উত্তাল সাগর: কক্সবাজারে ১২ গ্রাম প্লাবিত

বাংলাদেশ

24 July, 2021, 09:15 pm
Last modified: 24 July, 2021, 09:22 pm
বাংলাদেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও রয়েছে ঝুঁকিতে।

লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বাড়ন্ত জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

উত্তাল সাগরে জোয়ারের পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে কক্সবাজার সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্টের প্রায় ১৫০ মিটার অংশের বালিয়াড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে বিমান বাহিনীর স্থাপনা। উপড়ে গেছে অসংখ্য ঝাউগাছ। জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙ্গে পড়েছে কক্সবাজার হিমছড়ির পরিত্যক্ত মাধবী রেস্টহাউসটি।

শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুরের জোয়ারের সময় এসব প্লাবন ও ভাঙনের ঘটনাগুলো ঘটে। 

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সৈকত এলাকা, কুতুবদিয়ার প্লাবিত গ্রামগুলো পরিদর্শন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বৈরী আবহাওয়া ও পূর্ণিমার প্রভাবে বাড়ন্ত জোয়ারের পানিত কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের বারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ২৪ জুলাই (শনিবার) দুপুরে পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। 

স্থানীয় সূত্র জানায়, চলিত বছরের মে মাসের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ একদম বিলীন হয়ে যায়। এসময় ইউনিয়নের বায়ু বিদ্যুৎ এলাকার সাইট পাড়া, কিরণ পাড়া, কাজীর পাড়া, নাছিয়ার পাড়া, তেলিয়াপাড়া, হাদার পাড়াসহ প্রায় ১২ গ্রামের ৫০০ ঘর বাড়ি পানিতে বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন এসব এলাকায় বসবাসরত মানুষ।

ছবি: টিবিএস

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে গেলেও ভাঙা বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে, শনিবারের পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে আবারও প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বসতবাড়ি, দোকান পাট ও চাষাদের জমি। বাংলাদেশের একমাত্র বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও রয়েছে ঝুঁকিতে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, 'দেড় মাস আগে ঘূর্ণিঝড়ে আমার ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। অনেক কষ্ট করে মেরামত করেছি। কিন্তু আবারও নোনা পানি ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এর একটা স্থায়ী সমাধান চাই।'

আলী আকবর ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিকদার বলেন, 'জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ দেওয়ার জন্য স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও জেলা আ'লীগের সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, কিন্তু ঠিকাদার বেড়িবাঁধ মেরামতও করেনি জিওব্যাগও দেয়নি। তাই তিনটি ওয়ার্ড আবারও প্লাবিত হয়েছে। ঠিকাদারের গাফিলতির কারনে এ সমস্যা হয়েছে।কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে  ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন।'

ইউএনও নুরের জামান চৌধুরী বলেন, 'উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে জরুরি ত্রাণ সহায়তার চাহিদাপত্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে।'

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, 'পূর্ণিমার জোয়ার ও লঘুচাপের ফলে সাগরে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ডায়াবেটিক পয়েন্টে সৈকতের ২০০ মিটার অংশ সাগরে বিলীন হয়েছে। ইয়াসের সময় বিলীন হওয়া কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কিছু বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকেছে বলে খবর পেয়েছি। কক্সবাজার সৈকত এলাকায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে প্রতিরক্ষা কাজ এবং কুতুবদিয়াতেও দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আমিন আল পারভেজ বলেন, 'সৈকতের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এমনভাবে মেরামত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন ভবিষ্যতে আর ক্ষয়ক্ষতি না হয়।'

ছবি: টিবিএস

এদিকে, সাগরের জোয়ারের ঢেউয়ের তোড়ে ধসে পড়েছে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডের হিমছড়িস্থ জেলা পরিষদের রেস্ট হাউস 'মাধবী'। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে রেস্ট হাউস ভবনটি ধসে পড়ে বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা।

জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিন বছর আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে হঠাৎ সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভবনটি ধসে পড়ে। ধসে পড়া ভবনের বিভিন্ন অংশ আটকে আছে জিও ব্যাগে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সূত্রে জানা গেছে, লঘুচাপের কারণে ৩ নম্বর স্থানীয় সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকার পাশাপাশি বাতাসও রয়েছে। আগামী কয়েকদিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.