৭১’র গ্রামের মানুষের ইতিহাস নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন আফসান চৌধুরী 

ফিচার

18 December, 2021, 03:00 pm
Last modified: 18 December, 2021, 03:20 pm
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ বা ইচ্ছে কোনোটাই কিন্তু ছিল না তার প্রথমদিকে। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার। আগ্রহটা শুরু হয়, যখন তিনি খেয়াল করেন দলিলের মধ্যে সত্য ঘটনার উপস্থিতির অভাব।

'গবেষণার জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের দেয়া জয়নুল আবেদিনের একটি পেইন্টিংও বিক্রি করে দিয়েছি। এমনটা কয়জন করতে পারবে?'

কথাটা খুব গর্ব নিয়ে সেদিন বলেছিলেন আফসান চৌধুরী।

আফসান চৌধুরীর অনেক পরিচয়, তিনি একজন সাংবাদিক, একজন গবেষক এবং একজন শিক্ষকও বটে। তবে  এরমধ্যে তার গবেষক পরিচয়টিই বোধহয় সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

ছোটবেলা থেকেই আফসান চৌধুরীর আগ্রহ ছিল ইতিহাসে। ইতিহাসের প্রতি ভালোবাসা এতটাই প্রবল যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সময়ও শুধু ইতিহাস বিভাগের ফর্মই তুলেছিলেন। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগভিত্তিক পরীক্ষা হতো। ভালো ছাত্র ছিলেন বলে সে ইচ্ছেও পূর্ণ হলো।

ছাত্রাবস্থা থেকেই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় পরীক্ষা শেষ করেই ১৯৭৭ এর দিকে যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র প্রকল্পে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে প্রকল্পের প্রধান কবি ও সাংবাদিক এবং একুশের সংকলনের সম্পাদক হাসান হাফিজুর রহমানের সঙ্গে।

আফসান চৌধুরীকে খুব স্নেহ আর ভরসা করতেন হাসান হাফিজুর রহমান। এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন দলিপত্রগুলোকে ছয় খণ্ডের বদলে ১৫ খণ্ডে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রকল্পের সবাই ছয় খণ্ড করবেন বলেই স্থির করেছিলেন কিন্তু আফসান চৌধুরী তার বিরোধিতা করলেন। কারণ তিনি জানতেন সরকারিভাবে যদি কোনো ইতিহাস লেখা হয়, সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তা বিশ্বাস করবে না। তার চেয়ে ১৫ খণ্ডের দলিলপত্র বই আকারে করলে ভালো। দলিলগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ইতিহাস চর্চা করবেন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার কোনো আগ্রহ বা ইচ্ছে কোনোটাই কিন্তু ছিল না তার প্রথমদিকে। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার। 

কিন্তু আগ্রহটা শুরু হয়, যখন তিনি খেয়াল করেন দলিলের মধ্যে সত্য ঘটনার উপস্থিতির অভাব।

এ প্রসঙ্গে একবার তাকে একজন বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধা বলেছিলেন, সত্যের চেয়ে বড় হচ্ছে দেশপ্রেম। কিন্তু কথাটা তার (আফসান চৌধুরী) মনঃপূত হয়নি। সত্য আর দেশপ্রেমের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতে পারে? আফসান চৌধুরী তা বিশ্বাস করেন না।

৭৭-৮৪ সাল পর্যন্ত কাজ করে তিনি বুঝতে পারলেন এখানে সত্য ঘটনা তো নেই-ই, বরং বাদ পড়ে গেছে সাধারণ মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষা, জীবন সংগ্রামের কথাও। আমাদের জনগোষ্ঠীর অর্ধেক যে নারীরা, তাদের কথাও নেই এখানে। যতটুকুই-বা আছে তা শুধু ধর্ষিতা নারীরই কথা।

সাধারণ মানুষকে বাদ দিয়ে এই ইতিহাস লেখার বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না আফসান চৌধুরী। এসব তার মনকে আরও অশান্ত করে তুলছিল।

তিনি ভাবতেন, ইতিহাস বলতে কি শুধু আমলা কী করেছে, সেনাবাহিনী কী করেছে, ভারত কী করেছে, সরকার কী করেছে, পাকিস্তানি কী করেছে এসবই? সাধারণ মানুষের কোনো কথা নেই! তাদের কোনো অবদান নেই!

এই অশান্তিই তাকে প্রেরণা যুগিয়েছে প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করার। তাই সত্যকে তুলে ধরতে কাজে নেমে গেলেন তিনি। তার সঙ্গে এই কাজে আরও যুক্ত ছিলেন ড. শামসুল, ড. সফর আলী আখন্দ, ড. কে এম মহসীন, ড. এনামুল হক, ড. হারুন। এরা সবাই ছিলেন তার শিক্ষক। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে গিয়ে এসব শিক্ষকদের সঙ্গেই গবেষণার কাজটি করতেন তিনি (আফসান চৌধুরী)।

কাজ করতে গিয়ে টের পেলেন, কিছু দলিল নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে, কিছু আবার পোড়ানো হচ্ছে, কিংবা গোপন করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন,  বাংলাদেশ মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের কী কথা হয়েছিল সে সম্পর্কিত দলিলগুলোর প্রত্যেকটি হারিয়ে গেছে।

ঐসময় বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর একটা জরিপ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে বিষয়ে তখন অনেকগুলো দলিল তিনি খুঁজে বের করেছিলেন যেগুলো আগে কখন কারও সামনে আসেনি। কিন্তু শেষে তাকে জানানো হল, ঐ জরিপে যা আছে সেটা কখনো সরকার কাউকে জানতে দেবে না।

আরেকটি দলিল পেয়েছিলেন তিনি '৫২ এর ভাষা আন্দোলনের ওপর। ওটাও শেষ পর্যন্ত আর সংগ্রহ করতে পারেননি।

প্রকল্পের কাজ শুরুর পর এরকম নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। তবে কয়েকজন মানুষ নিজের থেকে দলিল দিয়েছেন, তার মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি খুব সহায়তা করেছেন। এমন আরও অনেকে আছেন। একইভাবে অনেকেই আছেন যারা সহায়তা করেননি। যারা করেননি তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী', বাংলাদেশের 'পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়' থেকেও কোনো সাহায্য আসেনি তখন।

এভাবেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারে দ্বারে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে তাদের। দিনরাত এক করে আঠার মতো লেগেছিলেন তিনি তার কাজে। তার লক্ষ্য ছিল একটাই, সঠিক তথ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সাজানো।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, 'মনে হয় জীবনে যদি কংক্রিট কোনো কাজ করে থাকি, তা হল এই মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের প্রকল্প তৈরি করা। আমার জীবনের বিশাল মোড় ঘোরানো এক অভিজ্ঞতা এই মুক্তিযুদ্ধের দলিলের কাজটি।'

তিনি এই কাজের প্রতি কতটা একনিষ্ঠ আর শ্রম দিয়েছেন তার উদাহরণ পাওয়া যায় নিচের এই ঘটনাটিতে: একবার '৫২র ভাষা আন্দোলনের ওপর করা সরকারি একটি কমিশন রিপোর্টের দলিল তাদের দেয়া হচ্ছিল না। তখন আফসান চৌধুরী তার সহকর্মী সুভাষকে বললেন, দায়িত্বরত ব্যক্তিকে তিনি চা খাইয়ে আনবেন, এই ফাঁকে যেন সুভাষ দলিলটি বের করে আনেন। এভাবে নিজেদের পয়সা দিয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাদের সত্য ঘটনা বের করে আনতে হয়েছে।

তবে তিনি বলেন, একাত্তরের যেসব দলিলপত্র রয়েছে সেগুলো ছিল বিভিন্ন সরকারি দলিল, দাপ্তরিক দলিল, আন্তর্জাতিক বা জাতীয় গণমাধ্যমের দলিল কিংবা মুজিবনগর দলিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে এগুলো ছিল খুব সীমিতসংখ্যক মানুষের প্রকাশ।

স্বাধীনতার ইতিহাসে ৯৯ ভাগ মানুষই তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানাননি বা জানাতে পারেননি। তাহলে বাকিদের কথা আমরা জানব কী করে? এই দেশবাসী কি তাহলে দেশের অসম্পূর্ণ ইতিহাস আঁকড়ে ধরেই বাঁচবে?

এই প্রশ্নগুলোই তার মধ্যে একধরনের অস্তিত্ববাদী সংকট তৈরি করেছিল।

যখন তিনি এমফিলে পরীক্ষা দিলেন, তখন তার নাম্বার এসেছিল ৭৫%। যেটা ছিল অবিশ্বাস্য। এই নাম্বার দেখে তাকে এমফিল না করে সরাসরি পিএইচডি করতেই বলেছিলেন শিক্ষকরা। কিন্তু  পিএইচডি করতে গিয়ে অনুধাবন করেন মানুষ আসলে ডিগ্রির জন্যই গবেষণা, পিএইচডি এসবকিছু করে থাকে। কিন্তু তার তো ডিগ্রির দরকার নেই। তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনও দরকার নেই। তার শুধু ভিতরে খিদেটা মেটানো দরকার। আর এই খিদে হল দেশবাসীকে সঠিক ইতিহাস জানানোর খিদে।

তিনি বুঝেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া তাকে দিয়ে হবে না। তিনি ইতিহাস জানতে চান মানুষকে জানানোর জন্য। ডিগ্রির জন্য নয়। তাই পিএইচডি করা ছেড়ে দিলেন।

১৯৮৬ সালে জাতিসংঘে যোগ দেন। কাজ করতে গিয়ে বুঝলেন, এই ইতিহাসচর্চায় শান্তি নেই। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের এনএইচসিআরের চাকরিও ছেড়ে দিলেন। অনেক বেতন পেতেন তিনি সেখানে। কিন্তু  শান্তি পাননি। এরপর পূর্ণকালীন সাংবাদিক হলেন। আবার গ্রামে যাওয়া শুরু করলেন।

দুই বছর সাংবাদিকতা করার বদৌলতে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে তাকে, সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে। আর তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, একাত্তরের নারীদের ইতিহাস এবং তাদের অভিজ্ঞতা বাদ পড়ে গেছে আমাদের ইতিহাস থেকে।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই সাধারণ মানুষদের কথা কেউ জানতে পারবে না, যদি না আমরা নিজেরা তাদের সাক্ষাৎকার নিই।

যখন থেকে তিনি গ্রামের মানুষদের কথা শুনতে লাগলেন তখন থেকে তার জীবনে নতুন মোড় এল। ১৯৯৩ সালে বিবিসিতে কাজ শুরু করলেন। তখনই প্রথম সাধারণ মানুষের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করার সুযোগ পেলেন তিনি। 

বিবিসিতে কাজ করার সুবাদে তাকে গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করতে হত। একেবারে গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের কথা শুনেছেন, জানতে চেয়েছেন, তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের ভিতরের দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগের গল্পগুলো বের করে এনেছেন।

তিনি বলেন, "যারা নিজেদের কথা, অভিজ্ঞতা, ইতিহাস তুলে ধরছেন, তারা প্রত্যেকেই ক্ষমতাবান শ্রেণির। বড়লোক বা উচ্চবিত্তদের কথা বলছি না আমি। বলছি সেনাবাহিনী, আমলা, রাজনীতিবিদদের কথা। ইতিহাস নিয়ে পড়লে জানা যায়, যাদের কথা উঠে এসেছে তারা সবাই ওপরতলার মানুষ। আর এটাই আমাদের ক্ষমতাগত সমস্যা।" 

বিবিসির জন্য পাঁচ-ছয়টা রেডিও সিরিজ করেছিলেন যা তার জীবনের খুব বড় অর্জন ছিল। যেমন 'নারীর একাত্তর' সিরিজ। তাতে নারী বলতে শুধু বাংলাদেশের নারী বোঝানো হয়নি, বিহারি নারীদের ইতিহাসও উঠে এসেছে। তাদের কী অবস্থা ছিল একাত্তরে, তুলে ধরা হয়েছে। তার করা  'শিশুদের একাত্তর' সিরিজে শিশুরা কী ভেবেছে একাত্তরের দুঃসহ দিনগুলোতে তা নিয়ে বলা আছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও জীবিকা নিয়ে কাজ করতে করতে ২০০০ সালের দিকে 'বাংলাদেশ একাত্তর' প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। 

বিবিসিতে কাজ করতে গিয়ে তার ইচ্ছেগুলো একটু একটু করে পূরণ হতে লাগলো। এরপর ২০০২ সালে ব্র্যাকে চাকরি নিলেন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার আরও বড় দরজা  খুলে গেল। তাছাড়া ব্র্যাকে যে প্রকল্পের সঙ্গে ছিলেন তার কাজ ছিল গ্রামে। তথ্য সংগ্রহ করতে করতে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কাজ করার পর প্রকাশ হলো চার খণ্ডের বই 'বাংলাদেশ একাত্তর'।  

ব্র্যাক থেকে তিনি যত টাকা পেতেন, তার সব ঢেলে দিতেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষণায়। তিনটি জরিপও করেছিলেন গ্রামের ওপরে। 

এর মাঝে তিনি কানাডা যান ২০০৭ সালে। সেখান থেকে ২০১২ সালে ফেরত আসেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত নিজেকে বেঁধে রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার কাজে। অনেক দেশ, অনেক জায়গায় গেছেন, কিন্তু বারবার ফিরে এসেছেন এই একাত্তরের গ্রামে। 

২০১২-১৭ পর্যন্ত ১০-১৫ লক্ষ টাকা খরচ করে, বহু জায়গায় গিয়ে গিয়ে গবেষণার কাজ চালিয়েছেন তিনি। এমনকি বাবা-মায়ের দেয়া জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মটিও বিক্রি করে দেন তিনি এই গবেষণার জন্য।

তার মতো আত্মোৎসর্গ এখনকার গবেষকদের মাঝে কি দেখা যায়? আফসান চৌধুরী বলেন, 'যেভাবে মা তার কোলের বাচ্চাকে দু'হাত দিয়ে আগলে রাখে, বাংলাদেশকেও সেভাবে আগলে রেখেছে এই গ্রামের মানুষরা।'

প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেছেন। এ পথে তার যাত্রা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র প্রকল্পের হাত ধরেই। এরপর কাজ করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে। কখনো বই, কখনো সিনেমা, কখনো ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন। কিন্তু এই সবকিছুর একটাই উদ্দেশ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল অংশটিকে বাদ দিয়ে আমাদের দেশে  ইতিহাসচর্চা হয়ে আসছে, সেই বাদপড়া অংশটিই তুলে ধরা নতুন প্রজন্মের সামনে।

বিবিসিতে কাজ করার সময় একবার ভারতীয় জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা আফসান চৌধুরীকে বলেন, 'তোমার কী মনে হয় বাংলাদেশের গ্রামের সাধারণ মানুষ না চাইলে আমরা ঢুকতে পারতাম গ্রামগুলোতে?'

আরোরার এ প্রশ্নটি থেকে খুব ভালোভাবেই স্পষ্ট হয় মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রান্তিক মানুষদের অবদানের কথা। 

তার 'গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা' ভিডিওটি মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের মানুষকে নিয়ে করা প্রথম ভিডিও। শুধু এটিই নয়, তার বেশিরভাগ কাজ আমাদের দেশের ইতিহাসের জন্য প্রথম কাজ। এর কারণ, তিনি আমাদের শেকড়ে হাত দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাণকেন্দ্র যে গ্রামের মানুষ তাদেরকেই সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। যে কাজটি অন্যদের করতে দেখা যায়নি। করলেও তা খুব সীমিত।

এছাড়া ১৯৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধ নিয়ে তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর একটি হচ্ছে প্রামাণ্যচিত্র 'তাহাদের যুদ্ধ', যা 'বাংলাদেশ ১৯৭১' চার খণ্ডের মুক্তিযুদ্ধের আরেকটি অসামান্য দলিল। 

বিবিসি ছাড়াও তিনি একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরী করেছেন। 

গবেষণাধর্মী কাজের পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যেও রয়েছে আফসান চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য কাজ। 

উপন্যাস-'বিশ্বাসঘাতকগণ' 

গল্পগ্রন্থ -'আফসান চৌধুরীর গল্প'

কাব্যগ্রন্থ-'Conversations with suleman'.

বর্তমানে আফসান চৌধুরী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস পড়াচ্ছেন। পাশাপাশি কাজ করছেন 'গ্রামের একাত্তর ও প্রান্তিকগোষ্ঠীর একাত্তর' নিয়ে। 

মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস আমরা সবাই জানি, তা আসলে অসম্পূর্ণ এবং খণ্ডিত ইতিহাস। এই অন্ধকার থেকে আমাদের আলোতে নিয়ে আসতে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন আফসান চৌধুরীর মতো কয়েকজন দেশপ্রেমিক। তারা শুধু চান মানুষ সঠিক ইতিহাসকে জানুক, সত্যকে জানুক…  
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.