কাউন্সিলরের বিশেষ টোকেনে মিলছে করোনার টিকা, হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ

বাংলাদেশ

07 August, 2021, 01:50 pm
Last modified: 07 August, 2021, 04:04 pm
সকাল ১০ টার দিকে চট্টগ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডের হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,  টিকা প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু সবার হাতেই বিশেষ টোকেন। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে টোকেন বিহীন টিকা প্রার্থীদের চলে যেতে বলা হচ্ছে।

চট্টগ্রামে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে ২৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী ও নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের সরবরাহ করা বিশেষ টোকেন ছাড়া করোনার টিকা মিলছেনা। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টোকেন না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন হাজারো সাধারণ মানুষ।

সকাল সাড়ে ৬ টায় চান্দগাঁও এলাকার টিকা কেন্দ্র সিডিএ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ নারী-পুরুষ আলাদা দুটি লাইনে টিকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। কিন্তু সকাল সাড়ে আটটার দিকে 'কাউন্সিলরের লোক' পরিচয়ে কয়েকজন এসে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষ ও বয়োবৃদ্ধদের সরিয়ে দেয়। 

ভোর পাঁচটা থেকে টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন তালুকদার।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ফেব্রুয়ারি মাসে টিকার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করিয়েছিলাম। কিন্তু মেসেজ আসেনি। তাই আজ জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে সবার আগে এসেছি। কিন্তু কাউন্সিলের লোকজন বলছে টোকেন নিয়ে আসতে হবে; নয়তো টিকা মিলবে না। সরকার এমন কোনো বিশেষ টোকেনের ঘোষণা দিয়েছে বলে আমার জানা নেই।"

টিকাদান কর্মসূচি শুরুর আগে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নারীদেরও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। কিন্তু সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা নিজেদের কাউন্সিলরের লোক পরিচয় দিয়ে বিশেষ টোকেন ছাড়া লাইনে অপেক্ষারতদের বের করে দেন। 

গৃহকর্মী নুরজাহান বলেন, "সকালে কাজে যাওয়ার আগে টিকা দিতে চাইছিলাম। টিভিতে শোনা নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয় পত্র সঙ্গে এনেছি। কিন্তু আমাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে; আমার নাকি টোকেন নাই।"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪ নং চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখানে লাইন ধরার কোনো বিষয় নেই। যাদের টোকেন দেওয়া আছে ওরাই আসবে।"

এই টোকেন কারা পেয়েছে জানতে চাইলে কাউন্সিলর এসরারুল বলেন, "রেজিস্ট্রেশন করে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।"

তবে এ সময় টিকার জন্য  অপেক্ষায় থাকা অন্তত অর্ধশত মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায় ওই বিশেষ টোকেন তাদের কেউ পায়নি।

সেই 'বিশেষ টোকেন'

আইটি প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, "ছোট বোনকে নিয়ে টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু কাউন্সিলেরর লোকজন তাদের পছন্দের মানুষদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। সাধারণ মানুষকে টিকা নেই বা পরে আসুন বলে চলে যেতে বলছে।"

সকাল সাড়ে নয়টায় ৩ নং ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্র আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র গিয়ে দেখাযায় টিকা পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করছে কয়েকশত মানুষ। কথিত ভলান্টিয়াররা তাদের পছন্দের মানুষকে টিকা পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

সকাল ১০ টার দিকে ৭ নং ওয়ার্ডের হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,  টিকা প্রার্থীদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু সবার হাতেই বিশেষ টোকেন। হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে টোকেন বিহীন টিকা প্রার্থীদের চলে যেতে বলা হচ্ছে।

সুফলা চাকমা নামে এক নারী বলেন, "আমরা সরকারি চাকরি করি। ঘোষণা অনুযায়ী এনআইডি কার্ড নিয়ে টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু টোকেন না থাকায় টিকা পাচ্ছি না।"

"কাউন্সিলর যে টোকেন দেবেন তা তো আমাদের জানানো হয়নি। এমনকি একটা ব্যানারো টাঙানো হলেও আমরা জানতে পারতাম"- যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্থানীয়দের সুবিধার কথা বিবেচনা করে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিয়েছি। টোকেনের বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কেনো নির্দেশনা নেই। সাধারণ মানুষের টিকা না পাওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক ও অমানবিক।"

গতকার শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম জানান, ৭ আগস্ট ২৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে গেলেই উল্লেখিত ক্যাটাগরির নাগরিকরা টিকা পাবেন।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.