এবার রাজশাহীতে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব

বাংলাদেশ

নুরুল আমিন
23 January, 2020, 11:15 am
Last modified: 23 January, 2020, 04:38 pm
রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের ল্যাবরেটরি কার্যালয়ে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি ফরেনসিক ল্যাবটির উদ্বোধন করবেন আইজিপি। এর ফলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ঢাকায় পাঠাতে হবে না।

ঢাকা, চট্টগ্রামের পর এবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) রাজশাহীতে চালু করছে ফরেনসিক ল্যাব। এর ফলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত ঢাকায় পাঠাতে হবে না।

রাজশাহী পুলিশ লাইন্সের ল্যাবরেটরি কার্যালয়ে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী ফরেনসিক ল্যাবটির উদ্বোধন করবেন।

এই ল্যাব চালু হলে  রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সকল মামলার আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী সনাক্ত ও মামলা তদন্তে গতি আসবে বলে মনে করছেন সিআইডির কর্মকর্তারা।

সিআইডি সূত্র জানায়, ক্লুলেস বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদঘাটন ও বিভিন্ন আলামত, ডিএনএ ও সাইবার টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষার জন্য সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা রহস্য উদঘাটনে ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে যোগাযোগ করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এতে সময় বেশি প্রয়োজন হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট দিতেও দেরি হয়। ফলে মামলার তদন্ত কাজ আটকে থাকে। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে একটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিআইডির ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ল্যাবটির যাত্রা শুরু হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর সকল পরীক্ষা সেখানেই করতে পারবে। তাদের ঢাকায় আসার প্রয়োজন হবে না। সময় বাচবে এবং তদন্ত কাজও এগিয়ে চলবে।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষাগারটিতে রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, অনু বিশ্লেষণ, ফুট প্রিন্ট ও জালনোট শনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা, নারকোটিক ও এসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি আইটেম পরীক্ষা করা হবে।

রাসায়নিক পরীক্ষাগারের মধ্যে রয়েছে সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে উত্তোলিত হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিষ্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল, জিএসআরসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মতামত দেওয়া।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট শাখার মধ্যে রয়েছে ক্রাইমসিন থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙ্গুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া এবং সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ল্যাটেস্ট প্রিন্ট এএফআইএস ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিলবা অমিল সম্পর্কে মতামত দেয়া।

হস্তলিপি শাখার কাজ হচ্ছে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিবাদমান দলিলের লেখা বা স্বাক্ষর জাল, নম্বর ঘষামাজা করে বা রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে মতামত দেয়া।

জালনোট ও মেকিমূদ্রা শাখার কাজ হচ্ছে দেশি-বিদেশি সকল কারেন্সি নোট ও কয়েন বা ধাতব মূদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটের দৃশ্য-অদৃশ্যমান বৈশিষ্টগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে মতামত দেওয়া।

ফটোগ্রাফি শাখার কাজ হচ্ছে অপরাধীদের ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ, ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ করা এবং বিতর্কিত ছকিবর সঙ্গে নমুনার মিল আছে কি না তা বিশ্লেষণ করে মতামত দেওয়া।

ব্যালিস্টিক শাখার কাজ হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধারকৃত বা অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ফায়র্ড বুলেট বা এসবের কোনো অংশ বিশেষ পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞ মাতামত দেওয়া।

অনুবিক্ষণ শাখার কাজ হচ্ছে গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, ট্রেড মার্ক তৈরিকারি দেশের নাম এবং কোনো ধাতব বস্তুও উপর থেকে মুছে ফেলা/বিকৃত করা, ক্রমিক নম্বর সংখ্যা বা যে কোনো চিহ্ন পরীক্ষা করে মতামত দেওয়া।

পদচিহ্ন শাখার কাজ হচ্ছে পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া।

এছাড়া ক্রামসিন ইউনিট অপরধের স্থল পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন, সংরক্ষণ করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.