দণ্ডিত দুর্নীতিবাজদের জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের কোটি কোটি টাকা অনাদায়ী

বাংলাদেশ

19 February, 2021, 09:15 am
Last modified: 19 February, 2021, 10:45 am
২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্নীতির মামলার রায়ে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার জরিমানা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ থাকলে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে সরকার। আইন অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা প্রশাসন জরিমানা আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনুকূলে দখলে নেবে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে কৃষিবিদ জাবেদ ইকবাল 'সমন্বিত ভুট্টা উন্নয়ন প্রকল্প'র প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। প্রকল্পের প্রায় ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ওই অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৯ সালে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করে। তদন্তে এই আত্মসাতের সত্যতাও পায় দুদক।

২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের এক রায়ে পলাতক জাবেদ ইকবালের ৫০ কোটি ৯৯ লাখ সরকারের অনূকুলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেয়; একইসাথে আরও ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি থেকে এই অর্থ সরকারের অনূকূলে নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

পলাতক থাকায় জাবেদ এই মামলায় আপিল করতে না পারায় দুদক ২০১৬ সালের শেষ দিকে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠায় তার সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে দখলে নিতে। ছয়বছর পার হলেও ঢাকার জেলা প্রশাসন জাবেদের কোনো সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে দখলে নিতে পারেনি। কিছুদিন আগে রাজধানীর একটি হাসপাতালে পলাতক জাবেদ ইকবাল মৃত্যুবরণ করেন।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন বলেছে, অর্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে জাবেদ নামে-বেনামে রাজধানীর গুলশান ও বারিধারায় দুইটি বিলাসবহুল বাড়ি ও একটি প্লট করেছেন। যেগুলো এখনো বহাল তবিয়তে।

ঢাকার জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, রাজধানীর দুইটি বাড়ি ও একটি প্লট জাবেদ ইকবালের শ্বশুর, শ্বাশুরি ও এক ভাইয়ের নামে। ডিসি আফিস এই সম্পত্তি দখলে নিবে, বুঝতে পেরে তারা হাইকোর্টে রিট করে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি স্থগিত করেন। তারা রিটে দাবী করেন এসব সম্পত্তি তাদের ব্যক্তিগত উপার্জন। ফলে ডিসি অফিস আর দখলে নিতে পারেনি।

ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. শহীদুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিবিদ জাবেদ ইকবালের বিষয়ে কিছু জানেন না। তবে, অনেক সময় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করার ফলে জরিমানা আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও কিছু আইনি জটিলতার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তবে অন্য রায়গুলো বাস্তবায়নের কাজ করছে জেলা প্রশাসন। 

শুধু জাবেদ ইকবাল নয়, দুদকের একটি পরিসংখ্যন থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্নীতির মামলার রায়ে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার জরিমানা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ থাকলে মাত্র সাড়ে তিন হাজার কোটি আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে পেরেছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আইন অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তি যে জেলার বাসিন্দা সে জেলা প্রশাসন জরিমানা আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনুকূলে দখলে নেবে।

রায় হওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শুধু ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে এরকম দণ্ডিত প্রায় ৪০০ জনের জরিমানা আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য চিঠি দিয়েছে দুদক। এখন পর্যন্ত দুই/একটি ছাড়া অন্যগুলোর বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি ঢাকা জেলা প্রশাসন।

দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে ৫১ টি, ২০১৪ সালে ৮৯ টি, ২০১৫ সালে ২৯ টি, ২০১৬ সালে ৩৯ টি, ২০১৭ সালে ৪২ টি মামলায় রায় হওয়ার পর ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। রায় হওয়া এই মামলাগুলো প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও জরিমানার আদেশ রয়েছে।

তবে, ২০১৫ সালে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় অনুযায়ী ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দশ কোটি পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৮শ ৩২ টাকা দামের গুলশানের ছয়তলা বাড়িটি সরকারের অনূকুলে দখল নিয়েছে ঢাকার জেলা প্রশাসন। দুদক বলছে, এছাড়া আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য নজির নেই।

তবে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, ডিসি অফিসে যে পরিমান দায়িত্ব পালন করতে হয়, সে অনুযায়ী তাদের জনবল নেই। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সম্পত্তি দখলে নিয়ে গিয়ে পলাতক আসামীর ঠিকানা ভুল থাকায় তা দখলে নেওয়া যায়নি। আবার দুর্নীতিবাজরা তাদের অর্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে নামে বেনামে সম্পদ গড়ে তোলে, এ কারণেও জটিলতা দেখা যায়।

তিনি বলেন, অনেক সময় দুদকের তদন্তে সঠিক ঠিকানা যাচাই না করেই পলাতক আসামীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত বছর রায় অনুযায়ী এক ব্যাংক কর্মকর্তার ধানমন্ডির বাড়ি দখল নিতে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তার শ্বশুরের বাড়ি, ফলে সেটি দখলে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরকম অনেক ঘটনায় আছে।

২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত রায় হওয়া দুদকের মামলার একটি তালিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায় ওই পাঁচ বছরেই প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার জরিমানা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায় হয়েছিল।

২০১৩ সালে ২৫৫টি মামলার রায়ে ১১০০ ব্যক্তির প্রায় ৬০০ কোটি টাকা জরিমানা  ও ৫১৫ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তে করে সরকারের অনূকূলে নেওয়ার আদেশ আসে।  ২০১৪ সালে ২৪৩ টি মামলার রায়ে ৯৯৮ ব্যক্তির ৩৩৯ কোটি টাকা জরিমানা ও ৭০০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনূকূলে নেওয়ার আদেশ আসে। ২০১৫ সালে ১৮৩ টি মামলার রায়ে ৭৩৮ ব্যক্তির ৭১৫ কোটি টাকা জরিমানা ও ৪০০ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনূকূলে নেওয়ার আদেশ আসে। ২০১৬ সালে ১৫৫ মামলার রায়ে ৯৫৪ ব্যক্তির  ৬৪৫ কোটি টাকা জরিমানা ও ১৭৬ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনুকূলে নেওয়ার আদেশ আসে। ২০১৭ সালে ১৬৭ মামলার রায়ে ৯৫৪ ব্যক্তির  ৬৫৪ কোটি টাকা জরিমানা ও ৩০৮ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারের অনুকূলে নেওয়ার আদেশ আসে।

টিবিএসের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ৫ বছরের রায় হওয়া ১,০০৩ টি মামলার মধ্যে ৫১৫ টি রায়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাইকোর্টে কোনো আপিল করেনি দন্ডিতরা। ৪৮৮ টি মামলায় আপিল করা হলে জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের আদেশ স্থগিত করে এখনো আপিল ঝুলে আছে।

দুদকে সুত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগোং ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কিরণ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে পরিষদের দশ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে ১৯৯৯ সালে মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ২০১৩ সালে পলাতক অবস্থায় কিরণকে এক বছরের কারাদন্ড দেয় আদালত। একইসাথে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও দশ লাখ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আদেশ হয় রায়ে। 

দুদক বলছে, ওই রায় বাস্তবায়নে খাগড়াছড়ি ডিসি অফিসে গত আট বছরে কয়েকবার তাগাদা দিলেও কাজ হয়নি। এই রায় বাস্তবায়নে কোনো আইনি বাধাও নেই। 

শত কোটি টাকার সম্পত্তি কম দাম দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঘুষের মামলায় ১৯৯৯ সালে ঢাকার একটি উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার এসএম ইলাহীর বিরুদ্ধে মামলা করে তৎকালীন ব্যুরো। ২০১৩ সালে মামলার রায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড, ২০ কোটি টাকা জরিমানা এবং ১৮ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের রায় দেন আদালত। এই জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের রায় এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

এই সাবরেজিস্টারের মালিবাগের চারতলা বাড়ি সরকারের দখলে নিতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়। এছাড়াও রাজবাড়ি নিজ জেলায় সম্পত্তি দখলে নিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হলেও অজানা কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। এসএম ইলাহী এখন কানাডায় পলাতক বলে জানায় দুদক।

সরকারের একটি প্রকল্পের ৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রফিকুল ইসলাম নামের তৎকালীন এক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০০০ সালে মামলা করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে এই মামলার রায়ে, ওই কর্মকর্তাকে ১০ বছরের সাজা, ৪১ কোটি টাকা জরিমানা ও ৪১ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন বিচারিক আদালত। রায়ের পর চাকরিচ্যুতও হন রফিকুল। 

ছয় মাস সাজা ভোগের পর হাইকোর্টে আপিল করলে জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের আদেশ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রফিকুল প্রথম ছয় মাসের জামিন নেন। এর পর কয়েকদফা জামিনের মেয়দ বাড়িয়ে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন নিয়ে এখন ব্যবসা করেছেন তিনি। এই আপিল গত চার বছর ধরেই এই ঝুলে আছে। 

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী আদালত সাধারনত জেলা প্রশাসককে ক্ষতিপূরণ আদায় ও বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেয়। অনেক সময় দুদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুদক তা যথাযথভাবে পালন করে। রায় অনুযায়ী গত কয়েক বছরে তিন হাজার কোটি টাকার বেশী জরিমানা আদায় ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে দুদক।

দুদকের 'প্রপার্টি রিকভারি ইউনিট' রয়েছে বাজেয়াপ্ত ও ক্ষতিপূরণ উদ্ধারের জন্য। এই বিভাগের ভূমিকা কী জানতে চাইলে, এ বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, কোনো মামলা তদন্তাধীন বা বিচারাধীন অবস্থায় আদালত সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ দিলে সে অনুযায়ী কাজ করে এই বিভাগ। তবে গত দুই বছরে অনেকগুলো মামলার রায়ে ক্ষতিপূরণ ও বাজেয়াপ্তের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ একটা বড় টাকা ও সম্পদ উদ্ধার করেছে। এবং রায় হওয়ার আগে যে সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে দুদক তা রায় হওয়ার পর ডিসি অফিসের মাধ্যমে সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে।   

দুদকের একটি সুত্র টিবিএস কে জানায়, সংস্থাটির প্রপার্টি রিকভারি ইউনিট এখতিয়ার অনুযায়ী, সম্প্রতি আদালতের অনুমতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত গাড়িচালক মালেক, অফিস সহায়ক আফজালের শত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। এছাড়াও আলোচিত নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও তার স্ত্রীর প্রায় ৩৬ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।  

প্রপার্টি রিকভারি ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ১৬ টি মামলার রায়ে ক্ষতিপূরণ ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের কার্যক্রম পরিচালনা  করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪টির রায় অনুযায়ী প্রায় শত কোটি টাকা জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের অর্থ উদ্ধার করে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক টিবিএসকে বলেন, দুদক যাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এই প্রতিষ্ঠানটি বেশীরভাগ সময় সরকারের বিরোধী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলার উদ্দেশ্য খুব একটা বেশী ভালো দেখা যায় না।

তিনি বলেন, 'তারপরেও যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় বা মামলার পর রায় হয়, তাদের কিন্তু টাকা পয়সার অভাব নেই। আর বাংলাদেশে টাকা থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। সেটি ডিসি অফিস ম্যানেজ করা হোক আর দুদককে ম্যানেজ করে হোক। ফলে যা হওয়ার সেটিই হয়।'

দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান টিবিএসকে বলেন, আমাদের দেশে আদালত রায় দেওয়ার পর তার কাজ শেষ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যে এরকম জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের আদেশের পর আদালতগুলো ফলো-আপ প্রতিবেদন চায়। সে অনুযায়ী তারা পরবর্তী আদেশ দেন। কিন্তু আমাদের এখানে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এরকম ব্যবস্থা থাকলেও সেটি কার্যকর নয়। ফলে এই সমস্যা হচ্ছে।  

তিনি বলেন, এরকম অনেক জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের আদেশ বাস্তবায়নে অবহেলার বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করলেও সেটি সেভাবে আমলে নেওয়া হয় না। আদালত ডিসির কাছে কোনো প্রতিবেদন চাইলে ডিসি আদালতে বলে দেন চেষ্টা চলছে বা পাওয়া যায়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, এরকম রায় বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি খুব শিগগিরই প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হবে। কারণ দীর্ঘসময় ব্যয় করে এই মামলাগুলোর রায় এসেছে আদালত থেকে। এছাড়াও তদন্ত অনুসন্ধানসহ অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হয় এসব কাজে নিয়োজিত সরকারি লোকজনের। 

তিনি বলেন, এছাড়াও হাইকোর্টে যেসব জরিমানা ও বাজেয়াপ্তের রায় স্থগিত রেখেছে সেগুলোও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুদক আইনজীবীদের সাথে বসে এ বিষয়ে শিগগিরই একটি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার টিবিএসকে বলেন, দুদকের মামলার তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, বিচারকাজও কতটা স্বচ্ছ হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে রায় বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, জরিমানার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হবে, আর বাজেয়াপ্তের টাকা সাধারণত সরকার পাবে একটা অংশ, আর যাদের টাকা আত্মসাত করেছে তারাও পাবে। তাই আইন মেনে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হলে ভালো হবে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.