কে কবে কোথায় কোভিডের টিকা নেবেন, জানানো হবে মোবাইল এসএমএসে

বাংলাদেশ

26 December, 2020, 07:50 pm
Last modified: 26 December, 2020, 07:52 pm
সবাইকে একটি করে টিকা কার্ড দেয়া হবে, যাতে টিকার ব্যাচ নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ থাকবে। এলাকাভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে টিকা দেয়ার জন্য অগ্রাধিকারের একটি তালিকাও করবে সরকার।

কে, কবে কোভিডের টিকা পাবেন, তা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দেবে সরকার। কোন কেন্দ্র থেকে টিকা দেয়া হবে, থাকবে সে তথ্যও। এছাড়া, সবাইকে একটি করে টিকা কার্ড দেয়া হবে, যাতে টিকার ব্যাচ নম্বর, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখসহ বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ থাকবে। এলাকাভিত্তিক আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে টিকা দেয়ার জন্য অগ্রাধিকারের একটি তালিকাও করবে সরকার।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে কোভিডের ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া, অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা, ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য পাশ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা এবং মেডিকেল ওয়েস্ট ডিসপোজালের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

টিকা নিয়ে গুজব প্রতিরোধে মনিটরিং ও প্রতিদিন ব্রিফিং আয়োজন করবে সরকার। 

সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সারাদেশে ইপিআইয়ের এক লাখ ২০ হাজার টিকাদান কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারায় কোভিড ভ্যাকসিন দেয়া হবে। ইপিআইয়ের কেন্দ্রগুলোর বিদ্যমান জনবল দিয়ে মাসে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর মো. শামসুল হক। 

টিকাদান কর্মীরা টিকা পরবর্তী ঝূঁকি ব্যবস্থাপনা, কোল্ড চেইন মনিটরিং, টিকা কার্ড প্রস্তুত করা এবং রেকর্ড সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরিচিত বলে জানান তিনি। খুব শিগগিরই টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

প্রতি ডোজ ৫ ডলার করে সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ এবং ২ ডলার করে টিকার আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা কিনবে সরকার। আগামি জুনের মধ্যে এই টিকা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশকে দেয়া হবে। একই ব্যক্তি যাতে একই কোম্পানির টিকার দুটি করে ডোজ পায়, তা নিশ্চিত করা হবে।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসা শুরু হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা দেবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। কোভ্যাক্সের টিকা জুনের মধ্যে পাওয়ার আশা করছে সরকার।

স্বাস্থ্যকর্মী, করোনা প্রতিরোধে ফ্রন্টলাইনার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যাষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী ও গণপরিবহন কর্মীরা অগ্রাধিকার পাবেন। এদের ডাটাবেজ প্রণয়ণ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তা মনিটরিং করছে। জেলা বা অঞ্চলভিত্তিক আক্রান্তের হার বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকারের তালিকা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ২আই, আইসিটি ডিভিশন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা জনগোষ্ঠীর যে কেউ টিকা নেয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
 
দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ ও একাধিক রোগে আক্রান্ত (Comorbidity ) মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা  মানুষের কোনো তালিকা সরকারের কোন সংস্থার কাছে নেই। এদের তালিকা করা সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে বলে সভায় জানিয়েছেন অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, কাদের কোমরবিডিটি আছে, আর কাদের নেই তা সনাক্ত করা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

টিকার পাশ্বপ্রতিক্রিয়া রেকর্ড সংরক্ষণ এবং তা নিরসনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মনিটরিংয়ের জন্য একটি প্রটোকল তৈরি করবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

সভায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, ভারতের পুনেতে অবস্থিত সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার ভ্যাকসিন দিল্লী এয়ারপোর্ট হয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবে। সেখান থেকে ভ্যাকসিনগুলো বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে রাখা হবে।

তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনার সময়ই ভ্যাকসিনের কার্টনের ভেতর টেম্পারেচার মনিটরিং ডিভাইস থাকবে, যাতে ২০ দিনের কোল্ড চেইনের রেকর্ড সংরক্ষণ হবে। এই সময়ের মধ্যেই বেক্সিমকো তাদের ওয়্যারহাউজ থেকে টিকা জেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেবে। তবে সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর কোল্ড চেইন ব্যাহত হলে তার দায় বেক্সিমকো নেবে না। 

তিনি জানান, অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রতিটি ৫ মিলিলিটারের ভায়াল। প্রতি ডোজে ০.৫ এমএল করে দিতে হবে। অর্থাৎ একটি ভায়ালে ১০টি ডোজ থাকবে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮দিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।  

বেক্সিমকোর কাছ থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার সময় টেম্পারেচার মনিটরিং ডিভাইসে রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা পরীক্ষা করে তা গ্রহণ করবে সরকার। জেলা থেকে উপজেলায় ভ্যাকসিন স্থানান্তরের সময় কুলিং বক্সগুলো ঠিকমত কাজ করছে কীনা, তাও কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। 

অগ্রাধিকারভিত্তিতে যারা টিকা পাবেন, তাদের তালিকা প্রণয়ন ও চূড়ান্ত করা, টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয়, সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে জাতীয় কমিটি, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন এলাকা এবং জেলা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জেলা-উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকার মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে করোনার টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে সেরাম ও কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া টিকা দিয়ে দেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেয়া হবে। পরের ধাপে এ হার ৪০ শতাংশ এবং শেষ ধাপে মোট ৮০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। 

এজন্য প্রায় ২৮ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। তাই আরো ১৯ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ করতে সেরাম ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি রাশিয়ার স্ফুটনিক-৫, সিনোভ্যাকসহ চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.