দিন আনে দিন খায় যারা, তাদের উপার্জনে লকডাউনের থাবা
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/13/day_labourer_1.jpg)
খিলগাঁও শ্রম বাজারে প্রায় ১৫ দিন ধরে কাজের সন্ধানে এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আজাদ। তিনি প্রতিদিনই সকাল সাতটায় এসে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাজ পাওয়ার আশায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে বসে থাকেন।
"লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই কোনো কাজ পাচ্ছি না। ধার-দেনা ও স্থানীয় দোকান থেকে বাকি এনে চলছি। কোনোদিন খেয়ে, কোনোদিন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। এ মাসে ঘর ভাড়াও দিতে পারি নাই। ঘরের মালিকও তাগাদা দিচ্ছে", বলেন আজাদ।
তার মতোই খিলগাঁওয়ে প্রায় ১৫০ শ্রমিক অলস বসে থাকছেন। তবে শ্রমজীবী মানুষের এই চিত্র পুরো রাজধানী জুড়েই।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন শ্রমবাজার ঘুরে দেখা যায়, কারো হাতে ব্যাগ, কারো হাতে কোদাল, কেউবা বালতি নিয়ে বসে আছেন। যারা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের শ্রম বিক্রি করেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড়, সূত্রাপুরে নয়াবাজার, বংশাল, পোস্তগোলা, মগবাজার, মতিঝিল, হাতিরপুল মোড়, রাজধানীর মিরপুর ১ ও ১০ নম্বর ওভারব্রিজের নিচে, ১৪ নম্বরের রাস্তার পাশে, নাখালপাড়া রেলগেটে বড় মসজিদের সামনে, রেললাইনের পাশে, সাতরাস্তার মোড়ে, পান্থপথ সিগন্যালে, আজিমপুর, সেকশন বিডিআর গেটসহ বিভিন্ন জায়গায় সকালের সূর্য ওঠার আগেই বসে এ শ্রমবাজার।
মগবাজারে এক শ্রমিক মো. হানিফ বলেন, 'আমি ৩০ বছর ধরে এখানে কাজের সন্ধানে আসি। আগে প্রতিদিন আসলেই কাজ পেতাম। সকাল আটার মধ্যে কাজে নিয়ে যেত কেউ না কেউ। আজ সকাল সাত টায় বসে আছি দুপুর হয়ে গেছে কেউ কাজে নিতে আসে না। গত ৭ দিনে মাত্র দুই দিন কাজ করে ১২০০ টাকা পেয়েছি। সেই টাকা নিজে খাব না পরিবারকে পাঠাব। আমরা দুর্ভোগে আছি। একবেলায় যে খাবার খেতাম সেই টাকা দিয়ে এখন তিন বেলা খাই।'
হানিফ রাজমিস্ত্রীর কাজ ,মাটিকাটার কাজসহ লেবারের কাজ করে। লকডাউন শুরু থেকেই কাজের সংকটে আছেন তিনি। হানিফ বলেন, 'প্রতি বছর সরকার বাজেট দেয় কিন্তু আমরা তো সেখান থেকে সহায়তা পাই না। এই সংকটে সরকার আমাদের সহায়তা না করলে আর কবে করবে? দুর্দিনে এক মুঠ চাল দিলেও সেটাও উপকার হয়।'
মো. হানিফ বলেন, 'আমরা কোনোমতে একবেলা খেয়ে বাঁচতেছি। চোখের পানি ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। আমরা লেবার, কাজ না করলে টাকা কই পাব।'
পটুয়াখালি সদরে বাড়ি মো হানিফের পরিবারে ৫ জন সদস্য। সংসারের খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি এনজিওর কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে কিস্তিতে সে টাকা শোধ করার কথা। কিন্তু আয় নেই তাই কিস্তির টাকা দিতে পারছেন না।
হানিফ বলেন, 'আজকে আট হাজার টাকা কিস্তি দেয়া লাগত। দিতে পারছি না। একবেলায় যে খাবার খেতাম সেই টাকা দিয়ে এখন তিন বেলা খাই। মগবাজারে আরও ১৫০ শ্রমিক, সবারই আমার মতো এমন অবস্থা।'
সেনেটারি, রং , বালু সিমেন্টের দোকান সব বন্ধ তাই কাজ পাচ্ছেন না বলে জানান মো. হানিফ।
হানিফের পাশে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, 'একদিকে আমরা কোনো কাজ পাচ্ছি না, আবার গণপরিবহন না চলায় গ্রামেও যেতে পারছি না।'
দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুস বলেন, 'আমরা কাজের সন্ধানে বসে থাকি, দিনশেষে খালি হাতে বাসায় যাই। বাড়িওয়ালারা, কন্টাকটাররা, তারা যে আমাদের কাজে নিতে আসবে, তারা তো লকডাউনের কারণে আসতে পারছেন না। সব জায়গা আটকা। কিছুক্ষণপর আমরা পুলিশের দৌড়ানি খাব।'
মগবাজারে টিনসেটের একটি বাসার এক রুমে চার জন মিলে থাকেন আব্দুল কুদ্দুস। ভাড়া চার হাজার টাকা সেটাও ৮ মাস ধরে দিতে পারছেন না, জানিয়ে আব্দুল কুদ্দুস বলেন, 'খেতে পারি না, ভাড়া দিব কীভাবে।মার্কেটে যাই আর ফিরে আসি। কোনো কাজ পাই না। এখানে ১০০ লোক হবে বসে রয়েছি, কেউ কাজে নিতে আসেনি। আর একজন যদি কাজে নিতে আসে ২৫ জন হুমড়ি খেয়ে বসে কাজে যাওয়ার জন্য।'