আলীর সেরা পাঁচ 

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
18 January, 2022, 04:20 pm
Last modified: 18 January, 2022, 04:21 pm
দ্য গ্রেটেস্ট মোহাম্মদ আলির সেরা পাঁচ লড়াই নিয়ে এ গল্প।

৫। ক্ল্যাসিয়াস ক্লের আবির্ভাব 

২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪। অপরিচিত এক ২২ বছর বয়সীর মুখোমুখি হন বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন সনি লিস্টন। নিজের চ্যাম্পিয়নের তকমা ধরে রাখার পথে আগের দুবারই প্রতিপক্ষকে প্রথম রাউন্ডেই নকআউট করেছেন লিস্টন। স্বাভাবিকভাবেই এ লড়াইয়েও তিনিই ছিলেন ফেভারিট।

কিন্তু সেই অপরিচিত বালক যে আর কেউ না, আসন্ন চ্যাম্পিয়ন ক্ল্যাসিয়াস ক্লে। 

লড়াইয়ের শুরু থেকেই ক্লে বর্ষীয়ান লিস্টনকে আজেবাজে কথা বলে বিরক্ত করতে থাকেন। ক্লের পায়ের কাজ ও হাতের ক্ষিপ্রতার সাথে তাল মেলাতে পারছিলেন না লিস্টন। সাত রাউন্ডে লিস্টনের উপর এতটাই চড়াও হন আলী যে তার কাঁধ ফুলে অবশ হয়ে যায়। মুখেও দেখা যায় অসংখ্য দাগ। সপ্তম সাউন্ডে হার মানেন লিস্টন। জন্ম নেয় এক নতুন কিংবদন্তি। 

'ক্ল্যাসিয়াস ক্লে' নামে এটিই ছিল আলীর সর্বশেষ লড়াই। এই লড়াইয়ের ফিরতি ম্যাচে লিস্টনকে প্রথম রাউন্ডেই নক-আউট করেন মোহাম্মদ আলী। 

৪। ক্লিভল্যান্ড নকআউট: ক্যারিয়ারের চূড়ায় আলী

৪ নভেম্বর, ১৯৬৬। শক্তিমত্তা, ক্ষিপ্রতা, খ্যাতি-যশ; সবকিছুতেই আলী তখন তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে। তার প্রিয় উক্তি, "আমি পাখির মতো উড়ি, মৌমাছির মতো হুল ফোটাই" বলতে গেলে এই সময়ের আলীকেই মনে করিয়ে দেয়।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তিন বছরের মধ্যে সাতটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন আলী। সপ্তম চ্যালেঞ্জটি আসে ক্লিভল্যান্ড উইলিয়ামসের পক্ষ থেকে। নিজের সিভিতে ৫১টি নক-আউট থাকা ক্লিভল্যান্ড সেদিন দাঁড়াতেই পারেননি আলীর সামনে। দ্বিতীয় রাউন্ডেই তিনবার ভূপাতিত হন তিনি। তৃতীয় রাউন্ডের শুরুতে ক্লিভল্যান্ডকে শেষবারের মতো মাটিতে ফেলেন আলী। 

মাত্র সাত মিনিট আট সেকেন্ড স্থায়ী হয় এই লড়াই।  

৩। ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি: বক্সিংয়ের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বৈরথের শুরু 

৮ মার্চ, ১৯৭১। । আলী-ফ্রেজিয়ারের প্রথম দ্বৈরথ এটি। 

এই লড়াইয়ের আগের তিন বছরে মাত্র ১৮ রাউন্ড বক্সিং করেছেন আলী। হারিয়ে ফেলেছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমাও। কিন্তু হিংস্র ফ্রেজিয়ারের সামনে প্রথম তিন রাউন্ডে তিনিই দাপট দেখান। চতুর্থ রাউন্ড থেকে ফ্রেজিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করেন। লড়াই চলে ১৫ রাউন্ড পর্যন্ত। 

১৫তম রাউন্ডে ফ্রেজিয়ারের এক লেফট হুকে আলী ভূপাতিত হয়ে যান। দ্রুত উঠে দাঁড়ালেও দর্শকরা ততক্ষণে ফ্রেজিয়ারের জয় দেখে ফেলেছে। সর্বসম্মতিক্রমে পরাজিত হন আলী। এই কিংবদন্তির ক্যারিয়ারের প্রথম পরাজয় এটি। 

২। থ্রিলা ইন ম্যানিলা

১ অক্টোবর, ১৯৭৫। আলী-ফ্রেজিয়ারের তৃতীয় দ্বৈরথ।

১৯৭৫ সালে এসে আলী ও ফ্রেজিয়ার কেউই আর তাদের আগের সত্ত্বা নেই। দুজনই কিছুটা বয়স্ক হয়ে গেছে, ক্ষিপ্রতাও কমে এসেছে। কিন্তু বক্সিং ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বৈরথ বলে কথা। 

প্রথম দ্বৈরথের হারার পর দ্বিতীয়টায় জিতেছিলেন আলী। ম্যানিলার এই লড়াই সেই জয়ের কথা ফ্রেজিয়ারকে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। শুধু এটা না, আরও নানা আজেবাজে কথা বলে ফ্রেজিয়ারকে উসকে দেন আলী।  

শুধু মুখে না, আলী ক্ষিপ্রতা ধরে রাখেন তার হাতেও। আর অপরদিকে ফ্রেজিয়ার একটু ব্যাকফুটে খেলছিলেন। আলীকে যখন একটু ক্লান্ত দেখাতে শুরু করে, তখনই ফ্রেজিয়ার কয়েকটা লেফট হুক কষেন। প্রথম রাউন্ডগুলোতে আলীর আগ্রাসনের পর মাঝখানের রাউন্ডগুলোয় আবার ফ্রেজিয়ার দাপট দেখাতে শুরু করেন। 

দশম রাউন্ডে গিয়ে আবার ফ্রেজিয়ারের উপর চড়াও হন আলী। ১১তম রাউন্ডে আলী এতটাই চড়াও হন যে তার ক্ষিপ্রগতির জ্যাবগুলোয় ফ্রেজিয়ারের চোখ ফুলে যায়। ফ্রেজিয়ারের অবস্থা বেগতিক দেখে ১৫তম রাউন্ড শুরু হওয়ার আগেই খেলা থামিয়ে দেন ফ্রেজিয়ারের প্রশিক্ষক এডি ফাচ। 

ফ্রেজিয়ার এরপরও চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রশিক্ষক শোনেননি। এই ম্যাচ জিতে ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে দ্বৈরথের চূড়ান্ত বিজয়ী ঘোষিত হন আলীই। 

এই ম্যাচের ক্ষিপ্রতা এতোই বেশি ছিল যে বিজয়ী আলীও পরবর্তীতে স্বীকার করেন, কখনো মৃত্যুর এতো কাছে আসেননি তিনি।  

১। রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল 

৩০ অক্টোবর, ১৯৭৪। নিজের সেরাটা অনেকাংশেই পিছনে ফেলে এসেছেন আলী। 
লিস্টনকে পরাস্ত করার এক দশক পর ৩২ বছর বয়সী আলী মুখোমুখি হন বক্সিং জগতের নতুন ত্রাস, ২৫ বছর বয়সী জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে। ৩৪টি নক-আউট ও আলীকে হারানো দুই বক্সার, ফ্রেজিয়ার এবং কেন নর্টনকে দুই রাউন্ডে হারিয়ে বড়সড় ফেভারিট হিসেবে এই লড়াইয়ে নামেন ফোরম্যান। 

লড়াইয়ের শুরু থেকেই আলীর উপর চড়াও হন ফোরম্যান। প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বুঝতে পেরে আলী প্রথম কয়েক রাউন্ড ব্যাকফুটে খেলেন, মাঝে মাঝে দড়ির কাছে গিয়ে আত্মরক্ষাও করেন। চতুর্থ ও পঞ্চম রাউন্ডে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আলী। ফোরম্যান ততক্ষণে কিছুটা নেতিয়ে পড়েছেন। ষষ্ঠ ও সপ্তম রাউন্ডে আরও আগ্রাসী হন আলী। অষ্টম রাউন্ডে চূড়ান্ত আঘাত হানেন আলী, তার লেফট হুকে ভূপাতিত হয়ে যান ফোরম্যান। 

এই লড়াইয়ে বলা হয় তর্কসাপেক্ষে ২০ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া ইভেন্ট। সেসময় বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ দেখেছিল এ লড়াই। ১৯৯৬ সালে এই লড়াইয়ে নিয়ে নির্মিত হয় অস্কারজয়ী ডকুমেন্টারি 'হোয়েন উই ওয়্যার কিংস'।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.