উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ৪টি ওয়ার্ডকে 'রেড জোন' ঘোষণা
কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত ৪টি ওয়ার্ডকে করোনা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে 'রেডজোন' ঘোষণা করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হলো ২, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর। মঙ্গলবার (১ জুন) রাত ১২টা থেকে আগামী রোববার ৬ জুন পর্যন্ত এসব ওয়ার্ডে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর থাকবে।
উখিয়ার ইউএনও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও জানান, হঠাৎ করে উখিয়া ক্যাম্প ও নিকটবর্তী এলাকায় করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ কারণে ২৩মে থেকে উপজেলার জনবহুল এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এরপরও থামছে না করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বমুখীতা। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে করোনার বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়া ক্যাম্প এলাকার ৪টি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। লকডাউন ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ চলাকালে কোভিড-১৯ বিষয়ক সরকারের সকল বিধি নিষেধ, স্বাস্থ্য বিধি সকল পর্যায়ে মানতে বাধ্য করা হবে। পুরো উপজেলায় এ নিয়ন্ত্রণ আগামী ৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ইউএনও নিজাম আরো জানান, এ সময় উখিয়া উপজেলায় কোন মানুষ বাইরে থেকে এসে প্রবেশ করতে পারবেনা। আবার উখিয়া উপজেলা থেকে কোন মানুষ কঠোর নিয়ন্ত্রণ চলাকালে বাইরে যেতে পারবেনা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উখিয়া উপজেলার সকল সীমান্ত ও উপজেলার সর্বত্র আইনশৃংখলা বাহিনী রাতদিন বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন ইউএনও।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে সরাসরি কোন বাস চলাচল করতে পারবেনা জানিয়ে ইউএনও বলেন, ঔষুধ ও অত্যাবশ্যকীয় দোকান ব্যতীত কোন দোকান খোলা রাখা যাবে না।
উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে লকডাউন ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ চলাকালে ক্যাম্প সমূহে জরুরী বিষয় ছাড়া সবকিছুর যাতায়াতও বন্ধ থাকবে। এসময় ক্যাম্প থেকে কোন শরণার্থী বা স্থানীয় মানুষ প্রবেশ করতে পারবেনা। আবার ক্যাম্প থেকেও কোন স্থানীয় মানুষ বা শরণার্থী লকডাউন চলাকালে বাইরে যেতে পারবেনা। একইভাবে এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে শরণার্থীরাও আসা যাওয়া করতে পারবেনা।
লকডাউন ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ চলাকালে জরুরী ও অত্যাবশ্যকীয় কর্ম, খাদ্য, চিকিৎসা ব্যতীত এনজিও, আইএনজিও, জাতিসংঘের সংস্থাসহ ক্যাম্পসমূহে কর্মরত সংশ্লিষ্ট সকলের গাড়ি চলাচল ও আসা যাওয়া কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আগে গৃহীত কার্যক্রম সমূহ আরো জোরদার করা হয়েছে।
ইউএনও নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ও উখিয়ায় করোনা সংক্রমণ আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে লকডাউন ঘোষণা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ক্রমাগত করোনা সংক্রমণ বাড়ায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় রাজাপালং ইউনিয়নের ২,৫,৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ওয়ার্ডগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত বা কাছাকাছি এলাকা। করোনা সংক্রমণ রোধে সব ধরনের কঠোরতা পালন করা হচ্ছে।
এদিকে, ৩১ মে পর্যন্ত উখিয়া উপজেলায় ২ হাজার ২৬৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এটি কক্সবাজার জেলার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। আক্রান্তদের মধ্যে স্থানীয় নাগরিক ১ হাজার ২৫০ জন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ১ হাজার ১৪ জন।