টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড়  

বাংলাদেশ

08 September, 2021, 09:20 am
Last modified: 08 September, 2021, 11:38 am
এবারের কর্মসূচি তিন দিনে নামিয়ে আনায় প্রতিদিন টিকা দেওয়া হবে ৭০০ জনকে।

আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ক্যাম্পেইনের আওতায় যারা করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর)। মঙ্গলবার ভোর থেকেই বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়ার জন্য নারী ও পুরুষেরা টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি থাকলেও উৎসাহ নিয়েই দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে মানুষ। 

এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় টিকা কার্ড হাতে নিয়ে অপেক্ষায় আছে শত শত মানুষ। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যরা তাদের টিকা নেয়ার সিরিয়াল পেতে সহায়তা করছে।

টিকাগ্রহণ শেষে আব্দুল হাদি নামের এক ব্যক্তি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,  "এত লোক এসেছে যে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা যাচ্ছে না। আরও বড় জায়গার প্রয়োজন ছিল"। 

ডিএসসিসি ওয়েবসাইটে ভূতের গলি কমিউনিটি সেন্টারকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' লেখা রয়েছে। কিন্তু এ সেন্টারকেও বানানো হয়েছে টিকাকেন্দ্র। সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা যায় শত শত নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। টিকাকেন্দ্রের ভেতর থেকে লাইন হয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৩০০ লোক। গাদাগাদি করে দাঁড়ানোর ফলে একজনের সাথে অন্যজনের সামাজিক দূরত্ব যেমন থাকছে না তেমনি করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিও রয়েছে।

বয়স্কদের টিকা দেয়ার অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও এ কেন্দ্রে এক ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে সে অগ্রাধিকার দিতে দেখা যায় নি।

সকাল ১০টার দিকে টিকা নিয়ে বেরিয়ে মো. জাহাঙ্গির (৭০) বলেন, "ভোর ছয়টায় লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন টিকা পেলাম"। লাঠি ভর দিয়ে চলছিলেন জাহাঙ্গির। তিনি বলেন, "আমাদের বসার জায়গারও ব্যবস্থা রাখা হয় নি"।

দ্রুত অধিক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে গত ৭-১২ আগস্ট  ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সারাদেশে ক্যাম্পেইনের আওতায় ভ্যাকসিন দেয় সরকার। সে সময় ৬ দিনে ৫০ লাখ ৭১ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ক্যাম্পেইনের আওতায় গ্রামে সিনোফার্ম ও শহরে মর্ডানার টিকা দেয়া হয়েছে।

ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রথম দিন সারাদেশে ৩০ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। গত মাসের ক্যাম্পেইনে কম সময়ে অনেক মানুষ টিকা পেলেও নানা ধরণের বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছিলো এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিলো। 

তবে ক্যাম্পেইনের সেকেন্ড ডোজ পাওয়ার ক্ষেত্রে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলোনা। কারণ ফার্স্ট ডোজ পাওয়া সবার কাছে টিকা কার্ড ছিলো। টিকার ফার্স্ট ডোজ যে যেই সেন্টারে দিয়েছেন, এখন তারাই সেই কেন্দ্রে সেকেন্ড ডোজ পাচ্ছেন।

গতকাল দুপুর ১১টায় হাতিরপুল কাঁচাবাজার সংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় টিকা পেতে শত শত নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুদি দোকানের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রয় তারা। কিছুক্ষণ বাদেই বৃষ্টি নামলে এসময় অনেকেই ভিজে যায়।

টিকা নিতে আসা নুরুল হক বলেন, "পাশেই একটি স্কুল আছে। সেখানে টিকাকেন্দ্র বানানো হলে ভালো হতো। সেখানে খোলামেলা পরিবেশ ছিল। এটা করা হলে আমাদের আর বৃষ্টিতে ভিজে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না"।

এ কেন্দ্রে বাইরে দুপুর ২টায়ও ভিড় ছিল। তবে এ সময় নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় নি এ সময়।

ক্যাম্পেইনের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে মঙ্গলবার টিকার সেকেন্ড ডোজ দেয়া হয়েছে।  

ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় এই গণটিকাদান চলবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই কর্মসূচির আওতায় প্রথম ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, তারা এই তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টিকা নিতে পারবেন।

প্রথম দফায় রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে দিনে ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এবারের কর্মসূচি তিন দিনে নামিয়ে আনায় প্রতিদিন টিকা দেওয়া হবে ৭০০ জনকে।

গণটিকাদান কর্মসূচিতে ৭ ও ৮ আগস্টের প্রথম ডোজ টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ৭ সেপ্টেম্বর। ৯ ও ১০ আগস্ট যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা ৮ সেপ্টেম্বর পাবেন দ্বিতীয় ডোজ। আর ১১ ও ১২ আগস্ট প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের ৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শরীফ আহমেদ বলেন, "প্রথম ডোজ যারা পেয়েছেন, তাদের সবাইকেই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। আজকে (মঙ্গলবার) কেউ মিস করলে আগামীকাল তাদের দেওয়া হবে"।
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.