খুলনার কয়রায় বাঁধ ভেঙ্গে দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি

বাংলাদেশ

খুলনা প্রতিনিধি
27 May, 2020, 04:05 pm
Last modified: 27 May, 2020, 04:12 pm
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙ্গে গেছে ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। ১২.৭ কিলোমিটার বাঁধ ধসে গেছে। ৬৩টি স্থানে আংশিকভাবে ভেঙ্গে ২১.১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেড়িবাঁধ সংস্কার করতে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি টাকা।

সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা উপজেলার ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গত এক সপ্তাহ ধরে চারটি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তবে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ইতোমধ্যে স্থানীয়দের সেচ্ছাশ্রম ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আনুমানিক ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

পাউবো সূত্র জানায়, কয়রা উপজেলায় রয়েছে ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ। এরমধ্যে ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে ২৭.৩৭ কিলোমিটার ও ১৩/১৪/২ নম্বর পোল্ডারে ৯১.৯৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে ৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এরমধ্যে ১৪/১ নম্বর ও ১৩/১৪/২ পোল্ডারের ২৫টি স্থান ভেঙ্গে ৫.২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১২.৭ কিলোমিটার বাঁধ ধসে গেছে।

অপরদিকে, ৬৩টি স্থানে আংশিকভাবে ভেঙ্গে ২১.১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কয়রা উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়ন, উত্তর বেদকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের বসতভিটা ও জায়গা-জমি লবণ পানিতে সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। সেখানে দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এছাড়া বাকি তিনটি ইউনিয়নও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু সাঈদ খান বলেন, আইলায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর মানুষ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু আম্পানে ঘর বাড়ি, বাঁধ সবই গেছে।  তাই মানুষের ন্যূনতম আশ্রয় নেওয়ার অবস্থাও নেই।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গফফার ঢালি বলেন, বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনীহার কারণেই কয়রার মানুষকে লোনা পানিতে ডুবতে হচ্ছে। আইলার পর জোড়াতালির কাজ কোনও কাজেই আসেনি। কিন্তু অর্থের অপচয় হয়েছে।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আন্দোলন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে আম্পান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে এখন কয়রার মানুষকে এত ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন। আম্পানের আঘাতে সেই যুদ্ধ আবার নতুনভাবে শুরু করতে হলো।

তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হলে কয়রাবাসীকে বাঁধ ভেঙ্গে আর লবণ পানিতে ডুবতে হবে না।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, আম্পানে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কয়রা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় মানুষের সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কিছু জায়গার বাঁধ সাময়িকভাবে মেরামত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। কয়রাবাসী সরকারের কাছে ত্রাণ চায় না, টেকসই বাঁধ চায়। টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে কয়রাবাসীর দুঃখ ঘুচবে।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, এলাকাবাসী সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য এসেছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের হিসাব-নিকাশ (এস্টিমেট) করছেন। এরপরই তারা মেরামতের কাজ শুরু করবেন।

তিনি জানান, সেনাবাহিনীকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  ১ লাখ ৩৫ হাজার জিওব্যাগ (এক ধরনের কাপড়ের বস্তা) দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ৯০ হাজার জিওব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ৫০-৬০ বছর আগের নির্মাণ করা বেড়িবাঁধ এতদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। এটি সাধারণ জোয়ার-ভাটাতেই ভেঙ্গে যাওয়ার কথা। আমি বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে যে প্রকল্প নিয়েছি, আশা করি তা আগামী বাজেটেই পাশ হবে।

তিনি বলেন, কয়রায় ১২১ কিলোমিটার ও পাইকগাছায় ৬৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়রা-পাইকগাছাবাসীকে পানিবন্দি রাখবেন না। তিনি এখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করবেন। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকেই এই টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.