ওষুধ রপ্তানিতে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রামের এলবিয়ন গ্রুপ

বাংলাদেশ

13 August, 2021, 09:45 am
Last modified: 13 August, 2021, 09:49 am
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, আমদানিকারক দেশ থেকে প্রথম চালানের অগ্রিম ২০ শতাংশ অর্থ দেশে পৌঁছে গত ৯ জুন।

ওষুধ খাতে দেশে নতুন রপ্তানিকারক হিসেবে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রামের এলবিয়ন (Albion) ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। এলবিয়ন গ্রুপের সহযোগী এ প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির অপেক্ষায় রয়েছে ৬৬ হাজার ৬৯০ ডলারের ওষুধ। আগামী মাসেই আফগানিস্তানের কাবুলের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথম চালানের জাহাজীকরণ সম্পন্ন হবে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি আদর্শ উৎপাদন চর্চা (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস বা জিএমপি) সনদ অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর গত ২৯ মে রপ্তানির ব্যাপারে নিশ্চয়তা মেলে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমদানিকারক দেশ থেকে প্রথম চালানের অগ্রিম ২০ শতাংশ অর্থ দেশে পৌঁছে গত ৯ জুন।

আফগানিস্তান ছাড়াও ইয়েমেনে ৫৩ হাজার ৬৫০ ডলারের ১০টি ওষুধ পণ্যের রপ্তানি সংক্রান্ত ইনভয়েস ইস্যু হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহে এলবিয়ন থেকে ওষুধ রপ্তানির ঋণপত্র খুলবে ইয়েমেন। ইয়েমেনের এডেন সি-পোর্টের উদ্দেশ্যে ওষুধের চালানটি আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে এলবিয়ন কর্তৃপক্ষ।

এরপর কম্বোডিয়া, মিয়ানমার ও ভুটান এ তিনটি দেশে ওষুধ রপ্তানির একেবারে দ্বারপ্রান্তে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ। বর্তমানে এই তিন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পক্রিয়া চলছে।

এলবিয়নের উৎপাদিত ওষুধের বিদেশে জেনেরিক নামের পাশাপাশি ব্র্যান্ডেড নামও থাকবে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য সীতাকুণ্ডে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে এলবিয়ন। প্রায় ৪৫০টি মানবস্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট ওষুধের আইটেমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। এছাড়া নতুন পণ্য হিসেবে রয়েছে ওয়ানটাইম ইনজেকশন সিরিঞ্জ, ড্রপ, ইনজেকটেবল আইটেম।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১২৩টি দেশে মোট ১৬৯ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে। গত অর্থবছরে মিয়ানমারে ওষুধ রপ্তানি হয়েছে ১৮ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলারের। ১৫ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে এরপরেই আছে শ্রীলঙ্কা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত এক হিসাবে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার ওষুধ বাজারে বাংলাদেশের অংশ ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর মিয়ানমারের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ দখল বাংলাদেশি ওষুধের।

ওষুধ রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আমদানিকারক দেশের ডাটা পর্যালোচনা করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের একটি ছকও তৈরি করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে পর্যায়ক্রমে আমদানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। পরের ধাপে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সুদান, ঘানা, সোমালিয়া, ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া। এছাড়া মালয়েশিয়ার ওষুধের বাজারে চীনের দাপট কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী কুয়ালালামপুরও। এ কারণে দেশটিকেও গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছে এলবিয়ন। এজন্য বাজারটিতে প্রবেশের তথ্য বিশ্লেষণ করছে এলবিয়নের রিসার্চ টিম। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোয়ও ওষুধের বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে এলবিয়নের।

এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক প্রথম ওষুধ রপ্তানিকারক হিসেবে যাত্রা শুরু করতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দের। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজার হওয়ায় রপ্তানিতে লাভের পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার চায় বিদেশে বাংলাদেশি ওষুধের প্রসার বাড়ুক। এ জন্য সরকার থেকে ওষুধ রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হয়। আমরাও তাই ধীরে ধীরে আমাদের রপ্তানিবাজারকে উন্মুক্ত করব। তাছাড়া রপ্তানির তালিকায় নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নাম থাকাও সম্মানের।'

এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজের কর্মকর্তারা জানান, একাধিক দেশে রপ্তানির জন্য মনোনীত কিংবা স্বীকৃতি পাওয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। উৎপাদন কার্যক্রমে অনুসরণ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞায়িত জিএমপি। যথাযথ মান যাচাইয়ের পরীক্ষায় পাস করেই এবং বৈশ্বিক ওষুধ খাতের বড় কিছু সনদ অর্জন করেই তাদের ওষুধ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। স্পর্শকাতর পণ্য হওয়ায় আমদানিকারকে দেশের ছাড়পত্র পাওয়া যেমন দুরূহ, তেমনি সময়সাপেক্ষ।

এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত

১৯৯১ সালে ১০০ জন কর্মী নিয়ে ছোট পরিসরে ১৫ ক্যাটাগরির ওষুধ উৎপাদন শুরু করে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় ভাড়া করা ভবনে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই শুরুটা হয়েছিল মো. নেজাম উদ্দিনের হাতে। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তখন ব্যবসা পরিচালনার আসনেও বসেন তিনি।

দ্বিতীয় প্রজন্ম অর্থাৎ নেজাম উদ্দিনের সন্তানরা ব্যবসায় যুক্ত হন মূলত ২০০৬ সাল থেকে। বড় ছেলে রাইসুল উদ্দিন সৈকত অস্ট্রেলিয়ায় কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে দ্রুত দেশে ফিরেই কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন পরিকল্পনায় বদলাতে থাকে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ধরন। রপ্তানিতে নিজেদের জানান দেয়াও এ পরিবর্তনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি বড় ধরন।

বর্তমানে রাইসুল উদ্দিন সৈকত এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেজাম উদ্দিনের দ্বিতীয় ছেলে মুনতাহার উদ্দিন সাকিব মালয়েশিয়ায় চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পড়াশোনা শেষ করে কোম্পানিতে যোগ দেন ২০১২ সালে। বর্তমানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ছোট মেয়ে তাসনুভা আফরিন নিজেই একজন ফার্মাসিস্ট। তিনি বর্তমানে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ওষুধ উৎপাদনে ব্যবসার পরিসর বাড়লে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ডে ৫০ হাজার বর্গফুটের জায়গায় শুরু হয় ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রম। ওষুধ রপ্তানির পরিকল্পনা নেয়ার পর থেকে অবকাঠামো সুবিধা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা গেলে বর্তমানে পরিধি আরো বাড়ানো হয়। ১ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে এলবিয়ন গ্রুপ। ১০০ জনের সেই কারখানায় এখন তিন হাজার জনের সরাসরি কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিটেড উৎপাদনের যাওয়ার পর।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.