গণপরিবহন চালুতে স্বস্তিতে যাত্রীরা, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা

বাংলাদেশ

মো. জাহিদুল ইসলাম ও শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী
08 April, 2021, 09:50 am
Last modified: 08 April, 2021, 04:21 pm
যাত্রীদের অনেককেই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানতে। মুখে মাস্ক পরলেও মাঝে মাঝে খুলে রাখেন, তাছাড়া সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে কাউকেই তেমন সচেতন হতে দেখা যায়নি।

করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের তৃতীয় দিন (৭ এপ্রিল) বুধবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে গণপরিবহন চালু হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তোয়াক্কা করেন নি যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। 

স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ বাড়তি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার।

লকডাউনের প্রথম দুই দিনের তুলনায় বুধবার রাস্তায় যানবাহন-যাত্রীর সংখ্যাও ছিল বেশি। গণপরিবহন চালু হওয়ায় ভোগান্তি ও খরচ কমায় সন্তুষ্ট যাত্রীরা। 

রাজধানীর বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, পল্টন মোড়সহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে যাত্রীর চাপ একটু বেশি থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কমতে থাকে। তবে অধিকাংশ বাসেই মোট সিটের অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। তবে বিআরটিসিসহ বেশ কয়েকটি বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়।

যাত্রীদের অনেককেই দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি মানতে। মুখে মাস্ক পরলেও মাঝে মাঝে খুলে রাখেন, তাছাড়া সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে কাউকেই তেমন সচেতন হতে দেখা যায়নি।

বাপ্পি রহমান নামে এক যাত্রী কাওরানবাজার থেকে বাদামতলী যাওয়ার জন্য বাসে উঠেন। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'গত দুইদিন ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসে অফিস করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় ভোগান্তি ছিল। আজ বাস চালু হওয়ায় ভাড়া ৬০% বেশি নিলেও ৫০ টাকার মধ্যে যাতায়াত করতে পারতেছি'।

বাপ্পি বলেন, 'একদিকে করোনা বাড়ছে আমাদের অফিসও করতে হচ্ছে, আবার রাস্তায়ও ভোগান্তি। ঢাকার কোনো বাসেই তো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। কোনো বাসেই স্প্রে করছে না। সবকিছু নিয়ম মেনে চললে তো আর সমস্যা হত না'।

বিকল্প অটো সার্ভিসের সুপারভাইজার রানা, মাস্ক খুলেই যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছিলেন গাড়িতে। কোনো যাত্রীকেই স্প্রে করছিলেন না। তিনি কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করছেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে রানা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা যাত্রীদের স্প্রে করেই বাসে উঠাচ্ছি (সিটের নিচ থেকে স্প্রে হাতে নিয়ে)'। সাথে সাথে মাস্কটিও থুতনি থেকে মুখে পড়ে নেন এরপর।

শুধু একটি বাসেই নয় রাজধানীর প্রতিটি বাসের চিত্র এক।

বিআরটিসি বাসের ড্রইভার রফিকুল হক টিবিএসকে বলেন, 'মাঝে মাঝে অতিরিক্ত গরমের কারণে মাস্ক খুলে রাখি। দু'একজন যাত্রী দাঁড়িয়ে গেলে আমরাও তো বেশি কিছু বলতে পারি না। আমরা যাত্রীদের বারবারই বলি স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব রেখে বসতে'।

শাহবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. নুরন্নবী টিবিএসকে বলেন, 'বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা আমরা তা পর্যবেক্ষণ করছি এবং যারা মানছে না তাদের জরিমানা করাসহ সচেতন করছি'। 

অনেক বাসের ড্রাইভার, হেলপাররা স্প্রে করছে না কিংবা সার্বক্ষণিক মাস্ক পড়ে থাকছে না এগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'প্রতিটি জায়গায় এবং প্রতিটি বাসে তো সম্ভব না আমাদের পর্যবেক্ষণ করা, তারপরেও খেয়াল রাখা হচ্ছে'। 

এদিকে বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হলেও যাত্রী এবং গণপরিবহন দুটোরই উপস্থিতি অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তুলনামুলক কম দেখা গেছে। রাস্তায় নেই আগের মতো যানজট।

চট্টগ্রাম নগরীর একে খান মোড়, জিইসি মোড়, চকবাজার, মুরাদপুর, লালখানবাজারসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দেখা গেছে আগের মতো গাড়িতে উঠতে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি নেই। কিছু কিছু বাসে আসনসংখ্যাও ফাঁকা। টেম্পু, অটোরিকশা চালকরাও যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় আছে।

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে বুধবার সকাল থেকে নগরীতে বাস চলাচল করছে।  বুধবার দুপুর পর্যন্ত সড়কে প্রায় ৩ শ বাস চলাচল করেছে'। 

রাইড শেয়ারিংয়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বিক্ষোভ

এদিকে বুধবারও রাইড শেয়ারিংয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন রাইড শেয়ার করা বাইক চালকরা।  

বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, মগবাজার মোড়, খিলক্ষেত, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে তারা।

রাইড শেয়ার করা জসিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'পকেটে টাকা না থাকলে এসব লকডাউন দিয়ে কি হবে? সিএনজি, প্রাইভেটকার, রিক্সা, বাস সবকিছু চলতে পারলে আমাদের পেটে লাথি মেরে সরকারের লাভ কি? আমাদের চালু করে দিক, আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাইড শেয়ার করবো'।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.