খুলনায় অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিচ্ছে উচ্চবিত্তরা, নিম্নবিত্তরা হতাশ

বাংলাদেশ

ইউএনবি
17 May, 2020, 09:40 am
Last modified: 17 May, 2020, 10:01 am
তারা অনলাইন ক্লাসের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। সংসদ টিভি দেখারই সুযোগ নেই তাদের। সেখানে এন্ড্রয়েড ফোন কেনার সামর্থ্য কোথায় পাবে তাদের পরিবার।

করোনাভাইরাস মহামারিতে খুলনায় চলমান অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে স্মার্টফোন থাকা উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা। আর ক্লাস করা থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ভুগছে নিম্নবিত্ত কিংবা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী পরিবারের শিক্ষার্থীরা।

তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এন্ড্রয়েড ফোন না থাকার কারণে যারা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাচ্ছে না তাদের জন্য বাসায় হ্যান্ড নোট দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

করোনাভাইরাসের এ সময়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকার সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদান কর্মসূচি চালাচ্ছে। এর পাশাপাশি খুলনায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবে নেয়া হচ্ছে ক্লাস। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল প্রাইমারি এডুকেশন খুলনা ও ডিজিটাল সেকেন্ডারি এডুকেশন খুলনা নামে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে চলছে এ কার্যক্রম।

মহানগরীর রায়পাড়া এলাকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানোই কষ্টকর। এমনিতে সন্তানদের কোচিংয়ে দেয়ার মতো টাকা থাকে না। আর অনলাইনে ক্লাস তো দূরের কথা। যারা ধনী তারা ওইসব ক্লাস করুক।'

মহানগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত সিটি গালর্স স্কুলের তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দেড় শ। তার মধ্যে এন্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে ক্লাসের সুবিধা পাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে ২৫ জনের মতো। এ হিসেবে ১৭ দশমিক ৩৬ জনের বাসায় স্মার্টফোন রয়েছে। এ চিত্র প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়েই। এ অবস্থায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হচ্ছে জেলা প্রশাসনের চালু করা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে।

সিটি গার্ল স্কুলসহ অন্যান্য বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন জানান, তারা অনলাইন ক্লাসের কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। সংসদ টিভি দেখারই সুযোগ নেই তাদের। সেখানে এন্ড্রয়েড ফোন কেনার সামর্থ্য কোথায় পাবে তাদের পরিবার।

সিটি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. জিয়াউর রহমান স্বাধীন বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার আগে শিক্ষার্থীদের সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে দারিদ্র্যসীমার নিচের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। সবার জন্য শিক্ষা- এ স্লোগান নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

খুলনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, 'অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই, কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন থাকলেও অর্থাভাবে ইন্টারনেট সেবা নেই। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সেবা থাকা সামান্য কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে এ অনলাইন শিক্ষা আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারছে না। ক্লাসে আই কন্টাক্টে শিক্ষার্থীকে আগ্রহী করা হয়। কিন্তু এ গতানুগতিক অনলাইন শিক্ষায় আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। এর ফলে অনলাইন শিক্ষার সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইন ক্লাসে সাফল্য পাচ্ছে না সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সফল হওয়া দুষ্কর।'

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম সিরাজুদ্দোহা বলেন, 'যেসব শিক্ষার্থীর এন্ড্রয়েড ফোন নেই তারা এ ক্লাসের সুবিধা পাবে না। আর সবাইকে নিয়ে এ চিন্তাও করা হয়নি।'

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোন্দকার রুহুল আমিন বলেন, 'যেসব শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এবং এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন থাকবে তারা এ ক্লাসের সুবিধা পাবে।'

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান বলেন, 'এখন প্রতিটি পরিবারেই এন্ড্রয়েড ফোন আছে। পরিবারের কারও না কারও এ ফোন আছে। আর একেবারে যাদের নেই তাদের বাসায় এ ক্লাসের হ্যান্ড নোট দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।'

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখতে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা চালু করা হয়েছে। সবার কাছে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা নেই তা ঠিক। কিন্তু সংসদ টিভি যত লোক দেখে তার চেয়ে বেশি লোকের হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা আছে।'

তাই সংসদ টিভির চেয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে অনলাইন শিক্ষা বেশি সফল হবে বলে তিনি আশা করেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.