩৪৬৩ টন।

এর বাইরেও অনেক কৃষি উদ্যোক্তাকে সীমিত পরিসরে বিদেশি রাম্বুটান, পারসিমম, সৌদি খেজুর, খাটো জাতের নারিকেল, ম্যাংগোস্টিন, অ্যাভোকাডো, মাস্কমেলন, রকমেলন সহ বিভিন্ন বিদেশি ফলের বাগান করতে দেখা গেছে।

সব মিলিয়ে বিদেশি ফলের চাষাবাদকে কিছু কিছু উদ্যোক্তা বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন চাঁদপুরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বিনিয়োগে ফ্রুটস ভ্যালি নামের একটি ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। এখানে বিদেশি ফল রকমেলন, মাস্কমেলন, হানিডিউ ও আইসবক্স ইয়েলো নামের হলুদ তরমুজের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হচ্ছে।  

লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুখ আহমদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অনেক বিদেশি ফলের চাষ দেশে শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষিজাত ব্যবসার নতুন একটা উদ্যোক্তা শ্রেণি দেশি গড়ে উঠছে দেশে।'

ডিএই কর্মকর্তারা জানান, ১৪-১৫ বছর আগে চীন থেকে জাত এনে দেশে কমলার চাষ শুরু হয়েছিল। কমলা তখন পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। চীন ও ভারত থেকেই বেশিরভাগ কমলা আমদানি হতো।

তবে দীর্ঘদিন ধরে দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলেই কেবল কমলার চাষ হতো। কয়েক বছর ধরে সারাদেশে ফলটির উৎপাদন শুরু হয়। এতে সার্বিক উৎপাদনও বেড়ে যায়। 

কমলা চাষকে উৎসাহিত করতে কৃষিবিজ্ঞানীরা কমলার একটি উন্নত জাতও উদ্ভাবন করেছেন। ২০১৫ সালে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের গবেষকেরা বারি-২ নামে কমলার এই জাতটি উদ্ভাবন করেন। 

ডিএই-এর মহাপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'লেবু জাতীয় ফলের চাষকে গুরুত্ব দিয়ে গত দেড় দশক ধরে আমরা কাজ করছি। এতে কমলা ও মাল্টাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।'

২০০৬ সালে ডিএই কমলা চাষ উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এই প্রকল্প শেষ হলে ২০১৭ সালে সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় কমলা ও মাল্টা চাষে চাষীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সারা দেশে ৫ হাজার কমলা ও মাল্টার বাগান তৈরি করা হয়। 

২০১৯ সালে হাতে নেয়া হয় ৫ বছর মেয়াদী 'লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি' নামের নতুন প্রকল্প। 

এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই জাতীয় ফলের চাষ ও চারা উৎপাদন বছরে ১০-১৫ শতাংশ বাড়ানো লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। প্রকল্প শেষে দেশে মাল্টা ও কমলার উৎপাদন আরো ৪০ হাজার টন বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। 

দেশি-বিদেশি জাত মিলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার টন। আর আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.