সলোগ্যামি বিতর্ক: ভারতের যে তরুণী বিয়ে করছেন নিজেকেই

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
03 June, 2022, 11:25 am
Last modified: 03 June, 2022, 02:41 pm
প্রেমে পড়লে সাধারণত ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যা যা প্রত্যাশা তৈরি হয়, তিনি সেই প্রত্যাশা রাখেন নিজের কাছ থেকে। তাই তা পূরণ করার প্রতিশ্রুতিও দিতে চান নিজেকেই।

১১ই জুন তার বিয়ে। ইতিমধ্যে সব রকম তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। ডিজিটাল কার্ডও ছাপা সম্পন্ন। তবে এই বিয়েতে থাকছে না কোনো বর! কারণ বিয়ে হবে কনের নিজের সঙ্গেই।  

ফলাফল, ভারতের গুজরাটের মেয়ে ক্ষমা বিন্দুর বিয়ে নিয়ে মোটামুটি শোরগোল পড়ে গেছে। 

২৪ বছর বয়সী এই তরুণী পুনের একটি সংস্থায় সিনিয়র রিক্রুটার হিসেবে কাজ করেন। সোশিওলজিতে স্নাতক স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন। আপাতত রেজাল্টের অপেক্ষায় আছেন। সেইসঙ্গে আর পাঁচজন কনের মতো বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রেমে পড়লে সাধারণত ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে যা যা প্রত্যাশা তৈরি হয়, তিনি সেই প্রত্যাশা রাখেন নিজের কাছ থেকে। তাই তা পূরণ করার প্রতিশ্রুতিও দিতে চান নিজেকেই। সেজন্যই নিজেকে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ক্ষমা। 

তবে সমাজের প্রচলিত ধারা ভেঙে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যখন, তখন নানা বাধাবিপত্তি তো তাকে পেরোতেই হয়েছে। বাবা থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, মা আহমেদাবাদে। বাবা-মাকে এই বিয়েতে রাজি করাতে নাকি কয়েক ঘণ্টা লেগে গেছে তার। অবশেষে তারা রাজি হয়েছেন। বন্ধুদের উপস্থিতিতে বিয়েটা সারবেন তিনি। বাবা-মা থাকবেন ভিডিও কলে।

ক্ষমার বিয়ের কার্ডে রয়েছে শুধু একটাই নাম

বিয়েতে পরার জন্য ক্ষমা নিজের জন্য একটি লেহেঙ্গাও কিনেছেন। সব আচারবিধি মেনেই বিয়ে করতে চান তিনি। তবে আইনি পথে বিয়ে হচ্ছে না তার। অনেক কষ্টে এক পুরোহিতকে তিনি রাজি করাতে পেরেছেন। বিয়ের মণ্ডপ সাজানো হবে সাবেকি নিয়মে।  

শুধু বিয়ে নয়, মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনাও আছে ক্ষমার; গোয়ায় যাওয়ার সব রকম ব্যবস্থা সেরে ফেলেছেন ইতিমধ্যে।

তবে নিজেকেই বিয়ে করার বিষয়টি কীভাবে মাথায় এল? ক্ষমা বিন্দু জানান, কানাডিয়ান এক ওয়েব সিরিজ থেকে সম্ভবত সেই ভাবনা মাথায় এসেছে তার।

"একটা কথা আমায় নাড়িয়ে দিয়েছিল- প্রত্যেকটা মেয়েই কনে হতে চায়, কিন্তু স্ত্রী নয়। নিজেকে বিয়ে করার মাধ্যমে আমি যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি, তাতে স্বীকৃতি দিচ্ছি।" 

কিন্তু স্ববিবাহের বিষয়টি কি আইনসিদ্ধ? ভারতের কয়েকজন আইনি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আইনে কোনও বাধা নেই। তাছাড়া পুরোটাই সামাজিকভাবে করছেন বিন্দু। 

ক্ষমা বিন্দু ভালোভাবেই জানেন তার এ পদক্ষেপের জন্য তিনি প্রচুর ঘৃণামূলক মন্তব্যের শিকার হতে পারেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পুরুষদের খাটো করার কোনোরকম ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য তার নেই। 

এভাবে নিজেকে নিজে বিয়ে করাকে ইংরেজিতে 'সলোগ্যামি' হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভারতে এমন বিয়ে এই প্রথম হলেও বিদেশে কিন্তু এমন বিয়ের চল আগে থেকেই আছে। 

প্রায় ২০ বছর আগে নিজেকে বিয়ে করার ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেছিলেন জনপ্রিয় আমেরিকান কমেডি সিরিজ 'সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি'র চরিত্র ক্যারি ব্র্যাডশো। 

এরপর এমন শতশত বিয়ের খবর পাওয়া গেছে যার বেশিরভাগ করেছেন 'সিঙ্গেল' নারীরা। এক ব্রাজিলিয়ান মডেল (৩৩) তো নিজেকে বিয়ে করার তিন মাস পর ডিভোর্স দিয়ে আরও অনন্য নজির স্থাপন করেন।  

সলোগ্যামি ঘিরে বিশ্বের নানা প্রান্তে বাজার গড়ে উঠতেও সময় নেয়নি। জমে উঠেছে বিয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম, আংটি, নিজেকে ভালোবাসা ও অভিবাদনের নানা উক্তি সম্বলিত কার্ড ইত্যাদির বিক্রিবাট্টা। 

তবে ভারতে এমন বিয়ের কথা শোনা যায়নি আর তাই ক্ষমা বিন্দুর বিয়ে পত্রিকার পাতা থেকে সবখানে আলোচনার কেন্দ্রে।

আর পাঁচজন কনের মতোই বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমা; ছবি-সংগৃহীত

দেশটির চন্ডীগড়ের একটি প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের সাইকিয়াট্রির অধ্যাপক ড. সবিতা মালহোত্রা যেমন বলেছেন, "আমার কাছে ব্যাপারটি বেশ অদ্ভুত ঠেকেছে। প্রত্যেকেই নিজেকে ভালোবাসে। আত্ম-অনুরাগ প্রকাশে আপনাকে কোনো ধারা ভাঙতে হবে বা বাহ্যিক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে হবে- তেমন তো নয়। তাছাড়া বিয়ে হচ্ছে দুটি ভিন্ন সত্ত্বার এক হওয়া।"  

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়ে গেছে বিতর্ক। কেউ কেউ বিন্দুকে সাধুবাদ জানালেও বেশিরভাগই সলোগ্যামির বিরুদ্ধে। 

টুইটারে এক নারী লিখেছেন, কী দরকার এমন বিয়ের যেখানে আর কেউ জড়িতই নয়। আরেকজন লিখেছেন, ক্ষমা বিন্দু আসলে পারিবারিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চান বলেই নিজেকে বিয়ে করছেন।

অনেকে 'ক্রনিক নার্সিসিজমের' জন্যও সলোগ্যামিকে দায়ী করেছেন।

সমালোচকদের উদ্দেশে বিন্দু শুধু বলেছেন, "আমি কাকে বিয়ে করব সে সিদ্ধান্ত শুধুই আমার- সেটি হোক কোন ছেলেকে, কোন মেয়েকে কিংবা আমার নিজেকেই। আর নিজেকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে আমি সলোগ্যামির ধারণাকে স্বাভাবিক করে তুলতে চাই। 

আপনি এ পৃথিবীতে এসেছেন একা, ছেড়ে যাবেনও একা- সুতরাং আপনাকে নিজের চাইতে ভালো আর কে বাসবে! যখনই হতাশায় পড়বেন, তখন সেই আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে নিজেকে টেনে তুলতে…।"

  • সূত্র- বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা   

 
 
 
 
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.