করোনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৬টি কর্মক্ষেত্রে ৭০ ভাগ শ্রমিক ক্ষতির মুখে

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
07 May, 2021, 11:10 am
Last modified: 07 May, 2021, 11:28 am
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে বৈশ্বিক কর্মঘন্টা কমেছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ। শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন ডাটাবেস না থাকায় কি পরিমাণ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা নির্ণয় করা কঠিন।

রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ ক্ষেত্র, পরিবহনসহ দেশের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে প্রায় ৭০ ভাগ শ্রমিক করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-  বিলস এর একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। 

বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস ২০২১ উপলক্ষে করোনায় শ্রমজীবী মানুষের উপর সৃষ্ট সংকট মোকাবেলা, শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা, অধিকার সুরক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে 'মে দিবসের চেতনা: করোনাকালে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। 

গবেষণায় বলা হয় করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ কর্মীদের মধ্যে ৯৮% রেস্টুরেন্ট কর্মী, ৯০% নির্মাণ শ্রমিক, ৯০% পরিবহন শ্রমিক, ৫৯% বন্দর শ্রমিক, ৫৬% তৈরি পোশাক শ্রমিক এবং ৩১% স্বাস্থ্য কর্মীরা রয়েছেন। 

আলোচনা সভায় করোনাকালে শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক উপস্থাপনায় বিলস্ এর গবেষণা বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'আইএলও'র তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন সময়কালে বৈশ্বিক কর্মঘন্টা কমেছে প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ। বিশ্বের প্রায় ৩০৫ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৩ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন'।

তিনি আরও বলেন, 'শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট কোন ডাটাবেস না থাকায় কি পরিমাণ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা নির্ণয় করা কঠিন। শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার যথেষ্ট ঘাটতি থাকায় শ্রমিকদের অসহায়ত্ব অনেকাংশেই বেড়েছে'।

বিলস্ মহাসচিব ও নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষ কষ্টে আছে এবং তারা তাদের পরিবার নিয়ে শঙ্কিত। সরকারি কর্মচারী ছাড়া বেসরকারি শ্রমিকরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এমন সময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা'। 

স্বাগত বক্তব্যে বিলস্ যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, 'মে দিবসের চেতনা হলো আট ঘন্টা শ্রম, আট ঘন্টা বিনোদন এবং আট ঘন্টা বিশ্রাম কিন্তু মে দিবসের ১৩৫ বছরেও শ্রমিকদের এসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি'।

এসময় তিনি শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

আইএলও সাউথ এশিয়ার ডিসেন্ট ওয়ার্ক টেকনিক্যাল টিমের ওয়ার্কার্স অ্যাক্টিভিস্ট সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, 'মহান মে দিবসের আন্দোলন হয়েছিল আট ঘন্টা কর্মঘন্টার দাবিতে কিন্তু লকডাউনে সরকারের যেখানে কর্মঘন্টা কমানোর কথা সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আইনের বিধান হচ্ছে জনগুরুত্বপূর্ণ হলে অব্যাহতি দেয়া যাবে। এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হওয়া দরকার'।  

শ্রমিকরা করোনা ভীতি উপেক্ষা করে কাজ করলেও মালিকরা তাদের মজুরি দিতে বিলম্ব করে উল্লেখ করে শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা যেন চাকরি না হারায় এবং বেতন বোনাস যেন ঠিকমত পায় সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার জন্য মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন বলেন, 'শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে তাই তাদেরকের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে'। ভ্যাকসিন নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বিলস্ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল এর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাকিল আখতার চৌধুরী প্রমুখ।  
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.