দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করছে যেসব প্রামাণ্যচিত্র
গত শতাব্দীর কোন ঘটনাটি মানবজাতির ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? এ প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ মানুষই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলবেন। পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করেছিল এ যুদ্ধ; পাল্টে দিয়েছিলো বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার খোলনলচে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় গোটা পৃথিবীর প্রায় দু'টি শিবিরে বিভক্ত থাকা, বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের উৎকণ্ঠা, বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং ঔপনিবেশিকতা মোচনের চেষ্টা কিংবা প্রযুক্তির উন্নতি ও উৎকর্ষ - উপযুক্ত সবগুলো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাকেই কম-বেশি প্রভাবিত করেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
যুদ্ধটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য বইপত্র, জার্নাল কিংবা সংবাদপত্রের পাশাপাশি সাহায্য করতে পারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তা হল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-সম্পর্কিত বিভিন্ন ডকুমেন্টারি। সেখানে দর্শক-শ্রোতারা প্রামাণ্য ঐতিহাসিক দলিল - আর্কাইভাল ফুটেজ থেকে স্বচক্ষেই যুদ্ধটির ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। যে-তথ্যচিত্রগুলো যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ কিংবা নির্দিষ্ট একটি সময়কালকে বিস্তারিতভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছে, এ লেখাটিতে তেমন কয়েকটি নিয়েই কথা বলা হবে।
শোয়াহ (১৯৮৫)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি পার্টি কর্তৃক ইহুদি নিধনযজ্ঞ যা হলোকাস্ট কিংবা হিব্রু ভাষায় 'শোয়াহ' বলে অভিহিত, তা-ই সাড়ে নয় ঘণ্টার এই ডকুমেন্টারির মুখ্য বিষয়। এর নির্মাণে জীবনের ১১টি বছর ব্যয় করেছিলেন ক্লদ লাঞ্জম্যান। কোনো ধরনের আর্কাইভাল ফুটেজ তিনি ব্যবহার করতে চাননি। বরং হলোকাস্টের শিকার এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের অবস্থা সরেজমিনে দেখে তাদের সাক্ষাৎকার তিনি নিজেই নিয়েছেন।
লাঞ্জম্যান তার সাক্ষাৎকারকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন – হলোকাস্ট সারভাইভার, প্রত্যক্ষদর্শী এবং দোষী। ফরাসি এ ডকুমেন্টারিতে পোল্যান্ডের চেমনো কনসেনট্রেশান ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফিরে আসা, অশউইটজ থেকে পালিয়ে আসা, ওয়ারস গেটো বিদ্রোহের প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা শুনতে পাওয়া যায়। ট্রেবলিঙ্কার গ্যাস চেম্বারের ভয়াবহতার বয়ান দিতে দেখা যায় একজন এসএস (শুটজটাফেল) অফিসারকে। সেখানে লাঞ্জম্যান সাহায্য নিয়েছেন গোপন ক্যামেরার। তিনি কথা বলেছেন সেসব মৃত্যুপুরী ক্যাম্পের আশেপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গেও। তারা কি জানতেন তাদের বাড়ির পাশে কী হচ্ছে? তাদের উত্তর শুনে বুঝতে বাকি থাকে না যে তারা জানতেন। কিন্তু তা ঠেকানোর কোনো উপায় তারা জানতেন না; নিজেদের মৃত্যুভয়ে তাই কোনোরকম প্রতিবাদ করেননি। প্রোপাগান্ডা কীভাবে নাৎসি পার্টির ইহুদি নিধনযজ্ঞ-পথকে সুগম করে দিয়েছে তারও একটি বিশ্লেষণ পাওয়া যায় আলোচ্য তথ্যচিত্রে।
দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাট ওয়ার (১৯৭৩)
ব্রিটিশ এ ডকুমেন্টারিটি মূলত ২৬ পর্ব-সম্বলিত ৩২ ঘণ্টার একটি টিভি সিরিজ। অনেকে একে সর্বকালের সেরা তথ্যচিত্র বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণি-পেশার নারী ও পুরুষের সাক্ষাৎকারে ঠাসা এটি। পুরো সিরিজটা জুড়েই সত্যিকারের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল চার বছর এবং ব্যয় হয়েছিল নয় লক্ষ ইউরো। '৭০-র দশকের টিভি সিরিজের ক্ষেত্রে যা অকল্পনীয় ছিল। প্রযোজক জেরেমি আইজ্যাকস ঘটনার উপস্থাপনকে যথাসম্ভব সত্যনিষ্ঠ রাখার চেষ্টা করেছেন।
সিরিজটিতে কথকের কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় ব্রিটিশ অভিনেতা ও পরিচালক লরেন্স অলিভিয়ের। ব্রিটিশ টেলিভিশনের ইতিহাসে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচিত হওয়া প্রামাণ্যচিত্রটি যুদ্ধের বিভিন্ন দিকের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। তবে ভয়াবহতা ও নির্মমতার শিকার ভুক্তভোগী নাগরিক, সৈনিক, নাবিকদের কথকতাকেই প্রাধান্য দিয়েছে এটি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহে আগ্রহী প্রত্যেকেরই এ ডকুমেন্টারিটি দেখা উচিত। যুদ্ধের সামগ্রিক ঘটনাবলির একটি বিস্তৃত মূল্যায়ন পাওয়া যায় এতে।
ট্রায়াম্ফ অভ দ্য উইল (১৯৩৫)
ঐতিহাসিকভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জার্মান এ ডকুমেন্টারিটি আদতে একটি প্রোপাগান্ডা চলচ্চিত্র। ১৯৩৪ সালের সেপ্টেম্বরের নাৎসি পার্টি কংগ্রেসের ন্যুরেমবার্গ র্যালির চিত্রই এতে তুলে ধরেছেন নির্মাতা লেনি রিফেনশটাল। সেসময়কার জার্মান জনসাধারণের কাছে নাৎসি পার্টির আবেদন ও শক্তিমত্তা কীরকম ছিল, তারই প্রকাশ ঘটেছে এখানে। নাৎসিদের সংস্কৃতি এবং তা কীভাবে জার্মানদের নিয়ন্ত্রণ করেছে, তার একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়। সর্বকালের অন্যতম সেরা এ তথ্যচিত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। তা হল: শিল্প কখনোই অরাজনৈতিক নয়; বরং তার সঙ্গে রাজনীতির প্রচ্ছন্ন কিংবা প্রকট সম্পর্ক থাকেই। আর শিল্পকে প্রায়ই অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই তথ্যচিত্র তারই একটি দৃষ্টান্ত।
শতশত জার্মানকে সেই র্যালিতে হিটলারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতে দেখা যায়। দৃঢ়ভাবে বিশেষ শারীরিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তারা হিটলার এবং নাৎসি পার্টির প্রতি ডান হাতের স্যালুট জানাচ্ছে। তবে রিফেনশটাল হিটলারকে 'মানবিক' করে দেখানোর কোনো প্রয়াস চালাননি। এমনকি মানবিক আবেদনের প্রতি তার কোনো বাড়তি আগ্রহও ছিল না।
অনেক শিল্পবোদ্ধা এই ডকুমেন্টারির বিতর্কিত প্রতিপাদ্যের জন্য একে চলচ্চিত্রের ইতিহাস থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দিতে চান। তবে অনন্য নির্মাণশৈলীর একটি ধারণা পাওয়ার জন্য হলেও ফিল্মটি দেখা উচিত। ফ্যাসিবাদ কীভাবে সেসময় জার্মানিকে গ্রাস করেছিল তার একটি ঝলকও দর্শক এখানে পাবেন।
দ্য লাস্ট ডে'জ (১৯৯৮)
জেমস মল নির্মিত প্রায় দেড় ঘণ্টার এ চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে পাঁচটি হাঙ্গেরীয় ইহুদি পরিবারের গল্প। এর নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ছিলেন আরেক খ্যাতনামা চলচ্চিত্রকার স্টিভেন স্পিলবার্গ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিনগুলোর ওপর গুরত্বারোপ করা হয়েছে এখানে। হিটলারের নাৎসি বাহিনী নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ১৯৪৪ এর শেষভাগে তাদের অবশিষ্ট শক্তির পুরোটা নিয়োজিত করেছিল হাঙ্গেরিকে ইহুদিমুক্ত করার জন্য। এই নির্মূল অভিযানে সোয়া চার লাখ ইহুদিকে হত্যা কিংবা গৃহহীন হতে হয়েছিল।
হলোকাস্টের সময়কার নাৎসি কনসেনট্রেশান ক্যাম্পের ভয়াবহতা উঠে এসেছে এখানে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে অশউইটজ বন্দিশিবিরের দিকে। পাঁচজন সারভাইভার যে শিবিরগুলোতে বন্দি ছিলেন, সেখানে ফিরে গিয়ে সেই নির্মমতার স্মৃতিচারণা করেছেন। নাৎসিদের সেই 'ফাইনাল সল্যুশন'-র ভয়াবহতা তারা প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু তাদের কাছে এর চেয়েও বড়ো হয়ে ধরা দিয়েছে জীবনস্পৃহা ও সুন্দর নতুন দিনের প্রতি আশাবাদ। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৭১তম আসরে শ্রেষ্ঠ ডকুমেন্টারি ফিচারে এটি অস্কার জিতে নিয়েছিল।
দ্য ওয়ার (২০০৭)
কেন বার্নস নির্মিত মার্কিন এ টিভি মিনি-সিরিজটি সাত পর্ব বিশিষ্ট। নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল গোটা ছয় বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মার্কিনিদের কীভাবে প্রভাবিত করেছে তা এখানে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ধরে দেখানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরের অনেক বাসিন্দার যুদ্ধের সেই চার বছরের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে পাওয়া যায়। কখনো এ বর্ণনা খুব স্পষ্ট, প্রামাণ্য; কখনো-বা নির্মম। ব্যক্তি ও তার বন্ধু-স্বজনের জীবনকে নাটকীয়ভাবে পালটে দিয়েছে যুদ্ধ।
অনেক প্রশংসা পেলেও, ডকুমেন্টারিতে ফোকাসটা পুরোপুরিভাবে রাখা হয়েছে মূলত মার্কিনিদের ওপর। যুদ্ধের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া কীরকম ছিল, তাদের চাওয়া-পাওয়া, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বোঝার জন্য এটি চমৎকার। কিন্তু ইস্টার্ন ফ্রন্টের দৃষ্টিভঙ্গি এতে উঠে আসেনি। তাই বলা চলে, চিত্রটা সম্পূর্ণ না।
ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু ইন এইচডি (২০০৯)
১০ পর্বের এই মিনি-সিরিজটি ২০০৯ এর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হিস্ট্রি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল। আগে কখনো দেখা যায়নি এমন সব ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছিল এতে। ফুটেজগুলো মূলত আর্কাইভ এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে নেওয়া; পরে সেগুলোকে রঙিন এবং উচ্চ মানের (হাই ডেফিনিশন - এইচডি) করার চেষ্টা করা হয়।
তৎকালের সৈনিক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিক - যুদ্ধের দমকা হাওয়া যাদের জীবনকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিল, তাদের যাপিত জীবনকেই কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছে ডকুসিরিজটি। বর্ণনার স্বার্থে কখনো তাদের দিনপঞ্জির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। চাক্ষুষ সেই অভিজ্ঞতার বয়ান তারা নিজেরাই দিয়েছেন।
অ্যাপোক্যালিপ্স: দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার (২০০৯)
যুদ্ধের সময় করেসপন্ডেন্ট, সৈনিক, রেজিস্টান্স ফাইটার ও সাধারণ নাগরিকের ধারণ করা বিভিন্ন সত্যিকার ফুটেজ দেখা যায় এখানে। ছয় পর্বের ফরাসি এ ডকুমেন্টারিতে সাদাকালো ফুটেজকে পুরোপুরিভাবে রঙিন করে দেখানো হলেও, হলোকাস্টের দৃশ্যগুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। মূলত তাৎপর্য বোঝাতেই সেগুলোকে সাদাকালো রাখার এই চেষ্টা।
নাৎসিদের উত্থান, পোল্যান্ড দখল, ব্যাটল অভ ডানকার্ক, অপারেশন বারবারোসা, পার্ল হারবার আক্রমণ ও হিরোশিমা-নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা হামলা-সহ বিবিধ বিষয়কে এখানে তুলে ধরা হয়েছে। ডকুসিরিজটিতে ফরাসি, ব্রিটিশ ও মার্কিন - তিনটি ভার্শনে তিন জন ভিন্ন কথককে পাওয়া যায়।
জার্মান কনসেনট্রেশান ক্যাম্পস ফ্যাকচুয়াল সার্ভে (১৯৪৫)
ব্রিটিশ সরকার নির্মিত ডকুমেন্টারি এটি। এতে তৎকালীন নব্য-উন্মুক্ত নাৎসি কনসেনট্রেশান ক্যাম্পগুলোর ভয়াবহ দৃশ্য উঠে এসেছে। এগুলো প্রধানত মিত্রবাহিনীর ধারণ করা ফুটেজ। এটি প্রযোজনা করেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি সিডনি বার্নস্টিন। তাকে কারিগরি সহায়তা দিয়েছিলেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার আলফ্রেড হিচকক।
৭৫ মিনিটের এ প্রামাণ্যচিত্রটিকে প্রায় সাত দশকের জন্য অসমাপ্ত রেখে একরকম পরিত্যক্ত-ই করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের দিকে এর পুনরুদ্ধার না করা হলে, হয়তো তা লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যেত। ব্রিটিশ সরকারের এ-কাজের পেছনে থাকা রাজনৈতিক কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
নাইট উইল ফল (২০১৪)
এর উপজীব্য মূলত ১৯৪৫ সালের পূর্ববর্তী ডকুমেন্টারিটি। পর্দার আড়ালে সেটির নির্মাণকাজ কীভাবে চলেছে তা-ই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। 'জার্মান কনসেনট্রেশান ক্যাম্পস ফ্যাকচুয়াল সার্ভে'-র ধারাভাষ্যে বলা হয়েছিল, 'এই ছবিগুলো যদি মানবজাতিকে কোনোরকম শিক্ষা না দিতে পারে, তাহলে তাদের ওপর আবারও আঁধার ঘনিয়ে আসবে (নাইট উইল ফল)'। মূলত এখান থেকেই ২০১৪ সালের তথ্যচিত্রটির এরূপ নামকরণ। ১৯৪৫ এর ফিল্মটির প্রায় ১২ মিনিটের ফুটেজ এখানে আবার দেখতে পাওয়া যায়।
নাইট অ্যান্ড ফগ (১৯৫৫)
প্রখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্রকার অ্যালা রেঁনে'র ৩২ মিনিটের এ প্রামাণ্যচিত্রের পটভূমি নাৎসি কনসেনট্রেশান ক্যাম্প - পোল্যান্ডের অশউইৎজ এবং মাইদানেক বন্দিশিবির। এটি নাৎসিদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ওপর নির্মিত একদম শুরুর দিককার চলচ্চিত্রিক দলিল। যুদ্ধ শেষ; ১০ বছর পর এই শিবিরগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু একসময় এখানে যে জেনোসাইড সংঘটিত হয়েছে, তারই চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি।
নাৎসিদের যারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবেন, তাদের সাজা হবে ভয়াবহ। শিবিরে নিয়ে রাতের আঁধারে কুয়াশায় তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। '৪১ এর শেষভাগে নাৎসি পার্টির হাইনরিখ হিমলার গৃহীত এ কৌশলটি থেকেই ডকুমেন্টারিটির নাম 'নাইট অ্যান্ড ফগ'। যুদ্ধের সময়কার সাদাকালো নিউজরিল স্টক ফুটেজের পরপরই তিনি দর্শক-শ্রোতাকে বর্তমানের (১৯৫৫) রঙিন কিন্তু শূন্য সেই পরিত্যক্ত শিবিরের চিত্র দেখান। এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন জ্যাঁ ক্যায়রোল। তিনি নিজেও মাউথাউজেন বন্দিশিবিরে আটক ছিলেন।
রেঁনে এমন একটি বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে ভবিষ্যতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা নিয়ে সেকালে অন্য অনেক ফিল্মমেকার কথা বলতে ভয় পেয়ে সামনে এগোননি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিশদ ঘটনাবলির ওপর প্রামাণ্যচিত্রের সম্ভারও বিশাল। সেখানে কিছু কিছু প্রামাণ্যচিত্র পক্ষপাতদোষে দুষ্ট, কখনো তারা অসম্পূর্ণ কিংবা কখনো কল্পনা-আশ্রয়ী। তাই যেসব ডকুমেন্টারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহকে সবচেয়ে সুষ্ঠু, স্পষ্ট এবং অনেকটা 'নির্মোহভাবে' ধারণ করেছে, সেগুলোকেই উপর্যুক্ত তালিকায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।