কুরবানির পশু নিয়ে খামারিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বাংলাদেশ

যশোর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
09 July, 2020, 12:20 pm
Last modified: 09 July, 2020, 04:54 pm
ঈদুল আযহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন খামারিরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের ছোঁবলে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
করোনার কারণে ২৫ মণ ওজনের গরু ‘টাইগারকে’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আবদুল কাইয়ূম। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

যশোর সদরের সুলতানপুর গ্রামের মো. নূরুন্নবী এবার কুরবানি উপলক্ষে ১০টি গরু মোটাতাজা করেছেন। প্রতিদিন গরুর খাবারের পেছনে তার খরচ হচ্ছে অন্তত দুই হাজার টাকা। একই উপজেলার হামিদপুর গ্রামের আসাদুজ্জামান আসাদ পাঁচটি দেশি গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। তিনিও পশুর খাবারের পেছনে খরচ করছেন এক হাজার থেকে ১২শ' টাকা। তাদের আশা ছিল, আসছে কুরবানি ঈদে তাদের গরু ভালো দামে বিক্রি হবে। কিন্তু করোনার ছোঁবলে তারা এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

শুধু ওই দুই খামারিই নয়, যশোর জেলায় এবার কুরবানি উপলক্ষে ১০ হাজার ২৮২টি খামারে ৬৭ হাজার ৯৭৫টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯৭টি এবং ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৩২ হাজার ৯৭৮টি।
 
২০১৯ সালে যশোরে ১০ হাজার ৮২৭টি খামারে ৭০ হাজার ৬২৪টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গরু ছিল ৩১ হাজার ৬২২টি এবং ছাগল-ভেড়া ৩৯ হাজার দুইটি। ২০১৮ সালে সাড়ে ১১ হাজার খামারে ৫৯ হাজার ৫০০টি গরু-ছাগল মোটাতাজাকরণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গরু ছিল ৩৩ হাজার এবং ছাগল ও ভেড়া ছিল ২৬ হাজার ৫০০টি।
 
জানা গেছে, অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কুরবানির পশু পালন করছেন।

এদিকে, করোনার প্রকোপের কারণে ২৫ মণ ওজনের গরু 'টাইগারকে' নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার আবদুল কাইয়ূম। তিন বছর আগে জন্ম নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান জাতের এই গরুর পেছনে এরই মধ্যে তার খরচ হয়েছে অন্তত আড়াই লাখ টাকা।

ভেবেছিলেন এবারের কুরবানি ঈদে ১০ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করবেন। কিন্তু করোনার কারণে মানুষের কাছে টাকার স্বল্পতার কথা চিন্তা করে গরুটির দাম ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এই দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন কি না সে বিষয়ে শঙ্কা রয়েছে তারা।

''যদি করোনাভাইরাসের প্রকোপ না থাকতো, তাহলে টাইগারকে ঢাকা অথবা চট্টগ্রামের বড় পশুর হাটগুলোতে নিয়ে যেতাম। সেখানে টাইগার অন্তত ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সমস্যায় আছেন, সেজন্য আমরা টাইগারের দাম অনেক কম ধরেছি। কিন্তু এরপরও টাইটাগরকে হাটে তুলতে পারব কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি'', বললেন কাইয়ূম।

অধিকাংশ খামারি নিজেদের গচ্ছিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজি বিনিয়োগ করে কুরবানির পশু পালন করছেন। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

ভারত থেকে গরু আমদানি না হলেও করোনার ছোবলে খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কেননা করোনার কারণে ক্রেতা সংকট দেখা দিলে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে খামারিরা।

যশোর জেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, এবারের কুরবানিতে জেলায় ৬০ হাজার গরু ও ছাগলের চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে জেলার আট উপজেলায় ৬৭ হাজার ৯৭৫টি পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে প্রায় আট হাজার গরু ও ছাগল বেশি রয়েছে।

যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের শরিফুল ইসলাম ১৫টি দেশি গরু লালন পালন করছেন। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে তার ব্যয় হয় ১৫০ টাকা করে। গরুকে তিনি খেতে দেন খৈল, ভুসি, কুড়া, ফিড ও কাঁচা ঘাস। গতবার ঈদে ভালো দাম পেয়েছিলেন। ফলে এবারও গরু লালন করেছেন।

তার খামারের গরু মানভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি হবে। তবে করোনার প্রভাব তাকে ভাবাচ্ছে। যদি চাহিদা অনুযায়ী গরু বিক্রি না হয় তাহলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

খামার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভারতীয় গরুর চাপে অন্তত পাঁচ বছর তারা এই খাতে কোনো সুফল পাননি। অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। এবার আঘাত আনতে পারে করোনা।

যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকার গরু ব্যাপারি তুহিন হোসেন (৪৫) বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতারা এবার হাটে আসবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যদি ক্রেতা কম হয় তাহলে খামারিদের পাশাপাশি আমাদেরও লোকসান গুনতে হবে।

যশোর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শফিউল আলম জানান, এবারের কোরবানির ঈদে চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত প্রায় আট হাজার গরু ও ছাগল উদ্বৃত্ত থাকবে। আমরা খামারিদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। কেউ যেন পশুর শরীরে ক্ষতিকারক ইনজেকশন পুশ না করে সেদিকে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে।

''তবে করোনার প্রভাব নিয়ে খামারিদের সঙ্গে আমরাও দুশ্চিন্তায় আছি। যদি খামারিরা লোকসানের শিকার হন তাহলে আগামীতে তারা গরু-ছাগল লালন-পালনে আগ্রহ হারাবেন'', বললেন ডা. শফিউল।  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.