আগামী সপ্তাহ থেকে বৃহৎ পরিসরে টিকা কর্মসূচী চালুর পরিকল্পনা

বাংলাদেশ

09 July, 2021, 10:05 am
Last modified: 09 July, 2021, 10:18 am
দেশে এই মুহূর্তে মডার্নার ২৫ লাখ, ফাইজারের ১ লাখ এবং সিনোফার্মের ৩০ লাখ ডোজ টিকা মজুত রয়েছে।

দেশে করোনাভাইরাসের থার্ড ওয়েভে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহ থেকে আবারো ফেব্রুয়ারি মাসের মত বড় পরিসরে গণ টিকাদান কর্মসূচী শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। এবার ক্যাম্প করে দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করা হবে।

কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মর্ডানার টিকা ঢাকা থেকে সিটি করপোরেশনগুলোর টিকাকেন্দ্রে পৌঁছানোর পর, একই দিনে মর্ডানা ও সিনোফার্ম দিয়ে লার্জ স্কেলে টিকাদান শুরু হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমরা লার্জ স্কেলে টিকাদান শুরু করতে পারবো। তবে এখনই নির্দিষ্ট কোন তারিখ বলা যাচ্ছে না"।  

দেশে এই মুহূর্তে মডার্নার ২৫ লাখ, ফাইজারের ১ লাখ এবং সিনোফার্মের ৩০ লাখ ডোজ টিকা মজুত রয়েছে।

এই ৫৬ লাখ ডোজ টিকা দিয়েই বৃহত্তর পরিসরে গণ টিকাদান শুরু হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে রাজধানী ঢাকার ৭টি কেন্দ্রে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কোভ্যাক্স সুবিধায় পাওয়া মডার্নার টিকা দেওয়া হবে দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায়, আর চীন থেকে কেনা সিনোফার্ম দেওয়া হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। 

গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী প্রথম গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দিনে দেড় থেকে দুই লাখ টিকা ভ্যাকসিন দেয়া হতো। এবার দিনে কত মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে জানতে চাইলে ডা. শামসুল হক বলেন, "এবার দিনে আগের তুলনায় আরো বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এবার ক্যাম্প করে দিন-রাত টিকা দেয়া হবে"। এজন্য টিকার সংকট হবে না বলে জানান তিনি। 

এর আগে গত ২৫ এপ্রিল টিকার সংকটের কারণে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রদান কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করে।

এরপর ১ জুলাই থেকে প্রবাসী শ্রমিক, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার মাধ্যমে আবার গণ টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন দিনে গড়ে ১০ হাজার মানুষ ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা পাচ্ছেন। 

আগে টিকা নেয়ার বয়সসীমা ৪০ থাকলেও এখন তা কমিয়ে ৩৫ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। বুধবার থেকে ৩৫ বছর ও তার বেশি বয়সীরা টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন। এদের দুই ডোজ করে টিকা দিতে প্রয়োজন প্রায় সাত কোটি ডোজ টিকার।

এ বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে ৭৯.৪৮ লাখ মানুষ, যা ভ্যাকসিনেশনের জন্য সরকারের টার্গেটকৃত জনসংখ্যার মাত্র ১৮.২%।

এ পর্যন্ত দেশে মোট টিকা এসেছে ১ কোটি ৬০ লাখ। এর মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ৩ লাখ, চীনের সিনোফার্মের ৩১ লাখ, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার ২৫ লাখ ও ফাইজারের ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা রয়েছে। এতে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব।

ইতিমধ্যে, ৫৮.২০ লাখ মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার দুটি ডোজই গ্রহণ করেছে; টিকার একটি ডোজ পেয়েছে ৪২.৯৩ লাখ মানুষ।

এছাড়াও, এখন পর্যন্ত ২,২৩৭ জন সিনোফার্মের টিকার দুই ডোজ নিয়েছে, এক ডোজ নিয়েছেন ১.০৩ লাখ মানুষ। অন্যদিকে ফাইজারের ডোজ গ্রহণ করেছে ৬,৭৫২ জন।

সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় প্রাণ বাঁচাতে টিকার সর্বোত্তম ব্যবহারের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, "বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনার ইচ্ছা ভালো। কিন্তু যে বয়সসীমায় মৃত্যু বেশি হচ্ছে, তাদের টিকা পাওয়া আগে নিশ্চিত করা দরকার। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও হাতে থাকা ৫৬ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে এখন সরকারকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। মানুষের জীবন বাঁচাতে চাইলে দ্রুত ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে"। 

আগামীতে যে পরিমাণ টিকা আসবে

বাংলাদেশ চলতি মাসে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা পাবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, "কোভ্যাক্সের আওতায় বাংলাদেশ জাপান থেকে ২৫ লাখ এবং ইইউ থেকে ১০ লাখ টিকা পেতে যাচ্ছে। এগুলো সম্ভবত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হবে"।

চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে তিন দফায় দেড় কোটি ডোজ টিকা পেতে চুক্তি করেছে সরকার। চুক্তি অনুসারে জুন, জুলাই ও আগ্স্ট প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। জুনে এখন পর্যন্ত সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে।

এছাড়া রাশিয়া থেকে এক কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। এ মাসের মধ্যে দেশে রাশিয়ার টিকা আসতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে কী পরিমাণে ও কবে আসবে নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.