আট বছরের শিশুর নামে শ্রম আদালতে মামলা
রাজশাহীর শ্রম আদালতে আট বছরের শিশুর নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২৪ মার্চ মামলাটি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক।
রাজশাহীর নওহাটা বাজারে দোকান খোলার অপরাধে একইসঙ্গে ছেলে ও বাবার নামে ওই মামলা হয়েছে। বর্তমানে শিশু ও শিশুটির বাবা আদালতে হাজির হয়ে জামিনে রয়েছেন।
শিশুটির নাম জোবায়ের। বাবা জনাব আলী। রাজশাহীর পবার নওহাটা বাজারে 'জে বার্মিজ সুজ' নামে একটি জুতার দোকান রয়েছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় 'জে বার্মিজ সুজ' দোকানের মালিক জনাব আলীর কাছে রাজশাহীর শ্রম আদালতের দুটি সমন আসে। সেখানে বাবা-ছেলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩০৭ ধারার অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়।
পরে আইনজীবীর মাধ্যমে জনাব আলী জানতে পারেন, যেকোনো এক শুক্রবারে তার দোকান খোলা ছিল, সেই অপরাধেই হয়েছে মামলা। আর দোকানের সাইনবোর্ডে ছেলের ছবি ও নাম থাকায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।
জনাব আলী বলেন, 'দোকান খোলার অপরাধে মামলা হলে আমার নামে হবে। কারণ, অপরাধ আমার। আমি স্বীকার করছি। শিশুটির নামে কেন এই মামলা হবে?'
মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকদের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে না গিয়েই এমন ভুল রিপোর্ট তৈরি করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক। নওহাটা বাজারেও ৯৩০টি দোকানের মধ্যে ২০ থেকে ২৫টির নামে মামলা হয়েছে। তারা এসে বলেন, টাকা না দিলে মামলা হবে!
এদিকে শ্রম আদালতের আইনজীবী এস আলম জানান, যেহেতু শিশু জোবায়ের দোকানের মালিক বা পরিচালক- কোনোটিই নয়, তাই শুধু সাইনবোর্ডে ছবি ও নাম থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হতেই পারে না।
এ ব্যাপার কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপ-মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভুইয়া জানান, এটি সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের ভুল। তাই শিশুটির মামলা প্রত্যাহরের বিষয়ে তারা আন্তরিক।
তিনি বলেন, 'শিশুটির পরিবার যদি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। কিংবা ঘটার পরও যদি যোগাযোগ করত, তাহলে আরজি পরিবর্তন করে শিশুটির নাম বাদ দেওয়া যেত। এখন আমরা আরজি থেকে শিশুটির নাম বাদ দিয়ে দেব।'
এদিকে, রাজশাহীর জজ কোর্টের আইনজীবী দিল সেতারা বলেন, '১১ বছরের আগে কোনো শিশুর নামে মামলা হওয়ার কোনো আইন নেই। শ্রম আইন অনুযায়ীও ১১ বছরের নিচে কোনো শিশু অপরাধ করলে তার নামে মামলা হওয়ার সুযোগ নেয়। সেখানে এই মামলা হওয়াটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।'
তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'এখন যদি আরজি থেকে শিশুটির নাম বাদও দেওয়া হয়, তবু তার ওপর যে ক্রিমিনাল অফেন্স চাপিয়ে দেওয়া হলো, তার দায় কে নেবে? তাকে তো বড় হওয়ার পর নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হবে।'