করোনা পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার আগে এইচএসসি পরীক্ষা, কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া হচ্ছে না
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের স্থগিত হওয়া পরীক্ষার ভবিষ্যত নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তাতেই আছেন। অন্যদিকে এসএসএসি পাশ করা শিক্ষার্থীরাও কলেজে ভর্তি হতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও জানেন না, আদৌ কিছু হবে কিনা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা এবং একাদশ শ্রেণিতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে না তারা।
যার ফলাফল, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং কলেজে ভর্তির বিষয়টি বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক শুক্রবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মহামারির মধ্যেই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু করার বিষয়টি অসম্ভব ছিলো তাদের জন্য।
তিনি বলেন, "পরীক্ষার সময় সারাদেশেই কেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়ো হন। এরফলে ভাইরাস বেশ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেকারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না।"
তিনি বলেন, "পরীক্ষা শুরু করে দিয়ে সবার জন্য করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটা ঝুঁকি আমরা তৈরি করতে পারি না।"
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, "ভর্তি প্রক্রিয়া এখনই শুরু করার মতো কোনো পরিকল্পনা এই মুহুর্তে আমাদের নেই।"
এ বিষয়ে একটা 'ভালো পরিবেশের' অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে পারি। তবে সেক্ষেত্রেও একটা ঝুঁকি থেকে যায়। প্রায় অর্ধকোটি লোকজনকে এটার জন্য স্থান পরিবর্তন করতে হবে।"
এবছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার কথা ছিল। সারাদেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা ঠিক করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পহেলা এপ্রিল থেকেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিলো। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় গত ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর স্থগিত করে দেওয়া হয় এই পাবলিক পরীক্ষাটিও।
অন্যদিকে চলতি বছর দেশের সকল শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় যার মধ্যে পাশ করে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন। এরমধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩১ জন এবং ছাত্র ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮৯২ জন।
পাশ করা এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য। তবে তারা জানেন না, এই অপেক্ষা আর কতো দীর্ঘ হবে।
গতবছর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছিলো পহেলা জুলাই। তবে এবার তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মহামারির মধ্যে অনেক ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। তবে এই পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।"
তিনি বলেন, "পরীক্ষার তারিখ ঠিক করতে আমরা অনেকগুলো পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। তবে মহামারির কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।"
তবে কলেজে ভর্তি না হতে পারলেও সদ্য এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ইতোমধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য অনলাইনে কোচিং শুরু করেছেন। শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘসময় পড়াশোনার বাইরে থাকলে এটা তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সদ্য এসএসসি পাশ করা এরকমই একজন শিক্ষার্থীর নাম সুজাত হোসেন, যিনি বাংলাদেশ ক্যাডেট একাডেমিতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং উচ্চতর গণিতের অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, "করোনাভাইরাসের কারণে আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারি না। কোনো কাজ ছাড়া ঘরে বসে থাকাটাও বেশ কষ্টকর। তাই আমি এই কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি। এখানে পড়ায়ও ভালো। আমার বেশ ভালো লাগে।"
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) মাহবুব হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। সুতরাং বর্তমানে পরীক্ষা নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই।
তিনি বলেন, " আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।"
এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি বলেন, "নতুবা মহামারি শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।"