আরব আমিরাতের ‘গ্রিন ভিসা’: বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ

বাংলাদেশ

09 October, 2021, 08:30 pm
Last modified: 09 October, 2021, 08:30 pm
বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনরা বলছেন, জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে উদ্যোগী না হয়, তবে এই সুযোগটি হাতছাড়া হতে পারে।

দক্ষ বিদেশি শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নিয়েছে নতুন অর্থনৈতিক উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগকে পুঁজি করে বিদেশে শ্রমিক রপ্তানির সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। তবে সবই নির্ভর করছে, শ্রমিক রপ্তানিকারক দেশটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে তার দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে কতটা প্রস্তুত তার উপর।

বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনরা বলছেন, জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে উদ্যোগী না হয়, তবে এই সুযোগটি হাতছাড়া হতে পারে।

বিশ্ব প্রতিযোগিতায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের জন্য কঠোর আবাসিক নিয়ম নীতিগুলোকে সহজ করার এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। দেশটি গ্রিন ভিসা চালু করার এবং গোল্ডেন ভিসার জন্য যোগ্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।  

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক কাজ করছেন; দেশটি বাংলাদেশী শ্রমিকদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্যস্থল। বেসরকারি এক হিসাবে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশই অদক্ষ এবং নির্মাণ ও সেবা খাতে কম মজুরিতে কাজ করেন।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)-এর সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা এখন ম্যানুয়াল কাজে নিয়োজিত হওয়ায় ৮০০ থেকে ১২০০ দিরহাম বেতন পাচ্ছেন, যা অনেক কম।"

তিনি বলেন, "যদি আমরা উপসাগরীয় দেশগুলোতে তাদের নতুন অর্থনৈতিক উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারি, তাহলে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।"

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের দূতাবাসকে এখন সেই সেক্টরগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে, যে সেক্টরগুলোয় আগামী বছরগুলোতে শ্রমিকের প্রয়োজন দেখা দেবে। চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে, বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে দুটি নতুন ভিসা বিভাগ তৈরি করবেন তারা; একটি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এবং আরেকটি উদ্যোক্তা এবং দক্ষ কর্মীদের জন্য। দক্ষ বিদেশি কর্মীদের আকৃষ্ট করতে ও ধরে রাখতেই, দেশটিতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিদেশিদের সাধারণত নবায়নযোগ্য ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে, যা চাকুরির সুবাদে কয়েক বছরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন কর্মীরা।

তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে দক্ষ কর্মীদের জন্য নতুন "গ্রিন ভিসা" ইস্যু করা হবে, যেখানে তাদের পরিবারের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম নীতিকে আরও সহজ করা হয়েছে এবং এই ভিসার আওতায় একটি চাকরি শেষ হওয়ার পরে নতুন চাকরি খুঁজতেও আরও বেশি সময় পাবেন তারা।

গত বছর, সংযুক্ত আরব আমিরাত "গোল্ডেন ভিসা" নামের আরও একটি নতুন ভিসা ব্যবস্থা চালু করেছিল; এই ভিসা ব্যবস্থা দেশটিতে ১০ বছরের আবাসন সুবিধা প্রদান করে। সে সময় দুবাই বলেছিল, এই পদক্ষেপটি আমিরাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।

২০১২ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বন্ধ থকলেও, ভ্রমণ ভিসা নিয়ে দেশটিতে যাওয়ার পর শ্রমিকরা সেখানে নিজেদের কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে পারেন।

শামীম বলেন, "তিন মাসের ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কিছু দেশ থেকে কর্মীদের সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারপরে তারা এটিকে একটি ওয়ার্কিং ভিসায় রূপান্তর করতে পারেন এবং নিয়োগদানকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুসারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তারা সেখানে থাকতে পারেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মতে, কমপক্ষে ৪৭ শতাংশ বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী অদক্ষ বলে বিবেচিত এবং এই প্রবাসীরা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম অর্থ উপার্জন করে থাকেন, যা বাংলাদেশের কর্মী প্রতি রেমিট্যান্সকে সর্বনিম্ন করে তোলে।

আইওএমের তথ্য অনুসারে, একজন বাংলাদেশী প্রবাসীর পাঠানো গড় মাসিক রেমিট্যান্স ২০৩.৩৩ ডলার বা ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা, যেখানে ফিলিপাইনের একজন কর্মীর গড় বেতন ৫৬৪.১ ডলার। একজন বাংলাদেশীর তুলনায় তারা দ্বিগুণ অর্থ উপার্জন করছে।

এছাড়া, একজন পাকিস্তানি প্রবাসীর মাসিক গড় আয় ২৭৫.৭৪ ডলার, একজন ভারতীয় কর্মীর বেতন ৩৯৫.৭১ ডলার এবং একজন চীনা নাগরিকের প্রতিমাসের আয় ৫৩২.৭১ ডলার।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটারি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, "বর্তমানে আমাদের যথেষ্ট দক্ষ শ্রমিক নেই। সুতরাং, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন সুযোগকে আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কাজে লাগাতে সক্ষম হব না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা দক্ষ শ্রমিক উৎপাদন করতে পারছি।"

তিনি বলেন, "যেহেতু আমাদের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আলাদা, তাই হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী কারিগরি প্রশিক্ষণ পায়। আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের একটি বড় অংশ প্রশিক্ষণহীন এবং অদক্ষ; তাই গন্তব্য দেশগুলোর নিয়োগকর্তারা এই মানুষদের থেকে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন।"

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এসএসসি স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই শিক্ষাকে অবশ্যই বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গত অর্থবছরে, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা ২ হাজার ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে, যা সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.