ডক্টরেট ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক: গ্রামের মানুষের কাছে তিনি ‘ড্রাগন প্রিন্স’

ফিচার

হোসাইন শাহীদ, ময়মনসিংহ
17 May, 2022, 04:50 pm
Last modified: 17 May, 2022, 08:59 pm
ড্রাগন ফল চাষ করে তিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ড্রাগন প্রিন্স নামে। আসল নাম ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এই ব্যক্তি বর্তমানে আলোচনায় এসেছেন ফেসবুকে নিজের একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর। তাকে নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে—একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যক্তি কেন, কীভাবে অজপাড়াগাঁয়ে গিয়ে কৃষিকাজ নিয়ে আছেন? দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে হোসাইন শহীদ মুখোমুখি হয়েছিলেন ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্সের।

ড্রাগন ফল চাষ করে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন ড্রাগন প্রিন্স নামে। আসল নাম ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এই ব্যক্তি বর্তমানে আলোচনায় এসেছেন ফেসবুকে নিজের একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর। ছবিতে দেখা যায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নে বাবুলের বাজারে নিজের খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করছেন তিনি। ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্সকে নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে—একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ব্যক্তি কেন, কীভাবে অজপাড়াগাঁয়ে গিয়ে কৃষিকাজ নিয়ে আছেন? দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের পক্ষ থেকে হোসাইন শহীদ মুখোমুখি হয়েছিলেন ড. আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্সের।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে ব্যাপক আলেচানা হচ্ছে, আপনি জানেন?

আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স: বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। একটা ছবিটি এরকম আলোড়ন ফেলবে আমি বুঝতে পারিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। অনেকেই জানতে চাচ্ছে আমি কী করি, আমার খামারে কী কী পাওয়া যায়। নানান কথা মানুষ জানতে চাচ্ছে। সবার সাথেই প্রায় একই রকম কথা বলতে হচ্ছে আমাকে। আসলে সেদিন আমার খামারের জন্য কিছু বাজার করার কথা। এমন সময় আমাকে বাজারের কথা বলা হয়েছিল যখন হাতে টাকা ছিল না। ঠিক করি কচুর লতি বিক্রি করে সন্ধ্যায় বাজার করব। যে লোক আমার এই লতি বিক্রির কাজ করে দেয় সে কাজে আসেনি। সন্ধ্যার পর বাজার করতেই হবে তাই কচুর লতি নিয়ে বাজারে যাই। ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খামারের জন্য বাজার করে ফিরেছি। এরমধ্যেই অনেকে আমার ছবি তুলেছে। খামারে ফিরে দুই ঘণ্টা পর দেখি ফেসবুকে ছবি। এটা তো আমার নিত্যনৈমেত্তিক কাজ। আমি অবাক হয়েছি মানুষ ছবি শেয়ার করছে দেখে।

প্রশ্ন: তারা বিস্মিত হচ্ছে আপনার শিক্ষা এবং শহর ছেড়ে এই অজ পাড়াগাঁয়ে কৃষক বনে যাওয়া নিয়ে, কাজেই আপনার পড়াশোনার বিষয়ে শুনি একটু।

প্রিন্স: আমি রোটারী হাই স্কুল মিরপুরে ও আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়েছি। ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করি, এরপর ২০০৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এআইইউবি থেকে এগ্রি বিজনেসের উপর এমবিএ করি। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল শেষ করি। ২০১৮ সালে আমি পিএচডি সম্পন্ন করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে।

নিজের ড্রাগন ফল বাগানে আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ছবি: হোসাইন শাহীদ

প্রশ্ন: আপনার বাড়ি তাহলে ময়মনসিংহ নয়?

প্রিন্স: আমার বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরে। সেখানে এখন আর কেউ থাকে না। বাবা ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারসহ ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতাম। পরে বাবা মৃত্যুর আগে গাজীপুরে জমি কিনে বসত করেছিলেন। তাই বলতে পারেন গাজীপুরেই আমার ঠিকানা। তবে বাসা ঢাকার উত্তরায়। সেখানে আমার পরিবার থাকে।

প্রশ্ন: তাহলে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই প্রত্যন্ত গ্রামে কীভাবে এলেন ?

প্রিন্স: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে আমি বিয়ে করি। বিয়ের পর এই এলাকাটি আমার ভালো লাগে। যেহেতু আগে থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল কৃষিভিত্তিক কোনো ব্যবসা করব, তাই শ্বশুরবাড়ি এলাকাতেই ২০১৪ সালে 'কৃষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ' নামে খামার করে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করি।

প্রশ্ন: এই গ্রামে খামার দিতে গিয়ে কোন বাধার মুখে পড়েছেন?

প্রিন্স: আমি এই গ্রামে যখন খামার করতে আসি, তখন স্থানীয়রা আমাকে গ্রহণ করেনি। রাতে আমি যখন টিনের চালের ঘরে ঘুমাতাম, তখন চালে ইটপাটকেল পড়ত। আমার খামারের নতুন লাগানো গাছগাছালির ক্ষতি করত। হয়তো ভেবেছিল সমস্যা তৈরি করলে আমি চলে যাব। আমি চলে গেলে তাদের লাভ হবে—বিষয়টি এমন নয়। তা-ও সমস্যা তৈরি করত। ধৈর্য ধরে এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাকে।

প্রশ্ন: এখন গ্রামের মানুষ আপনাকে মেনে নিয়েছে?

প্রিন্স: হ্যাঁ, এখন আমার সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক। আমার কাছ থেকে অনেকই গাছের চারা নিচ্ছে। ফল পাকলে ফল নিচ্ছে। প্রয়োজনে আমিও কোনো-না-কোনো কাজে তাদের সহযোগিতা নিই। গ্রামের সবাই তো আর সমস্যা সৃষ্টি করেনি। গুটিকয়েকজন ছিল তারা। তবে মানুষ বুঝে গেছে আমি তাদের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ নই।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের অন্যরাও এ গ্রামেই থাকে, আপনার সঙ্গে ?

প্রিন্স: না, ঢাকার উত্তরায় আমার বাসা আছে। আমার এক মেয়ে, দুই ছেলে। তারা সেখানেই থাকে। আমি মাসে এক-দুবার যাই, তারাও মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। তবে তারা আমাকে অনেক সমর্থন করে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি এটা করতে পারতাম না।

আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্সের এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: অন্যরা যখন উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ভালো চাকরি করছে বা অন্য কোনো ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করছে তখন গ্রামে এসে কৃষির উৎপাদন ভিত্তিক ব্যবসা কেন বেছে নিলেন ?

প্রিন্স: আমি কোনদিন চাকরির ইন্টারভিউ দেইনি। বাবা যেহেতু আর্মিতে ছিলেন, আমারও ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। সেটি হয়ে ওঠেনি। মাঝখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। তবে এরপর আমি আর কোথাও চাকরির চেষ্টা করিনি। আমার ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি ঝোঁক ছিল। যখন সেনা কলোনিতে থাকতাম, তখন কোয়ার্টারের সামনে খালি জায়গায় বাবা-মাকে দেখেছি শাকসবজির বাগান করতে। সেখান থেকেই আমার আগ্রহ জন্মে। এরপর যখন এমবিএ করি, শিক্ষা কার্যক্রমের এক বছর শেষ হওয়ার পর আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি টিমকে ভারতের পাঞ্জাবে পাঠানো হয় ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে। সেখানে পাঞ্জাব এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখি। গবেষকদের সাথে সময় কাটিয়েছি। সেখান থেকেই কৃষির প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে উঠি। তাই গ্রামে চলে এসেছি। এটা যে শুধু নিতান্তই শখের বশে, তা কিন্তু নয়। পরিকল্পিতভাবে আধুনিক উপায়ে খামার ব্যাবস্থাপনা করা গেলে এখানে ব্যবসা রয়েছে। আমি ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারমুক্ত কৃষিপণ্য উৎপাদন করি। যখন চারদিকে ভেজালের পরিমাণ বাড়বে, তখন খাঁটি পণ্যের গুরুত্ব বাড়বে। মানুষ খুঁজে খুঁজে ভালো পণ্য কিনতে চাইবে। তাই এই সেক্টরে ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। কারণ ভেজাল পণ্যই আমার ভোক্তা তৈরি করে দেবে।

প্রশ্ন: কিন্তু খোঁজ নিয়ে জেনেছি আপনি শিক্ষকতা শুরু করেছেন। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। তাহলে খামার কীভাবে পরিচালনা করছেন ?

প্রিন্স: বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির মালিকের সাথে আমার আগে থেকে পরিচয় ছিল। তার আগ্রহে আমি ২০২১ সালে সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা আমার জন্য বরাবরই কঠিন। আমি শুরুতেই বলে নিই আমি বছরে  ছয় মাস ক্লাস নিব, বাকি ছয় মাস আমি খামারের কাজে ব্যস্ত থাকব। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। সেখান থেকে আমি যে টাকা পাই, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডের জন্য দিয়ে দিই। সেখান থেকে যাতে অর্থ সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা দেয়া যায়।

প্রশ্ন: আপনাকে গ্রামের সবাই 'ড্রাগন প্রিন্স' নামে ডাকে, জানেন?

প্রিন্স: আমি যখন এখানে খামার শুরু করি তখন ড্রাগন ফলের বাগান করি। এই এলাকার মানুষ এই ফলটিকে ভালো করে চিনত না। তখন ফলের নাম আমার নামের সাথে জুড়ে দেয় স্থানীয়রা। যেখানেই যাবেন ড্রাগন প্রিন্স বললে আমাকে চিনে যাবে।

প্রশ্ন: আপনার খামার প্রতিষ্ঠার কথা শুনি।

প্রিন্স: ২০১৪ সালে নিজের কেনা সাড়ে তিন একর জায়গায় ২২ হাজার ৫০০ টাকার গাছের চারা রোপণ করে শুরু। পরে ধীরে ধীরে গাছের সংখ্যা বাড়াতে লাগলাম। সাথে ধানের জমিও ছিল। প্রথমে নিজের পুঁজি ও ধারদেনা করে কাজ করে যাচ্ছিলাম। পরবর্তীতে ব্যাংক ঋণ নিই। বর্তমানে প্রায় সাত একর জায়গা রয়েছে, যেখানে আমি আবাদ করছি। বছরে দুইশ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করি। ১০-১১ জন শ্রমিক আমার খামারে কাজ করে।

নিজের লটকন বাগানে আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ছবি: হোসাইন শাহীদ

প্রশ্ন: কী কী কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন?

প্রিন্স: ধান, সরিষা, ড্রাগন ফল বাগানে তিন প্রজাতির পাঁচ হাজার গাছ আছে। আছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আম। এভোকাডো, চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতির লিচু। মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরু, থাই জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, কলাগাছ। দেশি-বিদেশি পাঁচ হাজার ফলগাছের একটি নার্সারি রয়েছে বাগানে।

প্রশ্ন: উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন কোথায়?

প্রিন্স: আমি পাইকার ও আরতদারদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। এরা চাষিদের ঠকায়, প্রতারণা করে। আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরাসরি ভোক্তার হাতে পণ্য পৌঁছানোর চেষ্টা করি। শুরু থেকেই এটা করে আসছি। আমি স্থানীয়ভাবে আশপাশের বাজারে পণ্য বিক্রি করি আর দেশের বিভিন্ন জেলায় একটি গ্রাহক মহল তৈরি হয়েছে যারা ভালো গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য খেতে চায়। কুরিয়ারের মাধ্যমে আমি এসব পণ্য পৌঁছে দিই। আমার গ্রাহকদের একটি বড় অংশ আছেন যারা বিদেশে থাকেন। তবে দেশে তাদের মা-বাবা বা স্বজনদের জন্য এসব পণ্য পাঠানোর প্রয়োজন হয়। তারা আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমি তাদের স্বজনদের কাছে চাহিদা দেয়া পণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দিই। আগে আমার নিজের পরিবহন দিয়ে বিভিন্ন জেলায় পণ্য পৌঁছাতাম। কিন্তু সড়কে পুলিশ সমস্যা করে। সড়কে পণ্য পরিবহন করতে গেলে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। তাই এখন আর নিজের পরিবহন ব্যাবহার করি না। ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার মাল যায়। বছরে অর্থাৎ মৌসুমের হিসেবে আমি সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার [কৃষিপণ্য] বিক্রি করি।   

প্রশ্ন: গ্রামের কৃষকদের সাথে এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়নি?

প্রিন্স: প্রথমে তারা আমাকে পাগল ভাবত। এখন তাদের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। আমি কৃষিতে যেসব আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করি, তা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের কৌতূহল থাকে। আমার কাছ থেকে তারা পরামর্শ নেন। কীভাবে আমি কীটনাশক ছাড়া আবাদ করছি, জৈব সার বানাচ্ছি, কী ধরনের গাছের যত্ন কীভাবে করতে হয়, বিদেশি ফল চাষের পদ্ধতি—এসব আমার কাছ থেকে শিখতে চান তারা। আমি তাদের সহযোগিতা করি। তাদের কাছ থেকেও আমি আনেক কিছু শিখি। প্রথম প্রথম মানানোটা একটু কষ্ট হলেও এখন আর সমস্যা হয় না। আমি তাদের সাথে আড্ডা দিই। মাঝেমধ্যে একসাথে খাওয়াদাওয়াও করি। আমি এখন তাদেরই একজন।

নিজের আমবাগানে আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। ছবি: হোসাইন শাহীদ

প্রশ্ন: তাহলে আপনি তো প্রান্তিক কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানেন ?

প্রিন্স: শুনুন গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় আমার মনে হচ্ছে সেইদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশে আর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষক থাকবে না। কারণ এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষকের ছেলে কৃষক হয় না। কৃষক চায় তার সন্তান বড় অফিসার হবে, অন্য কোনো ব্যবসা করবে। তাই তারা তাদের সন্তানদের কৃষিকাজ শেখাতে আগ্রহী না। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় কৃষক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। যেমন আমার এখানে যারা কাজ করে তাদের কারও সন্তানও কৃষির সাথে জড়িত না। এই সমস্যার অন্যতম কারণ বাজার ব্যবস্থাপনা। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না। তাই অনিশ্চিত কাজে সন্তানদের তারা ফেলতে চান না। তাই কৃষি থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে চান। চাকরি খোঁজেন।

প্রশ্ন: আপনি শিখে এসেছেন, এরকম শিখে কেউ আসবে?

প্রিন্স: দেখুন কৃষিকাজটা পুরোপুরি টেকনিক্যাল একটি কাজ। এটা কোনো প্রতিষ্ঠান আপনাকে শেখাবে না। পরিবার থেকেই এটা শিখতে হবে। তা নাহলে কৃষক কমে যাবে। একটা পর্যায়ে জাত-কৃষক আর থাকবেই না। বিশ্ব কিন্তু এখন এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে যে, যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ সে-ই কিন্তু রাজা। কাজেই সামনে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.