ভারতের ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুর: দুর্গ, প্রাসাদ আর বিলাসবহুল হোটেলের জন্য বিখ্যাত যে শহর

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
25 March, 2022, 05:00 pm
Last modified: 25 March, 2022, 05:17 pm
পিংক বা গোলাপি শহর নামকরণের কারণ হচ্ছে শহরটির স্থাপনায় গোলাপি বর্ণের পাথর ব্যবহার। ১৮৭৬ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের আগমন উপলক্ষে জয়পুরের ভবনগুলোকে গোলাপি বর্ণের আভায় রাঙানো হয়। সেখান থেকে আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জয়পুরের স্থাপনাগুলো সেজে ওঠে গোলাপি রঙের আধিপত্যে।

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের রাজধানী ও সবচেয়ে বড় শহর জয়পুর। শহরটিতে রয়েছে সুপ্রাচীন সব দুর্গ ও ঐতিহাসিক প্রাসাদ। ভারতের উত্তরাঞ্চলের পর্যটনের সোনালি ত্রিভুজের (গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল) অন্তর্ভুক্ত শহরগুলোর মধ্যে জয়পুর একটি। ঐতিহাসিক প্রাসাদের অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য শহরটি পিংক সিটি নামেও পরিচিত। স্থাপত্য ও শিল্প উদ্ভাবনের জন্য ইতিহাসে জয়পুর শহরটি বিখ্যাত হয়ে আছে। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর হোটেলের তালিকার মধ্যে জয়পুর শহরের কিছু হোটেল রয়েছে। এছাড়াও এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সবুজাভ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখেও মুগ্ধ হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক যে ৮টি কারণে আপনি আপনার ভ্রমণ তালিকায় জয়পুর শহরের নাম তালিকাভুক্ত করবেন-

সপ্তাহে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রাসাদ দেখতে পারবেন

জয়পুর শহরে রয়েছে অসংখ্য প্রাসাদ ও দুর্গ। তাই এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রাসাদ ঘুরে দেখতে পারবেন। জয়পুরের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাসাদ হচ্ছে 'হাওয়া মহল'। প্রাসাদটির চমৎকার স্থাপত্য নকশা একে অন্যসব প্রাসাদ থেকে আলাদা করে তুলেছে। পাঁচতলা বিশিষ্ট এই প্রাসাদে ৯৫৩টি ছোট জানালা রয়েছে। যার ফলে এই প্রাসাদকে অনেকটা মৌমাছির বানানো বাড়ির মতো দেখায়।

বিলাসবহুল হোটেলগুলো রাজকীয় সময়ের সাক্ষী দেয়

জয়পুর শহরের বেশকিছু ঐতিহাসিক ভবন ও প্রাসাদকে পরবর্তীতে পাঁচ তারকা হোটেলে রূপান্তর করা হয়। তাই জয়পুরে ঘুরেতে আসা দর্শনার্থীরা রাজা-মহারাজাদের সময়তে না জন্মালেও, ভ্রমণকালে এই হোটেলগুলোয় থেকে রাজকীয় জীবন-যাপনের স্বাদ অনুভব করতে পারবেন।

কেনাকাটার আরেক রাজ্য হচ্ছে জয়পুর

জয়পুরী গয়না কম বেশি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। জয়পুরের জোহারি বাজার গয়নার জন্য বিখ্যাত একটি জায়গা। গয়নার পাশাপাশি সেখানে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের জন্য আলাদা আলাদা বাজার। যেমন কেউ যদি মেঝের কার্পেট কিনতে চায় তাহলে তাকে জয়পুরের ত্রিপলিয়া বাজারে যেতে হবে। আবার জামাকাপড় ও জুতা পাওয়া যায় নেহরু বাজারে।  

ঐতিহাসিক দুর্গে ঘেরা একটি শহর

জয়পুর শহরে নাহারগড় দুর্গ, আম্বার দুর্গ, জয়গড় দুর্গসহ বেশকিছু ঐতিহাসিক দূর্গ রয়েছে। এক সময় রাজারা এই দুর্গগুলোকে শহরের নিরাপত্তার জন্য নিমার্ণ করেছিলেন। উচ্চতায় বিশাল এই দুর্গগুলো এখন দর্শনার্থীদের জন্য অপরূপ দৃশ্য উপভোগের মাধ্যম বলা চলে।

পিংক শহর হিসেবে পরিচিতির কারণ

পিংক বা গোলাপি শহর নামকরণের কারণ হচ্ছে শহরটির স্থাপনায় গোলাপি বর্ণের পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮৭৬ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার স্বামী প্রিন্স আলবার্টের আগমন উপলক্ষে জয়পুরের ভবনগুলোকে গোলাপি বর্ণের আভায় রাঙানো হয়। সেখান থেকে আজও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জয়পুরের স্থাপনাগুলো সেজে ওঠে গোলাপি রঙের আধিপত্যে।

আধুনিক শহর পরিকল্পনার শুরু

প্রাচীনকালে ভারতের শহরগুলোর রাস্তা ছিল গোলকধাঁধার মতো। রাস্তাগুলো কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তৈরি করা হতো বলে বাসিন্দাদের রাস্তা চিনতে বেশ বেগ পেতে হতো। এইদিক থেকে জয়পুর শহরটি ছিল গোছানো। এটিই ছিল ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর। শহরটিতে যানজটের সমস্যা থাকলেও পরিকল্পিত পদ্ধতি ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণ করায় এখানে চলাচল দিল্লি ও মুম্বাই শহরের রাস্তা থেকে সহজ।

হাতির পিঠে করে শহর ঘোরার স্বপ্ন

রাজকীয় শাসনামলে হাতির পিঠে চড়ে রাজা-মহারাজারা তাদের রাজ্যে ঘুরে বেড়াত, কিন্তু বর্তমান সময়ে এসব দেখা যায় না। যুগের পরিবর্তন হয়ে গেলেও জয়পুরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা এখনও চাইলে হাতির পিঠে চড়ে ঘোরার অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। আম্বার দুর্গে হাতির পিঠে চড়ে দর্শনার্থীদের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। 

ঐতিহ্য ও শিল্পের শহর

জয়পুরের বিলাসবহুল হোটেলগুলো এই শহরের স্থাপত্য ও ইতিহাসের ছাপ বহন করলেও এই শহরের শিল্পকে আরও ভালোভাবে জানতে হলে আর্ট গ্যালারিতে যেতে হবে। জয়পুর রাজস্থানের প্রাণকেন্দ্র হলেও দর্শনার্থীরা চাইলে রাজস্থানের আরেকটি শহর উদয়পুর ঘুরতে যেতে পারে। উদয়পুরেও বেশকিছু দর্শনীয় দুর্গ ও মন্দির রয়েছে। রাজস্থানের এই শহরটি ব্লু সিটি (নীল শহর) নামে পরিচিত। 


  • সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার থেকে অনূদিত

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.