১০ ডলারেরও কম দামের জুতা বিক্রি করে বিলিয়নিয়ার হলেন যে উদ্যোক্তা  

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
19 May, 2022, 08:00 pm
Last modified: 19 May, 2022, 08:26 pm
১৯৮৩ সালে 'অ্যাকশন' নামের একটি স্পোর্টস শু ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হরি কৃষাণ আগারওয়ালের উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয়। ২০০৫ সালে তিনি 'ক্যাম্পাস' স্পোর্টস শু বাজারে আনেন, যার মূল্য ছিল ১০ ডলারেরও (বর্তমানে ৮৭৬ টাকা) কম।

দেশের শেয়ারবাজারে এক সপ্তাহের অস্থিরতার মধ্যেই নতুন এক বিলিয়নিয়ার পেল ভারত। দিল্লিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যার' এর প্রতিষ্ঠাতা, ৬৬ বছর বয়সী হরি কৃষান আগারওয়াল সদ্যই পা রেখেছেন 'থ্রি কমা ক্লাবে'। ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যারের শেয়ার আইপিও মূল্যের ২৩ শতাংশ প্রিমিয়ামে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ভাগ্যের চাকা ফিরেছে এই ব্যবসায়ীর। এই মুহূর্তে আগারওয়ালের মালিকানায় থাকা ৭৪ শতাংশ শেয়ারের বাজারমূল্য ১ বিলিয়ন ডলার।

ভারতের ৯ বিলিয়ন ডলারের জুতার বাজারে এই মুহূর্তে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা তিনজন। দিল্লিভিত্তিক মুকান্দ লাল দুয়া ও রমেশ কুমার দুয়ার মালিকানায় আছে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের (বিক্রয়লব্ধ আয়) রিলাক্সো ফুটওয়্যার। ক্যাজুয়্যাল স্যান্ডেল থেকে শুরু করে ফরমাল শু জুতা, সবই বিক্রি করে রিলাক্সো। এরপরেই আছেন বিলিয়নিয়ার রফিক মালিকের ১০৭ মিলিয়ন ডলারের (বিক্রয়লব্ধ আয়) মেট্রো ব্র্যান্ডস(যদিও মেট্রো আপাতত ১৩ শতাংশ ছাড়ে তালিকাভুক্ত)। 

১৯৮৩ সালে 'অ্যাকশন' নামের একটি স্পোর্টস শু ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হরি কৃষাণ আগারওয়ালের উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয়। ২০০৫ সালে তিনি 'ক্যাম্পাস' স্পোর্টস শু বাজারে আনেন, যার মূল্য ছিল ১০ ডলারেরও (বর্তমানে ৮৭৬ টাকা) কম। স্বল্প বাজেটে জুতা সরবরাহ করায় খুব শীঘ্রই নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর সাথে পাল্লা দেওয়ার মতো অগ্রসরমান প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে 'ক্যাম্পাস'। কারণ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর স্পোর্টস শু-এর দাম ৩৫ ডলারেরও বেশি। 

ক্যাম্পাস-এর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা রমণ চাওলা বলেন, 'তিনি (আগারওয়াল) ১০ থেকে ৪০ ডলার মূল্য পরিসরে ভারতীয় জুতার বাজারের বিশাল শূন্যস্থানটিকে পুঁজি করেছেন।" 

২০২২ সালের এপ্রিলে গুরগাওয়ের একটি বাণিজ্যিক পরামর্শক সংস্থা, টেকনোপ্যাক-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুতা বিক্রয়মূল্য ও মোট বাজার অংশীদারিত্ব, উভয় দিক থেকেই ২০২১ অর্থবছরে ব্র্যান্ডের স্পোর্টস ও অ্যাথলেজার (অ্যাথলেটিক ও লেজারের ফিউশন) শাখায় শীর্ষ অবস্থানে আছে 'ক্যাম্পাস'। এই মুহূর্তে বাজারমূল্যের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির  ১৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব এবং বিক্রির সংখ্যায়  ২৫ শতাংশ বাজার দখল রয়েছে।

হরি কৃষাণ আগারওয়াল ও তার ছেলে, বর্তমান সিইও নিখিল আগারওয়াল। ছবি: ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যার এর সৌজন্যে

২০২১ সালে মোট ১৩ মিলিয়ন জোড়া জুতা বিক্রির মাধ্যমে ৯৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ক্যাম্পাস। যদিও আগের বছর তাদের আয় ছিল ৯৫ মিলিয়ন ডলার, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে বিক্রি কিছুটা পড়ে যায় তাদের। তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির আয় আবারও উর্ধ্বমুখী। ২০২১ সালের ডিসেম্বর অবধি নয় মাসে রেকর্ড ১১১ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যার।

পাদুকা শিল্পের মধ্যে স্পোর্টস শু-ই সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল শাখা হওয়ায়, ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস আর্থিকভাবে আরো লাভবান হবে বলে বিশ্লেষকদের অনুমান। তারা আরো মনে করেন, স্পোর্টস শু-এর চাহিদা দিন দিন বাড়বে বই কমবে না! টেকনোপ্যাকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ভারতে অ্যাথলেজার ও স্পোর্টস শু-এর পেছনে মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ১.৯ ডলার হলেও, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে তা যথাক্রমে ৩৩.৮ ডলার এবং ২২৭.৩ ডলার।

এ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাই বেসরকারি ইকুইটি ফার্ম টিপিজি ও বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান 'হ্যাভেলস' এর চেয়ারম্যান, বিলিয়নিয়ার অনিল রাই গুপ্তাকে ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যারে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই ২০১৮ সালে ক্যাম্পাস-এ বিনিয়োগ করে। এমনকি আইপিওতে কিছু শেয়ার বিক্রির পরেও দুজনের যথাক্রমে ৭.৬ শতাংশ ও ২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

মুম্বাইয়ের একটি ইনভেস্টমেন্ট হাউজ, মোতিলাল অসওয়াল এর গবেষণা বিশ্লেষক স্নেহা পোদ্দার বলেন, "অ্যাথলেজার এখানে খুবই অগভীর একটা শাখা (ব্যবহারকারী কম অর্থে বোঝানো হয়েছে)। তবে ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যার এখন নিজেদের ভৌগলিক পরিধি বৃদ্ধি করছে। একই সাথে নিজেদের পণ্যেও বৈচিত্র্য নিয়ে আসছে। স্পোর্টস শু থেকে শুরু করে ক্যাজুয়াল জুতা, সবই এখন পাওয়া যাবে তাদের কাছে।" মূলত উত্তর ও পূর্ব ভারতের ছোট ছোট শহরগুলোতে ক্যাম্পাসের পণ্যের বাজার। কিন্তু বর্তমানে তারা আরো বড় শহরগুলোতে প্রবেশ করতে চাইছে এবং দেশজুড়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও কার্যপ্রণালীর ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদেরই যুক্ত রেখেছে ক্যাম্পাস অ্যাক্টিভওয়্যার। হরি কৃষান আগারওয়ালের ছেলে, ৩৭ বছর বয়সী নিখিল আগারওয়াল একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। পুরদো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ২০০৮ সালে ক্যাম্পাস-এ যোগ দেন তিনি। নয় বছর পর নিখিলই প্রতিষ্ঠানটির সিইও হন। নিখিলের স্ত্রী প্রেরণা এ প্রতিষ্ঠানটির চীফ মার্কেটিং অফিসার। এদিকে প্রতিষ্ঠাতা হরি কৃষান আগারওয়ালের স্ত্রী বিনোদ আগারওয়াল সাপ্লাই চেইনের নেতৃত্ব দিতেন এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। 

সূত্র: ফোর্বস 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.