দেশে ডায়াবেটিস রোগীদের মাত্র অর্ধেক চিকিৎসার সুযোগ পান  

বাংলাদেশ

14 November, 2021, 12:55 pm
Last modified: 14 November, 2021, 04:34 pm
২০৪৫ সালের মধ্যে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এ রোগ নীরবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দেশে বর্তমানে প্রায় ৮৪ লাখ ডায়াবেটিস রোগী আছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০.৪% জানেন যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। অথচ এই অল্প সংখ্যক রোগীও রোগটির চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে পুরোপুরি জানেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের (এনসিডিসি) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মাত্র ৫০ শতাংশের চিকিৎসা সেবার সুযোগ রয়েছে।   

এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ইনসুলিন বিনামূল্যে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরা বিনামূল্যে ইনসুলিন পেলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে। তবে সেটির বাস্তবায়ন ও ফলোআপ করাটা কিছুটা 'চ্যালেঞ্জিং' বলে তারা মনে করছেন। 

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ, ২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ লাখে। ২০৪৫ সালের মধ্যে দেশে এ রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা দেড় কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

চিকিৎসকেরা বলছেন, স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া এবং তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় হার্ট এবং কিডনি রোগও বাড়ছে।  

তবে রোগী বাড়লেও তাদের অর্ধেকই জানেন না নিজেদের রোগ সম্পর্কে। প্রি-ডায়াবেটিস রোগী শনাক্ত ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কমিউনিটি ক্লিনিকে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া ও ফলোআপ করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।    

এমন পরিস্থিতিতেই আজ (রোববার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো, সবার জন্য ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও সেবা নিশ্চিতকরণ।  

এনসিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাপ এবং গ্লুকোজ ও কিটোনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত ইউরিন স্ট্রিপগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে উঠে আসে, মাত্র ১৩.৬% রোগীর রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৬২% রোগী বেসরকারি সুবিধা থেকে চিকিৎসা এবং পরামর্শ চেয়েছেন; এ হার সরকারি সুবিধার ক্ষেত্রে ২৬.৯%। প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ৯৫.২% বেসরকারি সেবাকেন্দ্র থেকে, মাত্র ১.১% সরকারি সুবিধা থেকে এবং ৪.৩% রোগী রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন পরিচিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।        

গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এ রোগ নীরবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস রোগের প্রায় সব ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি খুব দ্রুতই বিনামূল্যে ডায়াবেটিসের ব্যয়বহুল চিকিৎসা সামগ্রী ইনসুলিন প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।   

জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, নিবন্ধিত ডায়াবেটিস রোগীদের সরকার বিনামূল্যে ইনসুলিন সরবরাহ করতে পারবে। তবে সমস্যা হলো আমাদের উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ইনসুলিন সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই।

"সরকার যদি কোল্ড চেইন মেইনটেইন করে বিনামূল্যে ইনসুলিন দেয়, তাহলে অনেক মানুষ উপকৃত হবে। ইনসুলিন বা ওষুধ যাই বিনামূল্যে দেওয়া হোক না কেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপ করতে হবে। তা না হলে ওষুধ ফ্রি দেওয়া হলেও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।" 

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, "বাড়ি থেকে দূরে হওয়ার কারণে উপজেলা হাসপাতালে রোগীরা ফ্রি ওষুধ নিতেও যেতে চায় না। তাই কমিউনিটি ক্লিনিকে ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।"  

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ওজন কমানো, হাঁটাচলা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং তামাক জাতীয় পণ্য না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.