ইউক্রেন যুদ্ধ: ভ্যাকুয়াম বা থার্মোব্যারিক বোমা কী?

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
02 March, 2022, 01:40 pm
Last modified: 02 March, 2022, 03:16 pm
২০০৭ সালে রাশিয়া তাদের সবচেয়ে বড় থার্মোব্যারিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ৪৪-টনের একটি প্রচলিত বোমার সমতুল্য বিস্ফোরণ তৈরি করে সেই বোমা।

ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া থার্মোব্যারিক বা ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

একই আকারের প্রচলিত বিস্ফোরকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বিধ্বংসী হওয়ায় এই বোমার ব্যবহার বেশ বিতর্কিত। বিস্ফোরণের ব্যাসার্ধে কেউ থাকলে তার উপর এটি ভয়ানক প্রভাব ফেলে।

ভ্যাকুয়াম বোমা কিভাবে কাজ করে?

অ্যারোসল বা ফুয়েল এয়ার এক্সপ্লোসিভ নামেও পরিচিত ভ্যাকুয়াম বোমাতে দুটি পৃথক বিস্ফোরক চার্জসহ একটি ফুয়েল কন্টেইনার থাকে।

এই বোমা রকেট হিসাবে উৎক্ষেপণ করা যায় কিংবা বিমান থেকে বোমা হিসেবেও নিক্ষেপ করা যায়। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পর প্রথম বিস্ফোরক চার্জ কন্টেইনারটি খুলে দেয় এবং একটি মেঘের মতো জ্বালানি মিশ্রণকে ছড়িয়ে দেয়।

এই মেঘটি কোনো ভবনের যেকোনো ছিদ্র বা সম্পূর্ণভাবে সিল না করা ডিফেন্স ভেদ করতে পারে। এরপরই দ্বিতীয় চার্জটি এই মেঘকে বিস্ফোরিত করে; যা থেকে বিশালাকৃতির ফায়ারবল তৈরি হয়। এই বিস্ফোরণটি মূলত একটি ভ্যাকুয়ামের মতো কাজ করে এবং আশেপাশের সমস্ত অক্সিজেন শুষে নেয়।

ছবি- বিবিসি

বড় কোনো ভবন বা সরঞ্জাম ধ্বংস করতে পারে এই বোমা।

ইতোমধ্যেই এই বোমার বেশ কয়েকটি সংস্করণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন রকমের কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলো।

বিশেষ করে গুহা এবং টানেল কমপ্লেক্সে থাকা সৈন্যদের হত্যা করতে ব্যবহৃত হয় এধরনের বোমা।

২০০৭ সালে রাশিয়া তাদের সবচেয়ে বড় থার্মোব্যারিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। ৪৪-টনের একটি প্রচলিত বোমার সমতুল্য বিস্ফোরণ তৈরি করে সেই বোমা। বিশ্বের বৃহত্তম নন-পারমাণবিক বিস্ফোরক ডিভাইস হিসেবে বিবেচিত এটি।

ইউক্রেনে কি এই বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভার অভিযোগ অনুযায়ী, রাশিয়া তাদের আক্রমণের সময় ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করেছে।

তবে, এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

এছাড়া, গত কয়েকদিন ধরে ইউক্রেনে থার্মোব্যারিক রকেট লঞ্চার দেখার খবর পাওয়া গেছে।

ছবি- সংগৃহীত

ভ্যাকুয়াম বোমা 'যুদ্ধে' ব্যবহারের নিয়ম কী?

ভ্যাকুয়াম বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক আইন নেই। কিন্তু কোনো দেশ যদি জনবসতিপূর্ণ এলাকা, স্কুল বা হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে তাদের ব্যবহার করে, তাহলে ১৮৯৯ এবং ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের অধীনে এটি একটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর করিম খান বলেন, তার আদালত ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করবে।

এর আগে কোথায় ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করা হয়েছে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এধরনের ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করে জার্মান সেনাবাহিনী।

এরপর ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন সেনাবাহিনী ভিয়েতনামে ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহারের আগ পর্যন্ত এগুলো আর কোথাও ব্যবহারের খবর পাওয়া যায়নি।

আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে থাকা আল-কায়েদা বাহিনীকে ধ্বংসের চেষ্টা করার জন্য ২০০১ সালে আমেরিকাও তাদের ব্যবহার করে।

এছাড়া, ১৯৯৯ সালে চেচনিয়ার যুদ্ধে এই বোমা ব্যবহার করে রাশিয়া। সেসময় এ কাজের ব্যাপক সমালোচনাও করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

  • সূত্র: বিবিসি 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.