আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশীয় বাজারে দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড ছাড়িয়েছে পাম অয়েল!

বাংলাদেশ

19 April, 2021, 02:20 pm
Last modified: 19 April, 2021, 04:07 pm
বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪১০০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের শেষ দিকে (বুধবার পর্যন্ত) ৩৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রতিমণ পাম অয়েলের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভোগপণ্যের বাজারে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। সাধারণত প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয় ২০০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪১০০ টাকায়। 

পাইকারি কিংবা খুচরায় এতো বেশি দামে এর আগে কখনো পাম অয়েল বিক্রি হয় নি। সর্বশেষ গত তিন দিনে পণ্যটির দাম মণে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। 

আর্ন্তজাতিক বাজারে বুকিং দর কমতে শুরু করলেও আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের। 

ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪১০০ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহের শেষ দিকে (বুধবার পর্যন্ত) ৩৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ পাম অয়েলের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বর্তমানে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪১০০ টাকা, এস আলম ৪০৯০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪০৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

একই সময়ে বাজারে পাম সুপার অয়েলের দামও মণপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে বাজারে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪১৫০ টাকা দামে। যা বর্তমানে ৪৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতিমণ বে ফিশিং ৪৩৫০ টাকা, এস আলম ৪৩৪০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

তবে বিক্রি কম থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে সয়াবিন তেলের দাম। গত দুই সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ সয়াবিন তেল ৪৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে পাম অয়েলের বাজার নিম্মমুখী। মালেয়শিয়ায় এখন নতুন মৌসুমের পাম বাজারে আসছে। এতে গত দুই সপ্তাহে মালেশিয়ায় প্রতিটন পাম অয়েলের দাম কমপক্ষে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। দুই-তিন সপ্তাহ আগে যেই পাম অয়েলের বুকিং দর ৪২০০ রিঙ্গিত (টনপ্রতি) ছিল তা এখন ৩৭০০ রিঙ্গিতে চলে এসেছে। এরপরও দেশীয় আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে চলছে। 

খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "দেশীয় বাজারে পাম অয়েলের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। আর্ন্তাজাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দরও আগের চেয়ে কমে আসছে,কিন্তু এরপরও আমদানিকারকরা প্রতি সপ্তাহে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে চলছে।"

 অস্বাভাবিক মুনাফা করতে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে চলছে বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ীসহ আরো অনেক ব্যবসায়ী।

ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, আর্ন্তজাতিক বাজারে ২০১৯ সালের সেপ্টম্বর থেকে পাম অয়েলের বাজার বাড়তে শুরু করে। ওই সময় প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ২৪২৮ রিঙ্গিতে। দফায় দফায় বেড়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪১১৬ রিঙ্গিতে। তবে এরপর পণ্যটির দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মূলত নতুন মৌসুমের পাম বীজ উঠার পর থেকে পণ্যটির দাম পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

এমপিওসি ডট অর্গানাইজেশন ডট মাই এর তথ্যমতে, মালেয়শিয়াতে গত ১৫ এপ্রিল প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৩৮০৭ রিঙ্গিতে। যা ১২ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩৬৫০ রিঙ্গিতে। মাসের শুরুর দিকে অর্থাৎ ২ এপ্রিল মালেশিয়ায় পাম অয়েলের বাজার দর ছিল ৩৭৩৭ রিঙ্গিত। 

আর্ন্তজাতিক বুকিং দর ৩৭০০-৩৮০০ হিসেব করলে প্রতিটন পাম অয়েলের বাজার মূল্য (১ রিঙ্গিত =২২ টাকা) দাঁড়ায় ৮১৪০০-৮৩৬০০ টাকা। এর সাথে ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করলে প্রতিটন পাম অয়েল আমদানিতে মোট খরচ হয় ৯০০০০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতিমণ (৪০.৯০ লিটার) পাম অয়েলের মূল্য দাড়াঁয় সর্বোচ্চ ৩৬৮১। অর্থাৎ মণপ্রতি ৩৬৮১ দামে কেনা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪১০০ টাকা দরে। সেই হিসেবে, প্রতিমণ পাম অয়েলে ৪১৯ টাকা মুনাফা করছে আমদানিকারকরা। 

গিয়াস উদ্দিন নামে খাতুনগঞ্জের একজন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, "যখন আর্ন্তজাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম ৪১০০ রিঙ্গিতে ঠেকে তখন দেশিয় বাজারে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ৩৮০০ টাকার মধ্যে। আর এখন দাম কমে ৩৭০০ রিঙ্গিতে আসলেও দেশিয় বাজারে দাম না কমে উল্টো আরো ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে।"

দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্ব জিৎ সাহা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আন্তজার্তিক বাজারে সব তেলের বুকিং দর বাড়তি। আর্ন্তজাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতিটন সয়াবিন বর্তমানে ১৩৬৩ ডলার ও পাম অয়েল ১০৮০ ডলারে বুকিং চলছে। এরপরও মিল গেটে আমরা সরকার নির্ধারিত দামে অর্থাৎ প্রতি লিটার সয়াবিন ১১৫ টাকা এবং পাম অয়েল ১০৪ টাকায় বিক্রি করছি। মিল গেটের বাইরে কিংবা খাতুনগঞ্জে কোন ব্যবসায়ী এর বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করলে এই দায় আমাদের না।"

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের গেল নয় মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। গত অর্থ বছরের একই সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯০ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন। 

গত অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৩ মেট্রিক টন। চলতি বছরের এক সময়ে সয়াবিন আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। 

আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ছেনা কেন তা জানতে চাইলে ক্যাবের সহ সভপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, "আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়তি থাকার সময় সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছিল।" 

আর্ন্তজাতিক বাজারে বুকিং দর অনেক কমে যাওয়ায় এই সময় তেলের দাম পুনঃনির্ধারণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.