বাংলার কর বাংলার খান্দান
'রায়ত' পত্রিকা শতবর্ষ আগে নিজস্ব গবেষণা ও সরকারি গবেষণায় প্রান্ত আবওয়াবের দুটি তালিকা প্রকাশ করে। প্রথম তালিকাটি 'রায়ত' একজন বিখ্যাত জমিদারের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে বলে উল্লেখ করেছে। একুশ ফর্দ আবওয়াব (রায়তের ভাষায় 'আবুয়াব') কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি রায়তের অনেকাংশে মেনে নেওয়া জমিদারের চাঁদাবাজি। প্রথানুযায়ী আমরা একে করই বলছি। সব করই কর্মচারীর মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়ে থাকে, তাদের উত্তরসূরীরাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ট্যাক্স ক্যাডারের সদস্য হয়ে থাকেন, কর কমিশনার হন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মেম্বার হন। কর দিতে অসম্মতির ঘটনা নিত্যই ঘটত, এজন্য লাঠিয়াল মজুত থাকত। অস্থাবর সম্পদসহ গরুছাগল এবং রায়তের তরুণী স্ত্রীকে ধরে নিয়ে আসত।
ফর্দ ১: বিবাহ মাঢ়চা
রায়তের পুত্রকন্যার বিয়েতে জমিদারকে প্রদেয় কর।
ফর্দ ২: খুটা গাড়ী
নৌপথে যাতায়তের সময় নৌকা যে নদীতে বা জলাশয়ে নোঙর করা হয় বা লগি গাড়া হয়, সেই এলাকার জমিদারকে প্রদেয় কর।
র্ফদ ৩: করালী
নৌকা থেকে মালামাল উঠাতে নামাতে জমিদার এই কর আদায় করে থাকেন।
ফর্দ ৪: বাজার তোলা
হাট বাজারের দিন দোকানদারদের নিকট থেকে জমিদার যে কর আদায় করে থাকেন।
ফর্দ ৫: ইক্ষুগাছ
আখ থেকে গুড় প্রস্তুত করার সময় জমিদার যে কর আদায় করে থাকেন।
ফর্দ ৬: ধুলট
গরু বা মহিষের গাড়ি মালামাল নিয়ে জমিদারের আওতাধীন ধূলির রাস্তা দিয়ে চলাচল করার জন্য প্রয়েদ কর।
ফর্দ ৭: ভাগাড় জমা
যখন কোনো রায়ত তার মৃত জন্তু ভাগাড়ে নিক্ষেপ করে তখন জমিদার এই কর আদায় করে থাকেন।
ফর্দ ৮: জালিয়া জমা
জমিদারিতে বসবাস করছে এমন জেলেদের কাছ থেকে যে কর আদায় করা হয়।
ফর্দ ৯: শাসন জমা
জমিদারের বরকন্দাজ গ্রামে পাঠানো হলে তার ব্যয় নির্বাহ করতে জমিদার যে কর ধার্য করে থাকেন।
ফর্দ ১০: গরেদ সেলামি
জমিদারকে ঋণমুক্ত করতে রায়তের উপর যে কর ধার্য করে আদায় করা হয়।
ফর্দ ১১: চৌথা
কোনো গাছ বিক্রি হলে রায়তের যে অর্থ প্রাপ হয় তার এক চতুর্থাংশ অবশ্যই জমিদারকে প্রদেয়। এর নামই চৌথা।
ফর্দ ১২: ইট গাড়া
বাড়ি করার জন্য রায়ত যদি ইট ব্যবহার করে তখন জমিদারকে প্রদেয় যে কর, তার নাম ইট গাড়া।
ফর্দ ১৩: খরচা জমিদার
যখন নিজের কাচারিতে আসেন তখনকার খরচ নির্বাহের জন্য রায়ত যে কর দিয়ে থাকেন।
ফর্দ ১৪: বাট্টা
কাচারিতে খাজনা দেবার সময় নির্ধরিত করের অধিক কর আদায় করা হয়ে থাকে।
ফর্দ ১৫: সাদা জালালী
জমিদারির সেরেস্তোয় কালি কলম কাগজের ব্যয় উত্তোলনের নামে যা রায়তের নিকট থেকে আদায় করা হয়।
ফর্দ ১৬: গ্রাম খরচা
কোথায় কোনো উপদ্রব দেখা দিলে তার সমাধান করার জন্য যে কর আদায় করা হয়।
ফর্দ ১৭: আগমনী
জমিদার যখন নিজ জমিদারিতে সফরে আসেন এবং অবস্থান করেন তখন সন্তুষ্ট হয়ে রায়তদের আগমনী কর দিতে হয়।
ফর্দ ১৮: নজর
জমিদার যখন নিজ জমিদারিতে আসেন, তাকে সন্তুষ্ট করতে যে নজরানা রায়ত দিয়ে থাকে তার নামই নজর।
ফর্দ ১৯: পার্ব্বনী
পূজা উৎসবের সময় রায়তের কাছ থেকে আদায় করা করই পার্ব্বনী।
ফর্দ ২০: হিসাবানা
রায়তের হিসেব বুঝেশুনে সাব্যস্ত করার জন্য হিসাবানা আদায় করা হয়।
ফর্দ ২১: ভিক্ষা
জমিদারের বাড়িতে শ্রাদ্ধ, বিয়ে পূজাপার্বণের খরচ মেটাতে এবং জমিদারের কোনো দায় থাকলে তাকে দায়মুক্ত করতে রায়তদের সাধ্যমতো ভিক্ষা প্রদান করতে হয়।
বছরের শুরুটা মানে বৈশাখটা রায়তের খুব খারাপ যায়, এত কিছুর পরও বৈশাখের নামেও কিছু আদায় করা হয়।
বাঙালির অ্যারিস্টোক্রেসি: পুরোনো খান্দান
১৮৩১ সালে সরকারি তত্ত্ববাধানে বাঙালি সম্ভ্রান্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল তাতে মুসলমান কেউ অন্তর্ভুক্ত হননি, সম্ভবত ছিলেনও না। সুরেন্দ্রনাথ সেন মহাফেজখানা ঘেঁটে বেঙ্গল অ্যারিস্টোক্রেসির তালিকা ও বিবরণ প্রস্তুত করেছেন। সেই তালিকা থেকে কিছু নাম :
১. মহারাজা দুর্লভরামের বোনের বংশধর। বাবু জগন্নাথপ্রসাদ বা তার ভাইয়েরা অভিজাত হিসেবে সমাদৃত। জগন্নাথপ্রসাদ মুর্শিদাবাদবাসী আর তার ভাই কাশীনাথপ্রসাদ কলিকাতা শহওে বাস করেন।
২.লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান রাজা নবকৃষ্ণের পুত্র মহারাজা রাজকৃষ্ণ রাহাদুর একজন বিশিষ্ট অভিজাত। মীর জাফরের সহায়কদের অন্যতম একজন নবকৃষ্ণ। তিনি অঢেল অর্থের মালিক হয়েছিলেন।
৩. বাবু গোপীমোহন দেব একই সাথে রাজা নবকৃষ্ণের ভাস্তে এবং দত্তক পুত্র। সন্তান পেতে বিলম্ব হওয়ায় রাজা তাকে দত্তক গ্রহণ করেন এবং সম্পত্তির অর্ধাংশ প্রদান করেন।
৪. রবার্ট ক্লাইভ এবং বাংলার অন্যান্য গভর্নরদের ব্যাংকার লক্ষীকান্ত ধর অঢেল অর্থ উপার্জন করেন। তার দৌহিত্র সুখময় বিচারপতি এলাইজা ইম্পের দেওয়ানি করে ভূ-সম্পত্তি বৃদ্ধি করেন। তার পুত্র রাজা রামচন্দ্র রায়, তার ভাই কৃষ্ণচন্দ্র রায়, বৈদ্যনাথ রায়, শিবচন্দ্র রায় এবং নরসিংহ রায় সকলেই স্বীকৃত অভিজাত।
৫. নিমাইচন্দ্র মল্লিক সম্পত্তি নিয়ে মামলায় ছয় লক্ষ টাকা খরচ করে এবং বিলেতের আপিল আদালত পর্যন্ত মামলা ঠেলে দিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। তার জীবিত ৬ পুত্রই অভিজাত: রাজাগোপাল, রামরতন, রামতনু, রামকানাই, রামমোহন এবং হীরা লাল।
৬. ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলের কাউন্সিল বোর্ড অব রেভেনিউর দেওয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিংহের দৌহিত্র কৃষ্ণসিংহ লালবাবুর মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র শ্রীনারায়ন সিংহ ও অভিজাত হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়েছন।
৭. গভর্নর ভ্যান্সিটার্ট এবং সেনাপ্রধান জেনারেল স্মিথের দেওয়ান রামচরন রায়ের বংশধর চব্বিশ পরগনার রাজনারায়ন রায়, তারকানাথ রায় এবং তাদের বংশধর অভিজাত তালিকাভুক্ত।
৮. ভেরেনস্ট সাহেবের দেওয়ান হিসেবে গোকুলচন্দ্র ঘোষাল সন্দ্বীপের জমিদারি লাভ করেছিলেন। তিনি কুষ্ঠরোগীদের আশ্রম নির্মাণের জন্য ভূমি ও অর্থ দান করে খ্যাতি লাভ করেন। তার বংশধর কালীশঙ্কর ঘোষাল স্বীকৃত অভিজাত।
৯. সূর্যকুমার ঠাকুর, চন্দ্রকুমার ঠাকুর কালীকুমার ঠাকুর, নন্দকুমার ঠাকুর, হরকুমার ঠাকুরের প্রসন্ন কুমার ঠাকুর কলিকাতার অভিজাত। তাদের পূর্বপুরুষ দর্প নারায়ন ঠাকুর হুইলার সাহেবের দেওয়ানি করার সময় প্রভূত বিত্তশালী হয়ে উঠেন।
১০. বড় বাজারে শেঠ ব্যবসায়ী ও ব্যাংকার গৌরচরন শেঠ, ব্রজমোহন শেঠ, কৃষ্ণমোহন শেঠ, রাজকুমার শেঠ অভিজাত দলভুক্ত।
১১. সরকারের খাজাঞ্চি রাধাকৃষ্ণ বসাক শ্রফ বংশের সন্তান এবং শেঠ বংশের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কে আবদ্ধ। তিনি ধনী অভিজাতদের অন্যতম।
১২. রামদুলাল দে কলিকাতার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিনি ভূ-সম্পত্তির মাধ্যমে ধন অর্জন করেননি, তিনি প্রকৃত ব্যবসায়ী। তিনি ফেয়ারলি কোম্পানির দেওয়ান ছিলেন, নিজে আমেরিকার ব্যবসায়ীদের সাথে কারবার করতেন।
১৩. চট্টগ্রাম ও নোয়াখালি অঞ্চলের লবনের এজেন্ট হ্যারিস সাহেবের দেওয়ান রামহরি বিশ্বাস বিস্তর ভূ-সম্পত্তির মালিক হন। তার পুত্র প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস ও জগমোহন বিশ্বাস অভিজাত গোত্রভুক্ত।
১৪. শান্তিরাম সিংহ পাটনার কোম্পানি চিফ মিডলটন এবং স্যার টমাস রামবোল্ডের দেওয়ান ছিলেন। তার পুত্র প্রাণকৃষ্ণ ছিলেন ট্রেজারির পাঞ্জাবি। তার তিন পুত্র রাজকৃষ্ণ সিংহ, বিকৃষ্ণ সিংহ এবং শ্রীকৃষ্ণ হিংস তালিকাভুক্ত অভিজাত।
১৫. গোবিন্দ রাম কলিকাতা জমিদারির দেওয়ানি করা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে ব্যবসা করে বিত্তশালী হন। তার ছয় দৌহিত্র অভিজাত তালিকাভুক্ত ভগবতীচরণ মিত্র, ভবানীচরণ মিত্র এবং আরো চারজন।
১৬. ভূ-সম্পত্তি দিয়ে নয়, ঠিকাদারির লাভের অর্থে সমৃদ্ধি লাভ করে বাগবাজারে বিশাল ভবন নির্মাণ করে গোকুলচন্দ্র বিখ্যাত হয়েছিলেন। তার দৌহিত্র নবকৃষ্ণ মিত্র, হরলাল মিত্র, হরিণচন্দ্র মিত্র প্রমুখ অভিজাত গোত্রভুক্ত হয়েছেন।
১৭, কেবল ব্যবসা করেই পামার কোম্পানির খাজাঞ্চি গঙ্গানারায়ন সরকার এক প্রজন্মেই অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং অভিজাত তালিকাভুক্ত হয়ে উঠেছেন গঙ্গানারায়ন সরকার।
১৮. একদা দরিদ্র কৃষ্ণচন্দ্র পালচৌধুরী জীবন সংগ্রাম করে লবণের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হন। আর চারপুত্র ঈষানচন্দ্র মৃত, প্রেমচন্দ্র, রতনচন্দ্র, এবং উমেশচন্দ্র অভিজাত দলভুক্ত হয়েছেন।
১৯. মথুরামোহন শরফ ব্যাংক ব্যবসায়ে প্রচুর লাভবান হন এবং জোড়াবাগানে প্রাসাদোপম বাড়ি নির্মাণ করেন। তার পুত্র রাজনারায়ন সেন, রূপনারায়ন সেন এবং অপর তিন পুত্র অভিজাত চিহ্নিত হয়েছেন।
২০. রামসুন্দর কানুরজি বৈবাহিক সূত্রে প্রচুর সম্পদের মালিক হন এবং আফিমের এজেন্সি তাকে আরো ধনী করে। তার পুত্র ফকিরচাঁদ কানুরজিও সম্পদ বৃদ্ধি করেন। ফকিরচাদের পুত্র রাধামাধব কানুরাজি এবং গৌরীচরন কানুরাজি অভিজাত দলভুক্ত। (তালিকাটি অসম্পুর্ণ)
রাজার চাচা কার প্রাণ বাঁচাবেন
পঞ্চম জর্জের চাচা ভারত সফরে এসেছিলেন। তার পেছনে খরচ হয়েছে পঁয়তাল্লিশ লাখ টাকা। কিন্তু ভারত পেয়েছে কী? প্রশ্ন রেখেছে 'চারু মিহির'। শতবর্ষ আক্ষরিক অর্থে শতবর্ষ নয়, একশ বছরের বেশিও আছে, দু-এক বছর কমও আছে—এমন কিছু সংবাদ থেকে সমাজচিত্র তুলে আনা হয়েছে, অর্থনৈতিক চিত্রও আছে তাতে।
১৩২৭-এর 'চারু মিহির'-এ প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে উদ্ধৃত :
ডিউকের ভ্রমণ ব্যয়: রাজ পিতৃব্য (পঞ্চম জর্জের চাচা) ডিউক অব কনট আর্থার উইলিয়াম প্যাট্রিক আলবার্ট ভারত ভ্রমণে এসেছিলেন। তাঁর জন্য ভারত সরকার নিজ তহবিল হতে কত খরচ করেছে সে প্রশ্নের জবাবে রাজস্ব সচিব মিস্টার হেলি একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন :
১. যে সকল অফিসার ডিউকের সঙ্গে থাকিয়া খাতিরদারি করিয়াছেন তাহাদের ও ডিউক মহোদয়ের ভ্রমণের জন্য বাজে ব্যয় ৪,১৫,৬৪০ টাকা অর্থাৎ প্রায় সোয়া চার লক্ষ টাকা।
২. দিল্লিতে থাকা ও খাওয়ার খরচ ৫,৮২,৬৩১ অর্থাৎ প্রায় ছয় লক্ষ টাকা।
৩. উৎসবাদি বাবদ ৭,৩৫,৫০০ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা।
৪. সংবাদ আদান-প্রদান বাবদ ২,৬৬,০০০ অর্থাৎ প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
৫. দরবারাদি বাবদ ৫,৪৩,০০০ অর্থাৎ প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা।
৬. স্বাস্থ্যবিষয়ক বন্দোবস্তের জন্য ১,৪০,০০০ অর্থাৎ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।
৭. জল বিশুদ্ধকরণ ও অন্যবিধ যন্ত্রাদি স্থাপনের ব্যয় ১,৯০,০০০ অর্থাৎ প্রায় দুই লক্ষ টাকা।
৮. বাসস্থানের ব্যয় ৩,০০,০০০ অর্থাৎ প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
৯. বিবিধ ১,৪৯,০০০ অর্থাৎ দেড় লক্ষ টাকা।
সর্বমোট পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, 'এত টাকা ব্যয় করিয়া ভারত কি পাইয়াছে?'
শতবর্ষ পরে এসব প্রশ্ন আর কে করবেন? রাজ-পরিবারের অসন্তোষ কার কাম্য?
বাংলার 'সব পোষা গরু'
ঠিক দু'শ বারো বছর আগে ১৮১২ সালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম; তিনি দীর্ঘায়ু হননি, ৪৭ বছর ১৮৫৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। রঙ্গ-রসিকতার জন্য খ্যাত হলেও তাঁর কবিতার সে সময়ের বাঙালি জীবনের যন্ত্রণাগুলোকে যথাযথাভাবে ধারণ করেছে। ঔপনিবেশিক শোষণের যন্ত্রণা, দারিদ্র, নীলকরদের অত্যাচার উঠে এসেছে তার কবিতায়। মহারানী ভিক্টোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কবি বলছেন:
কোথা রৈলে মা বিক্টোরিয়া মা গো মা,
কাতরে কর করুণা
মা তোমার ভারতবর্ষে সুখ আর নাহি স্পর্শে
প্রজারা নহে হর্ষে, সবাই বিমর্ষে।
বাঙ্গালী তোমার কেনা একথা জানে কে না
হয়েছি চিরকেলে দাস
কবি, শুভ অভিলাষ।
তুমি মা কল্পতরু আমরা সব পোষা গরু
শিখিনি শিং বাঁকানো
কেবল খাবো খোল বিচিলি ঘাস।
কাঙ্গালী বাঙ্গালী যত চিরদিন অনুগত,
জানি নে মন্দ আচরণ, পূজি তোমার শ্রীচরণ।
রোজ অষ্টপ্রহর কষ্ট ভুগে ভাতে পোড়া জোড়া সবে
তার তেল জোড়ে তো নুন জোটে না
কেঁদে মরি হাহারবে।
ঈশ্বরগুপ্ত-প্রভাবিত কবি মনোমোহন বসু (১৮৩১-১৯১২) লিখেছেন : 'কোথায় মা ভিক্টোরিয়া দেখ আসিয়া/ ইন্ডিয়া তোর চলছে কেমন।'
১. এখন এই পোড়া দেশে কপাল দোষে
হয়েছে সব উল্টো ঘটল—
ছারপোকার বিয়েন মতন নিত্যি নুতন
আইনে দেশ হয় জ্বালাতন।
২. দুঃখীলোক নীল দাদনে জোর বাঁধনে
ঘোর রোদনে কাটছে জীবন।
খাটছে মা চা-র বাগানে আকুল প্রাণে
কুলিগণে দাশের মতন।