আত্মত্যাগ আমাদের জীবনের অংশ: শেখ মুজিবকে নিয়ে জয়   

বাংলাদেশ

টিবিএস ডেস্ক
17 March, 2020, 02:25 pm
Last modified: 17 March, 2020, 06:02 pm
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ঘিরে স্মৃতিচারণ করেছেন তার দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশ সৃষ্টির নেপথ্যে নেতৃত্বদানকারী মুজিব পরিবারের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেছেন এক নিবন্ধে। 

বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয় মহান এই নেতার স্মৃতিচারণ করেছেন। তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ সৃষ্টির নেপথ্যে নেতৃত্বদানকারী মুজিব পরিবারের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেখা তার এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছে শিকাগোভিত্তিক রাজনৈতিক সংবাদমাধ্যম রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স। 'শেখ মুজিব: বাংলাদেশের জনক ও আমার নানা' শীর্ষক নিবন্ধের সারাংশ পাঠকের জন্য এখানে তুলে ধরা হলো- 

শৈশবে আমি সকালের নাস্তাটা নানার সঙ্গেই করতাম। এ সময় নানা যা খেতেন সেটাই খাওয়া এবং তার মতো করেই খাওয়ার চেষ্টা করতাম। নানী কিন্তু আমার এই নানাপ্রীতি ও অন্ধ অনুকরণের জন্য মাঝেমধ্যেই বকা দিতেন। কিন্তু তাতে আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা কোনোটাই কমেনি।

এভাবেই চলছিল। কিন্তু একদিন নানা আমাকে তার জ্বলন্ত তামাকের পাইপে মজা করে টান দিতে দিয়েছিলেন। তারপর যা হওয়ার তাই হলো। বেদম কাশিতে আমার তখন প্রাণ যায় যায়! নানী তো রেগে আগুন। নানা সবকিছু দেখে তার সেই বিখ্যাত অট্টহাসিতে তখন ফেটে পড়েছেন। এমন বেশ কিছু মজার ঘটনা আমার স্মৃতিতে বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবকে চির স্মরণীয় করে রেখেছে।  

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শিশু জয় এবং কন্যা শেখ হাসিনা।

এবার আমার নানার জন্মের শততম বছর। এ উপলক্ষে আমি এবং তার কন্যা (আমার মা) তাকে স্মরণ করছি। উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিবসটিকে পালন করছে পুরো বাংলাদেশের জনগণ। কারণ, সেদেশে তিনি জাতির মিত্র 'বঙ্গবন্ধু' এবং 'জাতির পিতা' বা স্থপতি নামেই পরিচিত। ১৯৭১ সাল যে বছর আমার জন্ম, সে বছরই বাংলাদেশ নামক আজকের ভূখণ্ডটি তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করে। 

জনসেবা করাই আমার পরিবারের ঐতিহ্যবাহী পেশা। আমার নানা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। মা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তারা উভয়েই নির্বাচিত হয়ে এই পদের দায়িত্ব নিয়েছেন।

বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ঠিক এমন রাষ্ট্রেরই স্বপ্ন আমার মাতামহ দেখেছিলেন। তার স্বকীয়তার কারণেই আজ বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সফলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। 

আমার যখন মাত্র চার বছর বয়স, তখন নানার স্বপ্নগুলো প্রায় ধ্বংস হওয়ার মুখে পড়েছিল। আমার মা-বাবা এবং খালা যখন আমাকে এবং আমার বোনকে নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি সফর করছিলেন, ঠিক সে সময় সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী অফিসার আকস্মিক হামলা করে আমার নানাকে সপরিবারে হত্যা করে। 

এই ঘটনার পর ক্ষমতায় আসে এক নিষ্ঠুর সামরিক জান্তা। ওই জান্তার কারণেই ১৯৮১ সালের আগে আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। 

আত্মত্যাগ আমাদের পরিবারে দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আমার নানা রাজবন্দি হিসেবে তার জীবনের ১৪ বছর বিভিন্ন মেয়াদে পাকিস্তানের জেলে কাটিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি যখন ঘরে ফিরলেন, তখন তার বড় পুত্রও তাকে চিনতে পারছিলেন না। 

তার কন্যা হিসেবে আমার মাও বেশ কয়েকবার কারাবন্দি থেকেছেন। ২০০৪ সালে বিরোধী দলে থাকার সময় তাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ভাগ্যগুণে তিনি সে যাত্রায় অল্পের জন্য বেঁচে যান। ঘটনাটির বেশ কয়েক বছর পর ঢাকার এক আদালত ওই হামলা ১৯৮১ সালের সামরিক জান্তা প্রধানের পুত্র তারেক রহমানের নির্দেশে করা হয়েছে বলে রায় দেন। সেই জান্তা প্রধানই আমার নানাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। 

বাংলাদেশের রাজনীতি প্রায়শই রক্তাক্ত ও ব্যক্তিগত শত্রুতায় রূপ নেয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে গণহত্যা করেছিল।
 
স্বাধীনতার পরের অধিকাংশ সময় কখনো আমার নানা এবং মায়ের দল ক্ষমতায় এসেছে, কখনোবা এসেছে পাকিস্তান সমর্থিত সামরিক জান্তা নেতার স্ত্রীর নেতৃত্বাধীন দলের সরকার। 

নানাকে হত্যা করার পরপরই আমার মায়ের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে পারেনি। দীর্ঘদিন মাকে নির্বাসনে কাটাতে হয়। দেশে ফেরার পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে, প্রথম তার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসে। 

সর্বশেষ আমার মা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন। এরপর থেকে তিনি দু'বার জনগণের ভোটে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। নারী নেতৃত্বের দিক থেকেও এই অর্জন তাকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারীতে পরিণত করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারকে ৮৩ শতাংশ জনগণ সমর্থন করছেন। এটা অনেক বড় এক অর্জন। ওই জরিপে অংশ নেওয়া এক-তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি দেশ সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে আস্থা পোষণ করেছেন। 

সন্দেহ নেই, আজ আমার নানা বেঁচে থাকলে এই অর্জন দেখে খুবই আনন্দিত হতেন; তবে আশ্চর্য হতেন না মোটেও। কারণ পিতার মতোই তার সব সন্তানের মাঝে বড় কন্যাটি নারী অধিকার, স্বাধীনতা এবং লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাস করেন। তাদের দুজনের যৌথ আদর্শের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই আজ বাংলার নারীরা বিশ্বের মাঝে উচ্চশিক্ষিত হয়ে নানা পেশায় মাথা উঁচু করে নিজ অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.