জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে প্রাণীদের আকার বদলে যাচ্ছে: গবেষণা

ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকটের কারণে প্রাণীরা প্রতিনিয়ত তাদের 'আকার পরিবর্তন' করছে, দাবি গবেষকদের।
বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধানে জেনেছেন, উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণীরা তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য (ফিজিওলজি) পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেবার চেষ্টা করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাদের চঞ্চু, পা এবং কান প্রসারিত হচ্ছে যা প্রাণীদের দেহের তাপমাত্রা আরও ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।
দেহ অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, পাখিরা তাদের ঠোঁট এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীরা কান ব্যবহার করে সে তাপ বিকিরণ করে বা ছড়িয়ে দেয়।
অতিরিক্ত তাপ থেকে মুক্তি পেতে ঐতিহাসিকভাবেও কিছু প্রাণীর উষ্ণ জলবায়ুতে বিবর্তনের নজির রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে এই পার্থক্যগুলো ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে।
যদি প্রাণীরা তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অতিরিক্ত গরমে তারা মারাও যেতে পারে।
পাখির চঞ্চুতে কোন পালক থাকেনা; স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রেও কান, লেজের অংশ এবং পায়ের দিকে অনেকের পশম দ্বারা আবৃত থাকে না। এগুলো সবই তাই তাপ বিনিময়ের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখে।
ট্রেন্ডস ইন ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয়েছে। এর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পাখিদের মধ্যে পার্থক্যগুলো বিশেষ প্রকট।
গবেষণার লেখক এবং ডেকিন ইউনিভার্সিটির পক্ষী গবেষক সারা রাইডিং বলেন, "আকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে এর অর্থ এই নয় যে, প্রাণীরা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে বরং ব্যাপারটি মোটেও স্বাভাবিক নয়"।

"এর মানে হলো এই যে, তারা বেঁচে থাকার জন্য এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিশ্চিত নই যে এই পরিবর্তনের অন্যান্য পরিবেশগত পরিণতি কী হবে, কিংবা সকল প্রজাতিই এভাবে অভিযোজিত হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে কি না"।
যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, প্রাণীদের এভাবে আকৃতি পরিবর্তনের পেছনে জলবায়ু সংকটকে একমাত্র কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা কঠিন; তবে বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে প্রজাতিগুলোর মধ্যে পর্যবেক্ষণে মোটামুটি একই ঘটনা দেখা গেছে।
উদাহরণ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান তোতা পাখির কথা বলা যায়। ১৮৭১ সালের পর থেকে এই প্রথম এদের বিভিন্ন প্রজাতির ঠোঁটের আকৃতি ৪-১০% বর্ধিত হয়েছে; আর এই পরিবর্তন প্রতি বছরের গ্রীষ্মের তাপমাত্রার সাথে সম্পর্কিত।
এছাড়াও বনইঁদুরের লেজের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, আরেক প্রজাতির ইঁদুরের লেজ এবং পায়ের আকার বেড়েছে; উষ্ণ আবহাওয়ায় বাদুড়ের ডানার আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন।

জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে এভাবে প্রাণীদের আকার পরিবর্তন অব্যাহত থাকতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও পরিবর্তনগুলো ছোট তবু রাইডিং এর মতে, যেভাবে আমাদের গ্রহটি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তাতে অচিরেই এসব পরিবর্তন আর নগণ্য হিসেবে থাকবে না।
তিনি বলেন, "এখন যেসব পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা সব মিলিয়ে ১০% এরও কম হবে। ফলে চট করে এসব পরিবর্তন চোখে পড়েনা। কিন্তু এভাবে যদি প্রাণীদের কান বড় হতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা বাস্তবেই হয়তো ডাম্বোকে (ওয়াল্ট ডিজনি প্রোডাকশনের একটি কাল্পনিক/এনিমেটেড চরিত্র) দেখতে পাব"।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কোন পাখিগুলোর আকারে পরিবর্তন এসেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য রাইডিং জাদুঘর থেকে গত ১০০ বছরের পাখির নমুনা সংগ্রহ করে তার থ্রিডি স্ক্যানিং করার পরামর্শ দিয়েছেন।
"যখনই মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কোন আলোচনা উত্থাপন করা হয়, মানুষ জানতে চায়, 'মানুষের পক্ষে কি এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব' অথবা 'কোন প্রযুক্তি এটি সমাধান করতে পারে?' কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে, মানুষের মতোই প্রাণীদেরও এসব পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে হয়। আর পূর্বের যেকোন বিবর্তনের চাইতে এবার পরিবর্তন বা অভিযোজন ঘটছে দ্রুত"।
রাইডিং বলেন, "আমরা যে জলবায়ুগত সংকট তৈরি করেছি তা তাদের উপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করছে এবং কিছু প্রজাতি এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও, অন্যরা তাতে সক্ষম হবেনা"।
তাছাড়া এসব পরিবর্তন অন্য কোন উপায়ে প্রাণীদেরকে প্রভাবিত করবে কিনা তাও এখনো স্পষ্ট নয় -যেমন, বড় চঞ্চু পাখিদের খাওয়ার উপর প্রভাব ফেলতে পারে; বিজ্ঞানীরা তাই ভবিষ্যতে এসব নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন।