নতুন চাকরিতে যাবেন? আগে জেনে নিন প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি বোঝার ৫ উপায়!   

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
13 April, 2022, 11:15 am
Last modified: 13 April, 2022, 03:19 pm
চাকরির জন্য নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে চাইলে, আগে নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানটি 'গুড কালচার' নাকি 'ব্রোকেন কালচার' এর মধ্যে রয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে কিনা তা এই ৫টি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে।  

একটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি এবং সেখানকার কর্মীরা কেমন চিন্তা ও আচরণ করবেন- এই সবকিছু নির্ধারণে প্রতিষ্ঠানের সিইও'র ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তবে সিইও বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব কর্মনীতি-পদ্ধতিও বদলে যায়, তৈরি হয় কোম্পানির নতুন সংস্কৃতি। আপনি যদি এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মী হয়ে থাকেন যা দ্রুত বিকাশমান এবং সিইও নিজেই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা; তাহলে ওই কোম্পানির নিজস্ব সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা বেশ কঠিন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে আমরা গুড-কালচার কোম্পানি বা একটি ভালো প্রতিষ্ঠান বলতে পারি।

কিন্তু যদি এমন হয়- প্রতিষ্ঠানটি বার বার ধাক্কা খাচ্ছে এবং প্রসার ঘটাতে পারছে না, তাহলে ধরে নিতে হবে এটির প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে ক্যারিয়ারের ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর আপনি যদি নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে চান, সেখানেও আগে নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানটি 'গুড কালচার' নাকি 'ব্রোকেন কালচার' এর মধ্যে রয়েছে।

কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, কোনো প্রতিষ্ঠানই বিজ্ঞাপন দিয়ে জাহির করবে না তাদের সংস্কৃতি কেমন! কর্মীকে নিজেই তা অনুসন্ধান করতে হবে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মপরিবেশ সংস্কৃতি জনসম্মুখে প্রকাশ করলেও, সেটি তাদের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নাও তুলে ধরতে পারে। ৫টি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে কিনা। 

১. ঘন ঘন সিইও পরিবর্তন করা হয় কি?

কোনো কোম্পানির অতীতে যদি ঘন ঘন সিইও পরিবর্তন করার ইতিহাস থাকে, তা একটি নেতিবাচক বার্তাই দেয়। তবে সিইও পরিবর্তনের কারণ বোঝা কিছুটা জটিল। নৈতিক বা আইনি কারণে যদি আগের সিইওদের বিদায় করে দেওয়া হয়, তাহলে আপনার চিন্তার কারণ রয়েছে।

তবে বর্তমান সিইও কোম্পানির সংস্কৃতি শুধরে আনতে ভালো পারফরমেন্স করছেন, এমনটা হতেই পারে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের সিইওদের কাজের রেকর্ড ভালো থাকে এবং বার্ধক্যের কারণে অবসর নেন, তাহলে নতুন সিইওর আগমনে অশুভ সংকেত নেই!

২. প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থান কি নড়বড়ে?

কোম্পানির নগদ প্রবাহ যদি অনুকূলে না থাকে এবং দেনার পরিমাণ অনেক বেশি হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখতে নিবেদিতপ্রাণ নন এর সিইও। হয়তোবা তিনি মনে করেন, কোম্পানির পরিসর বড় হলেই কেবল মুনাফা ভালো হবে।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ কোম্পানির আয়তন বৃদ্ধি পেলেও খরচ চুকানোর মতো বাজারদর তারা উঠাতে পারে না। আর প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থান নড়বড়ে হলে বোঝা যায়, এর ব্যবসায়িক কৌশল ধ্বসে পড়েছে। এ থেকে আরও ইঙ্গিত পাওয়া যায়, কোম্পানির বোর্ড তাদের গ্রাহক বা কর্মীদের চাইতে সিইওকে টিকিয়ে রাখতেই বেশি মনোযোগী।

৩. প্রতিষ্ঠানটি কি ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে?

কোনো কোম্পানি যদি ওই শিল্পের বাজারের তুলনায় ধীরগতিতে এগোয়, তাহলে এটির পিছিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কোম্পানির পণ্যের মান, দাম এবং গ্রাহকসেবার দুর্বলতার কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে।

কোম্পানির এই পিছিয়ে পড়াই হয়তো এর ভঙ্গুর সংস্কৃতিকে নির্দেশ করছে। উদাহরণস্বরূপ, সেলস টার্গেট পূরণ করলে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মীকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে কিনা অথবা গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে দিচ্ছে কিনা, তা খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।

৪. প্রতিষ্ঠানটি কি ক্রেতা পেতে ও ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে?

ক্রেতারা যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যবহার করা কমিয়ে দেন বা একেবারেই না কেনেন, অথবা অন্য কারো পণ্য বেছে নেন; তাহলে নিশ্চিতভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে। তাও আপনাকে দেখতে হবে এর পেছনে কারণটা কি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে বেশি ভালো পণ্য বিক্রি করছে? তারা কি গ্রাহকদের আরও বেশি পণ্যসংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে? যদি উত্তর 'হ্যাঁ' হয়, তাহলে দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানটি নতুন পণ্য উদ্ভাবন ও গ্রাহকসেবা উন্নয়নের দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কিনা। উত্তর যদি 'না' হয়, তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিও ভেঙে পড়েছে বলা যায়।

৫. প্রতিষ্ঠানটি কি প্রতিভাবান কর্মী নিয়োগ দিতে ও ধরে রাখতে ব্যর্থ?

দেশের শীর্ষ প্রতিভাবানদের নিয়োগ দিতে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয় এবং অপ্রত্যাশিত টার্নওভারের মুখোমুখি হয়, তাহলে এর কারণ অনুসন্ধান করুন। তারা কি কর্মীদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়? প্রতিভাবানদের মধ্যে কি এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম আছে? প্রতিষ্ঠানটি কি কর্মীদের খুব নিম্নমানের ক্ষতিপূরণ দেয়? তাদের লক্ষ্য বা মিশন কি অনুপ্রেরণাহীন?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো স্পষ্ট ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতি নেই। তারা মুখে যা বলে নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে, বাস্তবে প্রতিষ্ঠানটির সিইও ও শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাজে সেই প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই উপরোক্ত ৫টি পরীক্ষায় যদি দেখতে পান কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতি ভেঙে পড়েছে, তাহলে সেই পথে কাজের উদ্দেশ্যে পা না বাড়ানোই উচিত।

সূত্র: ইনক. ম্যাগাজিন  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.