অক্সিজেন পাচ্ছে না করোনা রোগীরা

ইয়াকুব উন নবী শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রামের বেসরকারি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি হন ১৫ জুন। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়াতে তার অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা ইউনিটে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার সুবিধা নেয়। প্রয়োজন হলে বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিজ উদ্যোগে সংগ্রহ করতে হবে।
ইয়াকুব উন নবীর স্বজন সৈয়দ মোহন উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, উপসর্গ ও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করা হয়। তাই আমার চাচাকে সেখানে নিয়ে যাই। কিন্তু ভর্তির পর জানতে পারে রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব নয়। করোনা হাসপাতাল দাবি করলেও সেখানে পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। হাসপাতালটি রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করছে।
শুধু ইয়াকুব উন নবী-ই নন, ভর্তি হওয়া কোনো রোগীই বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর অক্সিজেন সুবিধা প্রয়োজন হচ্ছে। তাই প্রয়োজন হলে দোকান থেকে বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
করোনা রোগীদের অক্সিজেনের সরবরাহের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সব মারাত্মক ও জটিল করোনা রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে মারাত্মক ও জটিল রোগীদের চিকিৎসা হবে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)। ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) রাখতে হবে।
কিন্তু এসব সুবিধার কোনোটিই নেই বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে। শুধু কিছু শয্যা স্থাপন করে নিজেদের ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গত ৯ জুন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়। এর আগে হাসপাতালটি অধিগ্রহণ করে সরকার। প্রথমে রোগী ফিরিয়ে দিলেও সরকারি চাপে করোনা ইউনিট চালু করতে বাধ্য হয় হাসপাতালটি। তবে এখন ঢিলেঢালা চিকিৎসা ব্যবস্থার অভিযোগ উঠছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন আসহাব উদ্দিন বলেন, সেখানে কোনো চিকিৎসা নেই। মাঝেমধ্যে নার্সরা রাউন্ড দেন। কিন্তু চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বুধবার রাতে আমার রোগীর অবস্থা খারাপ হলেও কোনো চিকিৎসক আসেনি। তাই হাসপাতাল ছাড়ার চিন্তা করছি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সব সুবিধা নিশ্চিতের পর করোনা রোগীকে ভর্তি করাতে হবে। কারণ কোভিড-১৯ এর রোগীর অবস্থা যেকোনো সময় মুমূর্ষু হয়ে যেতে পারে। তখন চিকিৎসার অভাবে রোগী মারা যাবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, যেসব হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট রয়েছে, ওয়ার্ড পর্যন্ত যাদের সেন্ট্রাল সাপ্লাই নল রয়েছে সেসব হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হলে নিরাপদ হতো। এ ছাড়া নতুন করে ডেডিকেটেড হাসপাতাল করতে চাইলেও সেখানে পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ালে এসব সুবিধা ছাড়া করোনার চিকিৎসার হচ্ছে। সেখানে যেটা হচ্ছে সেটি রোগীর সঙ্গে প্রতারণা।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনা ইউনিটের অবকাঠামো তৈরির কাজ এখনো চলছে। তাই রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। সেটি হয়ে গেলে সবধরনের সেবা পাবেন রোগীরা।
তবে অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ আছে। তাছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও লাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো হয়ে গেলে অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না।
''১০০ শয্যার করোনা ইউনিট হলেও আমরা এখনো ৫০ শয্যায় সেবা দিচ্ছি। বাকিগুলো তৈরি হচ্ছে। শয্যা স্থাপনের পাশাপাশি সরঞ্জাম স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট স্থাপন কাজ চলছে।'' বলেন কামরুল হাসান।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালগুলো আমরা শুধু মনিটরিং করবো। চিকিৎসাসহ যাবতীয় বিষয় রোগী ও হাসপাতাল পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালগুলো অক্সিজেন সেবা দিয়ে টাকা আদায় করতে পারবে। তবে সেবা না দিলে তাহলে সেটি অন্যায়। এই ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।