চিপ নেই? সমস্যা নেই, গেইম খেলা চলবেই

ফিচার

টিবিএস ডেস্ক
19 December, 2021, 02:25 pm
Last modified: 19 December, 2021, 05:33 pm
আমার বাবা-মা ভাবতেন ভিডিও গেমস আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে ফেলবে। এই লেখাটি লেখার সময়েও আমি আমার ৪৪৬টি ভিডিও গেমসের সাড়ে পাঁচ ফুট উঁচু তাকের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এখনো মনে পড়ে ‘সুপার মারিও ব্রস’ (১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল) খেলার সময় বাবা-মা আমাকে বাইরে থেকে ঘুরে আসার তাড়া দিতেন।

বিশ্বজুড়েই এখন হাহাকার, সেমিকন্ডাক্টর মানে অর্ধপরিবাহী চিপ মিলছে না। আসলে মহামারির কারণে চিপের সরবরাহ কমে গেছে। টেক জায়ান্ট স্যামসাংও চিপ সংকটে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ ভিডিও গেইমের জন্য চিপ আবশ্যক। তাহলে সেমিকন্ডাক্টর যুগে প্রবেশ করার আগে কি ভিডিও গেইম তৈরি হতো না? সেসময়ের একজন ভিডিও গেমার জাস্টিন হেকার্ট। তার আত্মকথা থাকছে এখানে।

আমার বাবা মা ভাবতেন ভিডিও গেমস আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে ফেলবে। এই লেখাটি লেখার সময়েও আমি আমার ৪৪৬টি ভিডিও গেমসের সাড়ে পাঁচ ফুট উঁচু তাকের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এখনো মনে পড়ে 'সুপার মারিও ব্রস' (১৯৮৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল) খেলার সময় বাবা-মা আমাকে ঘুরে আসতে বলতেন।  তারা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। চাইতেন গেমিং ডিভাইস থেকে আমাকে দূরে রাখতে। তাদের  ধারণা ছিল, নতুন এসব প্রযুক্তি অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমি অন্ধ হয়ে যেতে পারি। মনে পড়ে,  'স্টার ফক্স' খেলায় বেশি সময় দেওয়ার কারণে হাইস্কুলের প্রথম বর্ষে গণিতে ফেল করেছিলাম। নম্বরপত্রে মায়ের স্বাক্ষর জাল করে প্রতারকও বনেছিলাম।  

আমার সংগ্রহে থাকা প্রতিটি গেইমের সঙ্গেই আমার দারুণ কিছু স্মৃতি জড়িত। নিনটেন্ডোর 'অরিজিনাল বেইসবল' খেলার সময় বারবারই মোটা গোফওয়ালা আমার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। তিনি মিসৌরির স্কট সিটির স্কুল সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন। আমার 'ফাইনাল ফ্যান্টাসি' সিরিজের কথাও মনে আছে। আমি স্কুলের লিটল লিগ ছেড়ে দিয়েছিলাম কেবল এই গেমের কারণে। আমি পরিবারের অন্য লোকদের সঙ্গে কেন্টাকি হ্রদে বনভোজনে যেতাম না। বাসায় বসে 'রেনেগেড' খেলতাম। ১৯ বছর বয়সে আমি যখন মাদক গ্রহণের জন্য গ্রেফতার হই তখনও 'ম্যাডেন-৬৪' গেইম আমার হাতে ছিল। এখন ভাবতে লজ্জাই লাগে, ফুটবল খেলা দেখা এবং পার্টি উপভোগ করা বাদ দিয়ে আমি 'ফাইনাল ফ্যান্টাসি থ্রি', 'সুপার মেটেরয়েড' গেইমগুলো  নিয়ে ব্যস্ত থেকেছি।

বন্ধু চলে গেল  

'গাইরোমাইট' গেইমটি আমার কাছে এখনো আসল প্যাকেটেই আছে। প্যাকেটের গায়ে 'এটি কখনোই একা খেলতে পারবেন না' বলে একটি সতর্কীকরণ বার্তাও দেয়া ছিল। আমার ৬ বছর বয়সী বন্ধু জন মিলার আর আমি গেইম কন্ট্রোলার নিয়ে বসে পড়তাম। এরপরে আমি আর মিলার ভিকি লিন সার্কেলের রাস্তায় একই গতিতে সাইকেল চালাতাম। আমরা পরিত্যক্ত বাড়ির জানালা বেয়ে ভেতরে ঢুকতাম প্রায়ই। সে ডেনভারে চলে যাওয়ার পরে আমি ভীষণ ভেঙে পড়ি। 

বাবা একবার তার এক সফর থেকে ফিরে আমার জন্য 'সেকশন জেড' কিনে এনেছিলেন। তখন মাত্র দুইশ ডলারে কেনা হলেও এটির এখনকার বাজারমূল্য কয়েক হাজার ডলারের মতো। বাবা কিন্তু জানতেনও না সেকশন জেড কীরকম গেইম। 

আমার বন্ধু রাহুল কামাথের বাসার বেসমেন্ট ছিল একেবারে ভৌতিক সিনেমার সেটের মতো। এজন্য কোনো গ্রীষ্মের রাতে সেখান থেকে ঘুরে আসার পর 'নাইটমেয়ার ক্রিয়েচার' না খেললেও চলত। আমরা সেখানে রাহুলের পছন্দের রেড ক্রস ব্যন্ডের গান শুনেই কাটিয়ে দিতাম। এরপর রাহুলও ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে যায়।

ইন্টার্ন ছিলাম এলএ টাইমসে

'ওকারিনা অফ টাইম', 'এফ জিরো সিক্সটিফো'র, 'এনসিএএ ফুটবল' এর স্মৃতিগুলো আরো চমকপ্রদ বলে মনে হয় আমার। আমি তখন লস এঞ্জেলস টাইমস' পত্রিকায় শিক্ষানবিশ ছিলাম। কাজ না থাকলে অফিসেই আমি যেকোনো একটা গেইম নিয়ে বসে যেতাম। যখন নিউ ইয়র্কে ছিলাম, তখন আমি  ক্লান্তি দূর করতে প্রায়ই বিয়ার পান করতাম। এরপর রেল গাড়ির ঝিক ঝিক শুনতে শুনতে  আমার বন্ধু সেথের এপার্টমেন্টে যেতাম। আমরা 'এনসিএএ ফুটবল'  খেলতাম দুজনে। সে সবসময় টেক্সাসের হয়ে খেলত। আটলান্টা ম্যাগাজিনে আমি তখন সবেমাত্র পেশাদার লেখক হিসাবে যুক্ত হয়েছি। কাজের চাপ স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি  ছিল। ক্লান্তি দূর করতে 'উইন্ড ওয়াকার' খেলতাম। আবার কখনো হয়তো 'রেসিডেন্ট ইভিল' ফোর' খেলা দেখতে বসে যেতাম। 

আমার কাছে 'ডাকটেইলের'  একটা কপি ভার্সন ছিল। গেইমে থাকা সাদা চুলের সুন্দরী মহিলার কথা শুনতেই আমি বেশি পছন্দ করতাম। যাইহোক, কিছুদিন পরে অ্যামেন্ডার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। আমি প্রায়ই তাকে ছোটবেলার গেইম নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখতাম। আমার মনে আছে, ডাক্তারের চেম্বারে আমরা যখন অ্যামেন্ডার গর্ভধারণ নিয়ে কথা বলছিলাম তখনো সঙ্গী ছিল গেইম।  ডাক্তার পরীক্ষা শেষে আইভিএফে চতুর্থবারের মতো গর্ভধারণের চেষ্টায় ৮৫% সম্ভাবনার কথা  জানালো। আমার মনে হচ্ছিল, আমার বাচ্চাদের 'নিনটেন্ডো' শেখানোর স্বপ্ন সেখানেই ভেঙে যাচ্ছে। কারণ, সেদিনও চেম্বারে আসার আগেই আমি ই-বে মার্কেট থেকে 'কালার আ ডাইনোসর' কিনেছিলাম। 

সাউথ ক্যারোলিনায় হ্যারিকেন আঘাত হানার কারণে আমাদের হঠাৎ হঠাৎ শহর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হতো। যাওয়ার সময় আমরা আমাদের মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে যেতাম। আমি কখনোই আমার ভিডিও গেইমগুলোকে বাড়িতে ফেলে যেতাম না। যদিও এগুলো স্থানান্তরের জন্য খুবই সমস্যা পোহাতে হতো, আমি ৪টি বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে এগুলো নিয়ে যেতাম। আমার কাছে থাকা 'ডাঙ্কি কং জুনিয়র ম্যাথ' আমাদের বিয়ের আংটির চাইতেও দামি ছিল। এসব কারণেই আমি চাইতাম না গেইমগুলো আমার হাতছাড়া হোক। 

মাঝে মধ্যে আমি অফিসের ফ্লোরেই 'মেগা ম্যান টু' অথবা 'বাবল ববল' খেলতে থাকি। অফিসে টাইপ করতে করতে ক্লান্ত হলে এখনো 'অরিজিনাল নিনটেন্ডো' নিয়ে বসে পড়ি। গেইমেই কন্ট্রোলার আমার হাতে থাকলেও আমি আরাম পাই। 

ভাগ্নে এখন 

৩৬ বছর ধরে আমি ভিডিও গেইম খেলছি। আমি চিন্তা করেছি আমার ৫ বছরের ভাগ্নেকে ভিডিও গেইম শেখাব। আমি তাকে কন্ট্রোলার ধরা শিখিয়েছি, 'সুপার মারিও ব্রস' খেলতে হলে বাম হাতের ব্যবহার নিয়ে তার সাথে আলোচনা করেছি। এসব বিষয় আয়ত্বে এলে তাকে আমি আমার কালেকশন দেখাবো। তাকে 'বেলুন ফাইট' গেইম দেখানো হয়েছে। আমি তাকে বুঝিয়ে বলেছি কীভাবে বেলুনগুলো না ফাটিয়েই স্ক্রিনে তাদের সাজানো যেতে পারে। কয়েকবার দেখিয়ে দেওয়ার পরে সে আর আমার হাতে কন্ট্রোলারই দিতে চায় না। 


  • দ্য ইকোনোমিস্ট  থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর: পনিচুজ্জামান সাচ্চু

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.