চলতি পথে মোবাইলে কথোপকথন বাড়াচ্ছে মৃত্যুঝুঁকি

বাংলাদেশ

ইউএনবি রিপোর্ট
10 October, 2019, 12:05 pm
Last modified: 10 October, 2019, 12:31 pm
বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তোড়জোর চলতে থাকে। অভিযান চলে রাস্তায় রাস্তায়। এক সময় থেমে যায় নিয়মের বিধিনিষেধ। চালকরা ফিরে যান পুরোনো অভ্যাসে...

সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণের সঙ্গে যোগ হয়েছে চালকদের মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা। যানবাহন চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহারের ফলে অন্যমনস্ক চালক নিয়য়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। এর ফলে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকিও।

মোবাইলে কথা বলার সময় কেবল রাস্তা পার হওয়া নয়, বিপজ্জনকভাবে রেললাইনের ওপর দিয়েও যেতে দেখা যায়। চালক ডান হাতে স্টিয়ারিং ধরে রেখে বাম হাতে মোবাইলে কথা বলছেন, এমন দৃশ্যও ঘটে হরহামেশা। আর এভাবে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা।

‘নিরপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলন খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, “আজকাল যত দুর্ঘটনা ঘটছে, এর একটি বড় অংশের কারণ চালকদের মোবাইল ব্যবহার। যানবাহন চালানোর সময় মোবাইল ও এয়ারফোন (কানে লাগিয়ে গান শোনার ব্যবস্থা) ব্যবহার মোটরযান আইনে নিষিদ্ধ। এটি অমান্য করলে দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এরপরও আইন অমান্য করা হচ্ছে বলে দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানিও বাড়ছে। তবু বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই।”

বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তোড়জোর চলতে থাকে। অভিযান চলে রাস্তায় রাস্তায়। এক সময় থেমে যায় নিয়মের বিধিনিষেধ। চালকরা ফিরে যান পুরোনো অভ্যাসে।

এ বিষয়ে তাই প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, “নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ব্যবহার করায় মাঝে মাঝে অনেকেই দুর্ঘটনায় পড়ছেন। এভাবে চালকরা কেবল নিজের নন, অন্য অনেক পরিবারকেও ক্ষতির মুখে ফেলছেন।”

প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

গাড়ি চালানোর সময় আইন মেনে চলতে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি (ছবি: রয়টার্স)

এ প্রসঙ্গে খুলনা মহানগরীর ট্রাফিক সার্জেন্ট তাসমিয়া তিথি জানান, মোবাইলে কথা বলার ফলে দুর্ঘটনার বৃদ্ধি ছাড়াও অনেক চালক রাস্তায় গাড়ির গতি কমিয়ে যানজটও তৈরি করেন। এসব বন্ধ করতে দরকার সচেতনতা।

যানবাহন চালকরাও এই অভিযোগ স্বীকার করছেন। বাসচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম মনে করেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য ছোট গাড়িগুলোই মূলত দায়ী। এগুলো অনেক দ্রুত ছোটে এবং তরুণ চালকরাই সাধারণত এসব চালান। 

শহীদুল মনে করেন, এই ধরনের চালকরাই মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালান।

এদিকে নগরীর আমতলা মোড় এলাকার শিউলি সুলতানা মনে করেন, উঠতি বয়সী ছেলেরা মোটরসাইকেল চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলে থাকেন। তাই ওদের এসব বাহন কিনে দেওয়ার আগে বাবা-মায়েদের সন্তানকে এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

এদিকে খুলনা মহানগরীর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সাইফুল হক জানান, “যানবাহন চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা আইনত অপরাধ। এ-সংক্রান্ত অপরাধে আমরা ১৪০ এবং ১৪৯ ধারায় মামলা করে থাকি। আইনের মাধ্যমে জরিমানা করে যাচ্ছি।”

তবে, তিনি মনে করেন, জরিমানা করে এটি বন্ধ করা কঠিন। এ জন্য গণসচেতনতা বাড়ানো দরকার।

তিনি বলেন, রাস্তা পারাপার এবং যানবাহন চালানোর সময় মানুষ যেন মোবাইলে কথা না বলে, সেজন্য তাদের উদ্যোগে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু হবে শিগগির।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ১২ জুলাই মোটরযান আইনের ১১৫ (বি) ধারার সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে গাড়ি চালানোর সময় মুঠোফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ওই আইনে চালকদের এয়ারফোন ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়। 

এ আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.