গেমিং স্ট্রিমার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান? 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
17 May, 2022, 12:40 pm
Last modified: 17 May, 2022, 03:06 pm
কোনো কোনো পেশাদার স্ট্রিমার মাসে অর্ধলক্ষ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ৯১ লাখ ফলোয়ারের স্ট্রিমার পোকিমেন মাসে ৬৬ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন। আবার মুদ্রার অন্য পিঠও রয়েছে।
প্রতীকি ছবি/সংগৃহীত

যারা গেম খেলেন বা নিদেনপক্ষে গেম দেখেন, তাদের কাছে শ্রাউড, ডক্টর ডিসরেসপেক্ট বা নিনজা- এ নামগুলো ভীষণ পরিচিত। এরা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকজন স্ট্রিমার যাদের মূল পেশা হচ্ছে গেম খেলা ও সেগুলো ইন্টারনেটে সম্প্রচার করা। তাদের খেলা অন্যরা দেখতে মুখিয়ে থাকেন বলেই গেমিং কোম্পানিগুলোও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে দ্বিধা করে না। এ গেম খেলে ও তা দর্শকদের দেখিয়ে মিলিয়ন ডলারের মালিক বনে গিয়েছেন অনেক গেমার তথা স্ট্রিমার।

ইউটিউব, টুইচ, ফেসবুক ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে ভিডিও গেম খেলার ভিডিও প্রদর্শনকে স্ট্রিমিং বলে। কেউ গেম খেলতে খেলতে তা সরাসরি এসব প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচার করতে পারেন, আবার চাইলে আগে থেকে ধারণ করে রাখা গেমপ্লেও পরে স্ট্রিম বা প্রচার করা যায়। যারা এভাবে অনলাইনে গেম (এবং অন্য অনেক কিছুই) স্ট্রিম করেন তাদেরকে স্ট্রিমার বলা হয়।

বর্তমান সময়ে এসে ভিডিও গেম ইন্ডাস্ট্রি একটি মাল্টি-বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ গেম নির্মাণ করছেন আবার কেউ সেই গেম খেলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। স্ট্রিমার হিসেবে এ সময়ে অনেকে নিজের ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারেন। প্রাথমিকভাবে এ যাত্রা কিছুটা বন্ধুর মনে হলেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে এ ক্যারিয়ারে অনায়াসেই সাফল্য অর্জন করা যায়।

গেমারদের অনেকে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। অবশ্য তাদেরকে তাদের কনটেন্টের পেছনে অনেক শ্রম দিতে হয়। এর জন্য যেমন কনটেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, তেমনিভাবে লাইভ-স্ট্রিমিং বা অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচারের জন্যও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। 

ক্যারিয়ার হিসেবে ভিডিও গেম স্ট্রিমিং

প্রথম প্রথম এ ক্যারিয়ারে যে কাউকে প্রচুর বাধাবিপত্তির মুখে পড়তে হবে। স্ট্রিমিং ক্যারিয়ার হিসেবে কতটুকু উপযুক্ত তা নির্ভর করে ব্যক্তির বিষয়টির ওপর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। কেউ কেউ গেমিংকে স্রেফ বিনোদনের অনুষঙ্গ হিসেবে ভেবে নিয়ে এ খাতে ক্যারিয়ার গড়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না।

আবার দেখা যায়, স্ট্রিমার হিসেবে যাদের জনপ্রিয়তা তাদের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে, তারা অনেক ছোটবেলা থেকে গেম খেলতেন। এ পথে তাদের যাত্রা দীর্ঘকালের।

কোনো কোনো পেশাদার স্ট্রিমার মাসে অর্ধলক্ষ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ৯১ লাখ ফলোয়ারের স্ট্রিমার পোকিমেন মাসে ৬৬ হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করেন। আবার মুদ্রার অন্য পিঠও রয়েছে। বিশ্বের মোট স্ট্রিমারদের ৫০ শতাংশের বেশি তাদের স্ট্রিমিং-এ একজন দর্শক পেতেও যথেষ্ট বেগ পান।

স্ট্রিমিং জগতে পা রাখলে প্রথম কয়েকমাস, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কয়েক বছর, আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, নিজের কাজের ওপর থেকে মনোযোগ হারালে বা হতাশ হলে চলবে না। এই দীর্ঘ পথটুকু পাড়ি দেওয়া বেশ কঠিন, অনেকেই মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন। কিন্তু যারা ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারেন, তারা একটা সময়ে এসে সাফল্যের মুখ দেখেন।

ছবি-সংগৃহীত

স্ট্রিমিং ক্যারিয়ার শুরুর সঠিক ধাপ

স্ট্রিমিং-এ অর্থ আসে কোত্থেকে? কোনো গেমিং কোম্পানির সাথে চুক্তির মাধ্যমে অর্থ আয় করা যেতে পারে। প্রথমসারির গেমারদের সঙ্গে গেম নির্মাতা জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর চুক্তি থাকে। এর বাইরে ভক্তদের কাছ থেকে অনুদান পান স্ট্রিমাররা। এছাড়া সাবস্ক্রিপশন ব্যবস্থা, স্পন্সরশিপ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমেও আয় করেন একজন প্রতিষ্ঠিত স্ট্রিমার।

অনেকে ভেবে থাকেন কেবল ভিডিও গেমে আসক্ত থাকলেই বুঝি স্ট্রিমার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সহজ হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একজন গেমারের কনটেন্ট তখনই মানুষ দেখবে, যখন তিনি ভালো, স্বতন্ত্র, ও দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে সক্ষম এমন কনটেন্ট তৈরি করতে পারদর্শিতা দেখাবেন।

তাই যারা অন্যদের চেয়ে নিজেদের ভিন্নভাবে তুলে ধরতে পারেন, তারাই সাফল্য অর্জন করেন এ শিল্পে। এ সময়ে পেশাদার ও শৌখিন অনেক স্ট্রিমার রয়েছেন, যারা নিয়মিত বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট তৈরি করছেন বা লাইভ-স্ট্রিমিং করছেন। আপনি যদি তাদের চেয়ে ভিন্ন কিছু তৈরি করে দেখাতে না পারেন, তাহলে দর্শক অন্যদের ছেড়ে আপনাকে দেখবে কেন তাও মাথায় রাখতে হবে।

তাই স্ট্রিমার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার আগে কাউকে প্রথমে নিজের জনরাঁ পছন্দ করতে হবে। কেবল ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের গেম খেলে গেলেই হবে না। আপনাকে যেকোনো একটি বা এক ঘরানার গেমে স্থিতিশীল হতে হবে। কারণ দর্শক একজন স্ট্রিমারের কাছ থেকে একই ধাঁচের কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন। তাই ক্যারিয়ারের শুরুতে নিজের কাজের ওপর এক্সপেরিমেন্ট না করাই শ্রেয়।

স্ট্রিমিং-এর ক্ষেত্রে যে সবসময় গেমিং দক্ষতাই সবকিছু তা নয়। কনটেন্ট তৈরিতে বৈচিত্র্য থাকলে তা দক্ষতার প্রতিস্থাপক হিসেবেই কাজ করবে। বাংলাদেশে অনেক স্ট্রিমার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর আছেন যারা তাদের কনটেন্টকে স্রেফ হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করেন বলেই দর্শক নিয়মিত তাদেরকে অনুসরণ করেন। দর্শকের মনোযোগ ধরে রাখাটাই মূল কথা। সেটা ডক্টর ডিসরেসপেক্ট-এর মতো খেলার ভেতরে আগ্রাসী আচরণ দিয়ে হোক অথবা হাস্যকর ধারাভাষ্যের মাধ্যমে হোক।

স্ট্রিমিং-এ ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কিছু প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে একটা কম্পিউটার, গেমপ্লে ধারণ করার ডিভাইস, একটি ওয়েবক্যাম, একটি স্ট্রিমিং সফটওয়্যার হলেই কাজ শুরু করা যায়।

সর্বশেষ যে ব্যাপারটি নিয়ে আপনাকে সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে, সেটি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। অনলাইনে আজকাল ঘৃণা-ছড়ানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে। আপনার লাইভ-স্ট্রিমিং বা কনটেন্টেও আপনাকে এরকম অনেক অযাচিত মন্তব্যের শিকার হতে হবে। এগুলো নিয়ে বেশি না ভেবে নিজের কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে।

স্ট্রিমিং ক্যারিয়ারে প্রথম থেকে শুরু করে একটা দীর্ঘ সময় আপনাকে আর্থিক বিনিয়োগ করতে হবে। এর বাইরে দিতে হবে প্রচুর সময়, অনেক কিছু ত্যাগও করার প্রয়োজন হতে পারে একজন সফল স্ট্রিমার হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করলে। এসব কিছু মাথায় রেখেই এ পথে আসা উচিত।

  • সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

 
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.