গাছতলা, ভ্যান ও টেবিলে করোনা উপসর্গের রোগীদের ঠাঁই 

বাংলাদেশ

08 July, 2021, 12:25 pm
Last modified: 08 July, 2021, 02:38 pm
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগীদের চাপ, পর্যাপ্ত শয্যা ও চিকিৎসাসেবার অভাব

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। রেডজোনে ৪০ শয্যার আরও একটি ওয়ার্ড চালুর পর করোনায় আক্রান্তদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হলেও মারাত্মক দুর্ভোগে রয়েছে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগীরা। বর্তমানে নারী আইসোলেশন (করোনা ইয়োলো জোন) ওয়ার্ডের শয্যা, মেঝে ও বারান্দা ছাড়িয়ে রোগীর ঠাঁই হয়েছে বাইরে খোলা আকাশের নিচে। গাছতলায়, আর্বজনার ডেনের পাশে, ভ্যান ও টেবিলের ওপর রয়েছে রোগীরা।

করোনা ইয়োলো জোনে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ১৯ শয্যার বিপরীতে ১১৭ রোগী চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে। মারাত্মকভাবে অক্সিজেনের ব্যয় বেড়েছে। শয্যায় থাকা করোনাক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রতিদিন ৩ হাজার লিটার তরল অক্সিজেন লাগছে। তবে সিলিন্ডার অক্সিজেন সংকটে কষ্টে রয়েছে মেঝেতে থাকা করোনা উপসর্গের রোগীরা।

এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা রেডজোন ও ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জন মারা গেছেন। গতকাল মারা যান ১২ জন রোগী। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা ইয়োলো জোনের মহিলা ওয়ার্ডে ৯টি শয্যা রয়েছে। ৭৬ জন করোনা উপসর্গের রোগী। ওয়ার্ডের মেঝেতে রোগীর সারি। মেঝের কোথাও জায়গা নেই। সারি সারি রোগী শুয়ে আছে। পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। এই পরিস্থিতিতে নতুন রোগী আসলেই তাকে ওয়ার্ডের বাইরে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। 

রোগীর স্বজন গোলাপি বেগম জানান, তার শাশুড়িকে ভর্তি করা হয় সকাল ৯টার দিকে। জায়গার অভাবে ওয়ার্ডের বাইরে আর্বজনার ড্রেনের পাশের জায়গায় রাখা হয়েছে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত মেলেনি কোন চিকিৎসাসেবা। 

আরেক রোগীর স্বজন বিথিকা ও খোকা জানান, রাত ১০টার তাদের রোগীকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই রোগী বাইরে রয়েছে। ওয়ার্ড থেকে একটি টেবিল এনে তার ওপর রোগীকে রেখে দেয়া হচ্ছে অক্সিজেন। 

পাশেই অটো ভ্যানের ওপর শুইয়ে রাখা হয়েছে এক নারীকে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাকে ভর্তি করা হয়। জায়গা না পেয়ে ঠাঁই হয় ভ্যানে। রোগীর স্বজন, মতিয়ার রহমান, দিলীপ কুমার, রেহেনা খাতুনসহ আরও কয়েকজন জানান,  সোমবার রাতে রোগী ভর্তির পর থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত কোন চিকিৎসাসেবা মেলেনি। তবে যাদের খুব বেশি শ্বাসকষ্ট তাদের অক্সিজেন লাগিয়ে দায় শেষ করছেন নার্স-কর্মচারীরা। চিকিৎসকের দেখা মেলে না খুব সহজে। 

পুরুষ ইয়োলো জোনে দেখা গেছে, ১০ শয্যার বিপরীতে রোগী চিকিৎসাধীন ৪১ জন। মেঝেতেও জায়গা না থাকায় রোগী রাখা ওয়ার্ডের বারান্দায়। সেখানকার জায়গাও প্রায় শেষ। আর কয়েকজন রোগী আসলেই বাইরে রেখে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে।  

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, প্রতিদিনই করোনা রেডজোন ও ইয়োলো জোনে রোগী বাড়ছে। শয্যার অভাবে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গের রোগীদের  মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছিলো। সোমবার রাত থেকে করোনা রোগীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে। ৫০ শয্যার আরও একটি ওয়ার্ড চালু করায় তারা শয্যা পেয়েছে। বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউসহ মোট ১৪৬টি শয্যা রয়েছে। করোনা রোগীর শয্যা নিয়ে আপাতত চিন্তা কম। কিন্তু উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য দুশ্চিন্তা বেড়েছে।   

করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৯ শয্যার ইয়োলো জোনে রোগী ভর্তি রয়েছে ১২০ জন। ওয়ার্ডের মধ্যে ও বারান্দায় জায়গা না থাকায় নতুন রোগী ভর্তি হলে বাধ্য হয়ে খোলা স্থানে রাখতে হয়েছে। বর্ষার মৌসুমে রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের আরএমও কোয়ার্টারে মহিলা আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী রাখা সম্ভব হবে। 

আরএমও ডা. আরিফ আহমেদ আরও জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় বর্তমানে প্রতিদিন ৩ হাজার লিটার তরল অক্সিজেন ব্যয় হচ্ছে।  দুই দিন পর পর হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সিলিন্ডারে ৬ হাজার লিটার অক্সিজেন ভরতে হচ্ছে। চাহিদা বাড়লেও কষ্ট পেতে হচ্ছে শয্যায় থাকা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের। প্রতিদিন দেড় শতাধিক সিলিন্ডার ব্যয় হচ্ছে। প্রতিদিন রোগী বাড়তে থাকায় সিলিন্ডারের অভাবে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। 

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের। এছাড়া ঢাকায় ৬ জন, খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১ জন। 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকতারুজ্জামান বলেন, শয্যা বা জায়গার অভাবে রোগীকে বাসায় ফিরিয়ে দেয়া কোনভাবেই সমাধান না। যে কোন পরিস্থিতিতে করোনা বা উপসর্গের রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা প্রদানের চেষ্টা করা হবে। তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। হাসপাতালেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মানুষের অসচেতনতায় জেলার করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রামে-গ্রামে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.