করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় কমেছে ৮০ শতাংশ: গবেষণা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
26 June, 2020, 08:35 am
Last modified: 26 June, 2020, 09:01 am
গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ এই দুটি অনুষ্ঠান দেখছে এবং ১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে। যারা টিভি ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে তারা আবার টেলিভিশনে ক্লাস অনুসরণ করাকে বেশ কঠিন বলে মনে করছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় ৮০ শতাংশ কমেছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে গবেষণার এসব ফল তুলে ধরা হয়।

বিআইজিডি বলছে, আগে যেখানে গ্রামের শিক্ষার্থীরা দিনে স্কুল, কোচিং ও বাড়িতে নিজেদের পড়ালেখা মিলে ১০ ঘণ্টা ব্যয় করত, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র ২ ঘণ্টায়, অর্থ্যাৎ ৮০ শতাংশ সময় কমেছে পড়াশোনার।

তারা আরও বলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে নিজেদের পড়াশোনার সময় বৃদ্ধি হওয়ার কথা থাকলেও বাড়িতে শিক্ষার্থীদের নিজেদের পড়ালেখার হার কমেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে সরকারিভাবে টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও শিক্ষার্থীরা খুব বেশি মানিয়ে নিতে পারেনি।

গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে 'ঘরে বসে শিখি' ও 'আমার ঘরে আমার স্কুল' এই দুটি অনুষ্ঠান দেখছে এবং ১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে। যারা টিভি ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে তারা আবার টেলিভিশনে ক্লাস অনুসরণ করাকে বেশ কঠিন বলে মনে করছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময় পড়াশোনার সময় কমার বিপরীতে বেড়েছে শিশু শ্রমের হার।

গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আগে যেখানে ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ২ ঘণ্টার বেশি আয়মূলক কাজে জড়িত ছিল এখন তার হার দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে। এই তথ্যগুলো গ্রামের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছে। শহরের বস্তি এলাকাও চিত্রটা মোটামুটি একইরকম।

বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, 'আমাদের দেশের মূল শক্তি হলো কম্যুনিটি-ভিত্তিক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ। মহামারি-সৃষ্ট অনেক সমস্যা মোকাবেলায় আমাদের এই মূল শক্তিটিকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। সেটা হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পে কিংবা, শিক্ষাখাতে ডিজিটাল ব্যবস্থার উদ্ভাবনে। আমাদের অবশ্যই হাতে হাত মিলিয়ে এব্যাপারে কাজ করতে হবে। কম্যুনিটি-নির্ভর বহুমাত্রিক পদক্ষেপ যা এনজিওগুলোর উদ্যোগে পরিচালিত এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থার উদ্ভাবনে সরকারি নীতিকে আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারের শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থায় থাকা বাধাগুলোকে এভাবেই অপসারণ করা প্রয়োজন।'

গবেষক নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, 'বাংলাদেশের শিশুদের পড়াশুনায় ব্যয় করা সময় ১০ ঘন্টা থেকে কমে ২ ঘন্টায় নেমে গেছে। গ্রামের বাচ্চারা এখন পরিবারের কাজের পিছনে দ্বিগুণ সময় ব্যয় করছে। শিক্ষামূলক কার্যক্রমে সময় না দিয়ে অ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমে বেশি সময় দেয়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পূরণ করা কষ্টসাধ্য- বাস্তবে, স্কুল বন্ধ হওয়ায় ৬ ঘন্টা বা ৫০% বেঁচে যাওয়া সময় আমাদের গবেষণায় 'অ-গ্রহণীয়'। পরবর্তী ধাপে, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করব।'

করোনা প্রাদুর্ভাবে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং কবে থেকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব ও অনলাইনে পাঠগ্রহণের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা কীভাবে মানিয়ে নিতে পারছে তা দেখতে এই গবেষণাটি করেছে বিআইজিডি।

মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ, বিআইজিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মনতাজিমা তাসনিম এবং রিসার্চ ইন্টার্ন ফারজিন মুমতাহেনা বাংলাদেশের শহরের বস্তি ও গ্রাম এলাকার ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণাটি করেছেন।

ওয়েবিনারে অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ গবেষণায় প্রাপ্ত ফল উপস্থাপন করেন। পরে প্যানেল আলোচনা ও উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন আলোচকেরা।

ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, ব্র্যাক শিক্ষা কার্যক্রমের পরিচালক ড. শফিকুল ইসলাম, ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট (বিআইইডি) এর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.