অভিবাসী প্রেরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ৬ষ্ঠ, রেমিট্যান্স গ্রহণে ৮ম

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
03 December, 2021, 03:10 am
Last modified: 03 December, 2021, 03:13 am
২০২০ সালে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭ দশমিক ৪০ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৭৪ লাখ।

বিশ্ব অভিবাসন প্রতিবেদন ২০২২ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এ প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালে বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭ দশমিক ৪০ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৭৪ লাখ। অভিবাসী পাঠানোতে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ এবং রেমিট্যান্স গ্রহণে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে।

২০২০ সালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ২৮১ মিলিয়ন বা ২৮ কোটি ১০ লাখ। ১৮ মিলিয়ন অভিবাসী নিয়ে শীর্ষ অভিবাসী প্রেরণকারী দেশের স্থান দখল করেছে ভারত। ভারতের পরই যথাক্রমে মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়ার অবস্থান।

বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইওএম। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী চলাচলে সীমাবদ্ধতা ও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিপর্যয়, সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি বেড়েছে নাটকীয়ভাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির কারণে অভিবাসীদের পাঠানো আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স ২০২০ সালে ৭০২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭১৯ বিলিয়ন ডলার।

২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহের দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে। এর আগের ২০২০ সালের বিশ্ব অভিবাসী প্রতিবেদনে বাংলাদেশ শীর্ষ দশে জায়গা পায়নি।

গত বছর সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া দেশগুলো হলো—ভারত (৮৩.১৫ বিলিয়ন ডলার), চীন (৫৯.৫১ বিলিয়ন ডলার), মেক্সিকো (৪২.৭ বিলিয়ন ডলার), ফিলিপাইন (৩৪.৯১ বিলিয়ন ডলার), মিশর (২৯.৬০ বিলিয়ন ডলার), পাকিস্তান (২৬.১১ বিলিয়ন ডলার) এবং ফ্রান্স (২৪.৪৮ বিলিয়ন ডলার)।

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, 'অভিবাসী প্রেরণকারী দেশ এবং রেমিট্যান্স গ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। বর্তমানে আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, তবে প্রবাহ স্থিতিশীল রাখতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখনও অদক্ষ অভিবাসী বিদেশে পাঠাচ্ছি। ধীরে ধীরে আমাদেরকে দক্ষ অভিবাসী সরবরাহকারীতে রূপান্তরিত হতে হবে। এর ফলে রেমিট্যান্স বাড়বে এবং এক্সপ্লয়টেশন কমবে।'

আইওএম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশে বসবাস করা সত্ত্বেও অভিবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, অভিবাসীরা ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন। এর ৭৩ শতাংশ এসেছে উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) দেশগুলোতে কর্মরতদের কাছ থেকে। 

এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশের জিডিপিতে ৬ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিক থেকে দেশের রেমিট্যান্স খাত দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

নীতিনির্ধারকরা রেমিট্যান্স পাঠানোতে উৎসাহ ও নানা সুবিধা দিচ্ছে। ফলে দেশের রেমিট্যান্সের দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে।

আইওএম বাংলাদেশের অফিসার ইন চার্জ ফাতিমা নুসরাত গাজ্জালি বলেন, 'কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের প্রবাহ ধীর হয়ে গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২০২০ সালে ২১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে। মোটের ওপর, অভিবাসন বাংলাদেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অভিবাসীরা উন্নত অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অভিবাসন করেন এবং তারপর নিজ দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়তা করেন।'

তবে এই বছরের নভেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লেও নভেম্বরে ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স প্রবাহ আসে।

অভিবাসীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা ৫ গন্তব্য হলো—যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.