আইনের শাসন সূচকে ১৩৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪তম

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
16 October, 2021, 05:05 pm
Last modified: 16 October, 2021, 05:26 pm
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ৬টি দেশের মাঝে বাংলাদেশ এ বছর রয়েছে চতুর্থ স্থানে।

ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি)-এর বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশ এ বছর ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১২৪তম স্থানে রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে।

এই বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশ সর্বমোট এক নম্বরের মধ্যে স্কোর করেছে ০.৪০। সর্বোচ্চ স্কোর ১, আইনের শাসনের প্রতি দৃঢ় আনুগত্য নির্দেশ করে। গত বছর দেশের স্কোর ছিল ০.৪১।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ৬টি দেশের মাঝে বাংলাদেশ এ বছর রয়েছে চতুর্থ স্থানে।

০.৫২ স্কোর নিয়ে এ অঞ্চলের শীর্ষস্থানে রয়েছে নেপাল; দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ৭০তম। এরপর ৭৬তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং ভারত রয়েছে ৭৯তম স্থানে।

আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক সূচকে দেশ দুটির স্থান যথাক্রমে ১৩৪ এবং ১৩০তম।

বিশ্বব্যাপী আইনের শাসন সূচকে শীর্ষস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং ফিনল্যান্ড। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম স্কোর নিয়ে সূচকের সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, কম্বোডিয়া এবং ভেনিজুয়েলা।

স্বাধীন ও বহুমুখী প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট, বিশ্বব্যাপী আইনের শাসনকে এগিয়ে নিতে জ্ঞান, সচেতনতা এবং কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।

সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনের শাসন কীভাবে কাজ করে এবং এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের অভিজ্ঞতা কেমন তা বুঝতে এক লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি পরিবার এবং চার হাজার ২০০ আইন অনুশীলনকারী ও বিশেষজ্ঞদের জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। অক্টোবর ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত ছিল সূচক তৈরির তথ্য সংগ্রহের সময়কাল।

যে আটটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো হলো- সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, দুর্নীতির অনুপস্থিতি, উন্মুক্ত সরকার ব্যবস্থা, মৌলিক অধিকার, শাসন ও নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ, বেসামরিক বিচার এবং ফৌজদারি বিচার। প্রধান এই ৮টি বিষয় ৪৪ টি সাব-ফ্যাক্টর নিয়ে গঠিত।

বাংলাদেশের অবস্থান

সবগুলো ফ্যাক্টরের মাঝে বাংলাদেশ 'অর্ডার অ্যান্ড সিকিউরিটি'তে অর্জন করেছে সর্বোচ্চ স্কোর। এর সাব-ফ্যাক্টরগুলোর মাঝে রয়েছে- কার্যকরভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, নাগরিক সংঘাত নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তিতে মানুষের সহিংসতার আশ্রয় না নেওয়া। এই ফ্যাক্টরটিতে দেশের স্কোর ০.৬৩, যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।

এদিকে, 'উন্মুক্ত সরকার' ফ্যাক্টটির মাঝে রয়েছে আরও চারটি সাব-ফ্যাক্টর- প্রচারিত আইন এবং সরকারি তথ্য, তথ্য অধিকার, নাগরিক অংশগ্রহণ এবং অভিযোগ দায়ের প্রক্রিয়া। এখানে বাংলাদেশের স্কোর ০.৪২, যা দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

এছাড়া, অন্য ছয়টি ফ্যাক্টরের মধ্যে 'রেগুলেটরি এনফোর্সমেন্ট' বা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগে বাংলাদেশের স্কোর ০.৪০, যা আঞ্চলিক র‍্যাংকিংয়ে চতুর্থ; 'সিভিল জাস্টিস' বা বেসামরিক বিচারে ০.৩৮, যা দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম; 'কন্সট্রেইন্স অন গভার্মেন্ট পাওয়ারস' বা সরকারি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতায় স্কোর ০.৩৭, যা এ অঞ্চলে ষষ্ঠ; 'অ্যাবসেন্স অব করাপশন' বা দুর্নীতির অনুপস্থিতিতে স্কোর ০.৩৫, যার আঞ্চলিক অবস্থান চতুর্থ; 'ক্রিমিনাল জাস্টিস' বা ফৌজদারি বিচারে স্কোর ০.৩২ এবং এর আঞ্চলিক অবস্থান পঞ্চম এবং সর্বশেষ 'ফান্ডামেন্টাল রাইটস' বা মৌলিক অধিকারে বাংলাদেশের স্কোর ০.৩১, যা দেশকে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিয়ে গেছে ষষ্ঠ স্থানে।

বিশ্বব্যাপী আইনের শাসনের অবনতি

এ বছরের সূচক দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ দেশগুলোতে আইনের শাসনের উন্নতি হওয়ার বদলে, হয়েছে অবনতি।

কোভিড-১৯ মহামারির এই এক বছরে, জরিপ চালানো দেশগুলোর ৭৪.২ শতাংশ দেশেই আইনের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছে এবং মাত্র ২৫.৮ শতাংশ দেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে কিছুটা উন্নতি।

যে ৭৪.২ শতাংশ দেশে আইনের শাসনের অবনতি হয়েছে, সেই দেশগুলোতেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮৪.৭ শতাংশ বসবাস করে, যা প্রায় সাড়ে ছয় বিলিয়ন।

আইনের শাসনের এই অবনতি অত্যন্ত ব্যাপক এবং এটি বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে দেখা গেছে। টানা দ্বিতীয় বছরের মতো প্রায় সব অঞ্চলে, বেশিরভাগ দেশই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পিছিয়ে গেছে বা তাদের সামগ্রিক আইনের কার্যকারিতা বিগত বছরের তুলনায় অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.