আরও পাঁচ ভ্যাকসিনের প্রস্তাব বিবেচনায় 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
21 April, 2021, 10:35 am
Last modified: 21 April, 2021, 01:19 pm
আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রস্তাবকৃত কোম্পানিগুলোর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন জমা দিলে সরকার ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। 

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাইরে অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। এরইমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিনের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রস্তাবকৃত কোম্পানিগুলোর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন জমা দিলে সরকার ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। 

অন্যদিকে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সহযোগিতায় বাংলাদেশে 'স্পুটনিক ফাইভ' ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। ভ্যাকসিন সংগ্রহে ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের অন্য উপায় অনুসন্ধানের এ সময়েই দেশে ভ্যাকসিনের যৌথ-উৎপাদন ব্যবস্থাপনার এ প্রস্তাব এলো।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন মঙ্গলবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "রাশিয়ার সঙ্গে ভ্যাকসিনের যৌথ-উৎপাদনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি…যদিও এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি"। 

ড. মোমেন জানান, সম্প্রতিই দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাবনা পাঠায় মস্কো, বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানির মতো উৎপাদন সক্ষমতা নেই রাশিয়ার। 

তিনি জানান, প্রস্তাবনা অনুযায়ী রাশিয়া বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন তৈরির প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা করবে ও বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো দেশেই ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। 

"যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, দামও কম হবে, সবকিছু ভালোর দিকেই এগোবে," বলেন তিনি। 

এর আগে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভায় বিভিন্ন দেশের পাঁচটি টিকা নিয়ে আলোচনা হয়। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দুটি করে এবং রাশিয়ার একটি ভ্যাকসিন রয়েছে। দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চারটি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আর একটি টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ হচ্ছে। সভায় উপস্থিত একটি সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসন ও মডার্না, চীনের সিনোফার্ম ও ক্যানসিনো এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ- এই পাঁচটি টিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশি একটি ওষুধ কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন ও মডার্নার টিকা বাংলাদেশে আনতে পারবে বলে বৈঠকে জানিয়েছে। স্পুটনিক-ফাইভ টিকার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। 

এই পাঁচটি টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। পাঁচটি টিকার মধ্যে কোনটি অধিকতর কার্যকর এবং দ্রুততম সময়ে পাওয়া যাবে, তা যাচাই-বাছাই করতে কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সম্ভাব্য টিকা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মজিবুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যেকোন ভ্যাকসিন তো কেনা যাবেনা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের বিষয় রয়েছে, কার্যকারিতা কেমন আছে  তা দেখতে হবে। আগামী কাল অথবা দুই একদিনের মধ্যে আমরা কমিটির সদস্যরা বসে ভ্যাকসিনের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবো। এখনো আমরা কাউকে প্রাধান্য দিচ্ছিনা। আমাদের কাছে অনেকগুলো ভ্যাকসিনের প্রস্তাব আছে। প্রস্তাব যেগুলো আছে, বিশ্বের কোন কোন দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে, কবে পাওয়া যাবে সেসব বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো"। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, চীনের ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না পাওয়ায় এর আগে চীনা ভ্যাকসিন কেনার প্রতি উৎসাহ দেখায়নি বাংলাদেশ। 

"কিন্তু, আমরা এখন ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য সব দরজাই খোলা রাখছি," বলেন ড. মোমেন। 

তবে, ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায়, আগামী ডিসেম্বরের আগে চীন বাংলাদেশে ভ্যাকসিন রপ্তানি করতে পারবে না বলে জানিয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে আগামী মাসের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেতে পারে বাংলাদেশ। 

"কোভ্যাক্সের আওতায় ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী আমরা," বলেন তিনি। 

এ বছরের ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চালান আসে। উপহারস্বরূপ ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠায় ভারত। পরবর্তী সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় আরও ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার পায় বাংলাদেশ। 

উপহারস্বরূপ পাঠানো ভ্যাকসিন ছাড়াও ভারতে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ কেনার ব্যাপারে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার চুক্তি হয়। 

চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। গত মার্চে দেশে ৫০ লাখ ডোজের দ্বিতীয় চালান আসার কথা থাকলেও, এখনো সেই চালান পায়নি বাংলাদেশ। 

"তারা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত বলছে ভ্যাকসিন পাঠাবে। তারা এখনো বলেনি ভ্যাকসিন পাঠানো হবে না,"

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের অঙ্গীকারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

তবে, আন্তর্জাতিক চাহিদা ও অঙ্গীকার সাপেক্ষে ভারত সে পরিমাণে ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারছে না এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। 

"তারা যে পরিমাণ উৎপাদন করছে, তার থেকে বেশি অর্ডার নিয়েছে," বলেন তিনি।

ড. মোমেন আরও জানান, ভ্যাকসিন আমদানি ও ফাইজার-বায়োএনটেকের মতো দামী ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে বিপণনের জন্য এক্ষেত্রে দেশের বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার। 

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন, ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেছেন আরও ৭০ লাখ মানুষ। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.